ঈদকে সামনে রেখে গণপরিবহন চালুর কথা সরকার ভাবছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এ ছাড়া আন্দোলন, বিক্ষোভে না গিয়ে পরিবহনমালিক–শ্রমিকদের ধৈর্য ধরারও আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। আজ সকালে তাঁর সরকারি বাসভবনে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন সরকারের এই মন্ত্রী।
গণপরিবহন চালুর দাবিতে রোববার সারা দেশে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে তাঁরা গণপরিবহন চালানোর কথা বলছেন। একই কথা বলেছেন পরিবহনমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিও। গতকাল সংগঠন দুটির দেওয়া ঘোষণার পরই গণপরিবহন চালুর বিষয়ে সরকারের ভাবনার কথা জানালেন ওবায়দুল কাদের।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ৫ এপ্রিল লকডাউন শুরুর পরপরই বন্ধ হয়েছিল গণপরিবহন। সেই লকডাউন কয়েক দফায় এক সপ্তাহ করে বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ বর্ধিত লকডাউন ৫ মে পর্যন্ত।
এদিকে ঈদ ও রমজানের কথা বিবেচনা করে এবং দোকানপাট ও শপিং মলে যাঁরা কাজ করেন, তাদের কথা চিন্তা করে সরকার ইতিমধ্যে লকডাউন শিথিল করেছে বলেও জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
আজ পয়লা মে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস বা মে দিবস। এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, শ্রমিকদের লড়াই, সংহতি, দৃঢ়তা ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিজয় দিবসই মে দিবস।
ওবায়দুল কাদের জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে বাংলাদেশ ১৯৭২ সালের ২২ জুন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। একই দিনে বাংলাদেশ আইএলওর ২৯টি কনভেনশন অনুসমর্থন করে, যা ছিল একটি বিরল ঘটনা।
শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু সরকার প্রথম শ্রমনীতি ঘোষণা করে, যেখানে মালিক–শ্রমিক সম্পর্ক উন্নয়ন, শিল্পের শান্তি ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ সুরক্ষা এবং কল্যাণের প্রতি জোর দেওয়া হয় বলে জানান মন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ শিশুশ্রম নিষিদ্ধ ও শ্রম আইন বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে পোশাকশ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি এবং কৃষিশ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করার ব্যবস্থা করেছে বলেও দাবি করেন ওবায়দুল কাদের।
ঈদের আগে কলকারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনুরোধ করেন মন্ত্রী।
গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৪৩৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকায় শনাক্ত হয়েছে ৩৯৩ জন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে করোনা শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৫৫ হাজার ৪২৭ জনে।
তবে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যাননি। ফলে মৃতের সংখ্যা ২৯ হাজার ১৩১ জনই রয়েছে।
শুক্রবার (১৭ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের ল্যাবরেটরিতে ৬ হাজার ৯০১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
এদিকে, একদিনে করোনা থেকে সেরে উঠেছেন ৯৩ জন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৫ হাজার ৭১১ জন।
দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম তিনজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
ঢাকায় দন্তচিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুল হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মো. রিপন (৩০) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এই তথ্য জানিয়েছে।
গতকাল বুধবার বিকেলে ঝালকাঠি জেলার নলছিটিতে অভিযান চালিয়ে রিপনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে ডিবি।
গত ২৭ মার্চ ভোরে রাজধানীর মিরপুরের কাজীপাড়ায় ছিনতাইকারীদের হাতে সংঘটিত এই হত্যার ঘটনায় এ নিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
ডিবির মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মানস কুমার পোদ্দার আজ বৃহস্পতিবার সকালে গণমাধ্যমকে বলেন, এই হত্যার ঘটনায় আগে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জবানবন্দিতে রিপনের নাম আসে। এই তথ্যের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বুলবুল হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন রিপন। তিনি ছিনতাইকারী দলটির নেতা।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, বুলবুলকে হত্যার পর রিপন নলছিটিতে পালিয়ে ছিলেন। তাঁর বাড়ি ওই এলাকায়।
মানস কুমার বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে রিপন জানিয়েছেন, বুলবুলের সঙ্গে থাকা টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নিতে তাঁরা পাঁচজন মিলে তাঁকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন। বুলবুলের সঙ্গে ১২ হাজার টাকা ছিল।
বুলবুল হত্যায় আগে গ্রেপ্তার চারজন হলেন আরিয়ান ওরফে হাফিজুল ওরফে হৃদয় (৩৯), সোলায়মান (২৩), রায়হান ওরফে আপন ওরফে সোহেল (২৭) ও রাসেল হোসেন হাওলাদার (২৫)।
হৃদয় ও সোলায়মান ইতিমধ্যে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি অনুযায়ী, তাঁরা পাঁচজন গত ২৬ মার্চ দিবাগত রাত ২টা থেকে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ঘোরাঘুরি করছিলেন। বুলবুল যখন রিকশায় করে পশ্চিম কাজীপাড়ার নাভানা ফার্নিচারের সামনে আসেন, তখন তাঁরা তাঁর গতিরোধ করেন। এ সময় দলনেতা রিপনসহ অন্যরা বুলবুলের কাছে যা আছে, তা দিয়ে দিতে বলেন। বুলবুল দিতে রাজি না হলে তাঁদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার সময় বাধা দিলে বুলবুলকে ছুরিকাঘাত করেন রিপন।
ডিবি পুলিশের এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর জখম অবস্থায় বুলবুল রাস্তায় পড়ে থাকেন। স্থানীয় লোকজনসহ বিহঙ্গ পরিবহনের বাসচালক আশিফ ও চালকের সহকারী সাগর মিলে বুলবুলকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। পরে তাঁকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
বুলবুল হত্যার ঘটনায় তাঁর স্ত্রী শাম্মী আক্তার বাদী হয়ে মিরপুর থানায় একটি মামলা করেন। এই মামলায় গত ৩০ মার্চ চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। পরদিন আদালত তাঁদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ সহ রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। এর মধ্য দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার কাজ শুরু হলো।
রোববার (১২ জুন) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক আসাদ মো. আসিফুজ্জামানের আদালত আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে এ অভিযোগ গঠন করেন। হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকার পরও করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসার জন্য চুক্তি করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদক এই মামলা করে।
অভিযোগপত্রে উল্লেখিত অন্য আসামিরা হলেন- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক আমিনুল হাসান, উপ-পরিচালক (হাসপাতাল-১) ডা. ইউনুস আলী, সহকারী পরিচালক (হাসপাতাল-১) ডা. শফিউর রহমান এবং গবেষণা কর্মকর্তা ডা. দিদারুল ইসলাম।
এর আগে গত ৬ জুন এ মামলার অভিযোগ গঠন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এদিন আসামিপক্ষে এ মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন করেন। অন্যদিকে দুদক অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশের জন্য ১২ জুন দিন ধার্য করেন।
২০২১ সাকের ৩০ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর গত ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালত এ অভিযোগপত্র আমলে গ্রহণ করেন। এছাড়া মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এ বদলির আদেশ দেন।
২০২০ সালের ২৩ বছরের সেপ্টেম্বর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী এই মামলাটি দায়ের করেন। হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকার পরও করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসার জন্য চুক্তি করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এই মামলা করা হয়। সেখানে আবুল কালাম আজাদকে আসামি করা হয়নি। তবে তদন্তে নাম আসায় অভিযোগপত্রে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০২০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালত মামলার এজাহার গ্রহণ করেন। এসময় দুদকের উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারীকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।
মামলার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে লাইসেন্স নবায়ন না করা রিজেন্ট হাসপাতালকে ডেডিকেটেড কভিড হাসপাতালে রূপান্তর, সমঝোতা স্মারক চুক্তি সম্পাদন ও সরকারি প্রতিষ্ঠান নিপসমের ল্যাবে ৩ হাজার ৯৩৯ জন কভিড রোগীর নমুনা বিনামূল্যে পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করেছেন। ওই হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষার জন্য রোগী প্রতি ৩ হাজার ৫০০ টাকা করে মোট ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখার চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও অন্য কর্মকর্তাদের মাসিক খাবার খরচ হিসেবে ১ কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার টাকার চাহিদা তুলে ধরাসহ এর খসড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের ডেন্টাল ইউনিটের বেশির ভাগ যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এ ছাড়া এখানে রয়েছে জনবল–সংকট। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এতে দাঁতের সমস্যা নিয়ে আসা রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তাঁরা পাচ্ছেন না যথাযথ চিকিৎসাসেবা।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর ডেন্টাল সার্জন মোছা. ফরিদা ইয়াসমিন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে ডেন্টাল ইউনিটের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও অটোক্লেভ মেশিনের জন্য আবেদন করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, হাসপাতালের ডেন্টাল ইউনিটের যন্ত্রপাতি অনেক দিন ধরে নষ্ট। এতে সাধারণ রোগীদের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালের ডেন্টাল ইউনিটের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ অটোক্লেভ মেশিন দরকার। পরে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান গত ৬ জানুয়ারি ডেন্টাল ইউনিটের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের চিফ টেকনিক্যাল ম্যানেজার (উপসচিব) এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বরাবর চিঠি দেন।
ওই চিঠি সূত্রে জানা গেছে, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন দেড় থেকে ২ হাজার রোগী বহির্বিভাগে আসেন। এর মধ্যে ডেন্টাল বিভাগে প্রচুর রোগী আসেন। কিন্তু হাসপাতালের ডেন্টাল ইউনিটের যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
হাসপাতালের ডেন্টাল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিমিউ অ্যান্ড টিসি বিভাগের সিনিয়র টেকনিশিয়ান (যান্ত্রিক) মো. হাফিজুর রহমান হাসপাতালে আসেন। তিনি ডেন্টাল ইউনিটের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। ওই সময় তিনি দেখতে পান, ডেন্টাল কক্ষের এয়ার কমপ্রেসর পাওয়ার কাজ করে না, মোটরটি পুড়ে গেছে, প্রেসার কন্ট্রোল সুইচ ও পাওয়ার সার্কিট নষ্ট।
গত মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার ডেন্টাল কক্ষে সরেজমিনে দেখা গেছে, রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার ডেন্টাল চেয়ার, বাতি (লাইট) ও কমপ্রেসর অকেজো হয়ে গেছে। সেখানে পানির সংযোগও নেই। সকাল সাড়ে আটটা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত ডেন্টাল সার্জন মোছা. ফরিদা ইয়াছমিন ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. নাজিম উদ্দিন মিলে ৯৭ জন রোগী দেখেছেন। এর আগের দিন সোমবার তাঁরা দুজন মিলে ১২৫ জন রোগী দেখেছেন। তবে এখানে দাঁতের সমস্যা নিয়ে আসা রোগীদের জন্য এক্স-রে করার যন্ত্র নেই।
এদিকে হাসপাতালে ডেন্টাল সার্জনের পদ রয়েছে একটি। আর মেডিকেল টেকনোলজিস্টের দুটি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন একজন। ফলে এখানে প্রয়োজনীয় জনবলের সংকট আছে।
ডেন্টাল ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে আসা রোগীদের রুট ক্যানেল, দাঁত ফিলিং ও দাঁত তোলা হয়। সপ্তাহে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার শুধু শিশু ও বয়স্ক রোগীদের দাঁত তোলা হয়। রুট ক্যানেল ও দাঁতের ফিলিং করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টার মধ্যে দাঁতের সব ধরনের সমস্যা নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে আসেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ঘাটতিসহ জনবল–সংকটে রোগীরা যথাযথ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
জেলা শহরের কাজীপাড়া এলাকার ফারুক মিয়া বলেন, ‘প্রচণ্ড দাঁতের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে যাই। চিকিৎসক এক্স-রে করাতে বলেছেন। কিন্তু জেলার এত বড় হাসপাতালে দাঁতের এক্স-রে করার যন্ত্র নেই। এ ছাড়া ডেন্টাল ইউনিটের চেয়ার নষ্ট, বাতি কাজ করে না। নেই চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও। তাই বাধ্য হয়ে বেসরকারি ডেন্টাল ক্লিনিকে গিয়ে দাঁত ফেলেছি।’
ডেন্টাল সার্জন ফরিদা ইয়াছমিন বলেন, ‘প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকায় ডেন্টাল ইউনিটটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। নেই তেমন জনবল। শুধু শিশু ও বয়স্কদের দাঁত তোলার পাশাপাশি অন্য রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকি। ডেন্টাল ইউনিটের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার লিখেছি।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, ডেন্টাল ইউনিটের বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে।
খুলনার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে খুলনায় ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ এগিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য রূপসা সেতুর বাইপাস সড়ক ও লবণচরা থানার পাশে ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। ফিজিবিলিটি স্ট্যাডির কাজ শেষ পর্যায়ে। প্রথম পর্যায়ে কলেজে ১২০টি আসন এবং ৫০০ শয্যা করার প্রস্তাবনা দেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণের ব্যাপারে ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি সম্মতি দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সরেজমিনে দেখে নগরী সংলগ্ন লবণচরা থানার পাশে জায়গা নির্ধারণ করা হয়। ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর ২০ একর জমি চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠায় খুলনা জেলা প্রশাসন। জমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬৮ কোটি টাকা।
পরবর্তীকালে ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ‘খুলনা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা’ কার্যক্রম শুরু হয়। ২৯ নভেম্বর নিয়োগ করা হয় প্রকল্প পরিচালক। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (বিআইএম)’ পরিচালিত সমীক্ষা কার্যক্রম বা ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সম্পন্ন হয়েছে ডিজিটাল সার্ভের কাজও।
খুলনা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক ডা. মোশাররফ হোসেন খন্দকার জানান, সমীক্ষা কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর জমি অধিগ্রহণ চূড়ান্ত করা হবে। পাশাপাশি প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে একনেকে। একনেকে অনুমোদন পাওয়ার পর দরপত্র আহ্বান করা হবে। এরপর ঠিকাদার নিযুক্ত করা হলে তারা অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু করবে। অবকাঠামো নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করবে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এই কলেজ হাসপাতালটি বিশ্ব মানের একটি প্রতিষ্ঠান হবে বলেও জানাচ্ছেন তিনি।
প্রকল্প পরিচালক জানান, কলেজে মোট ১২০টি আসন এবং হাসপাতালে ৫০০ শয্যা চালু করার জন্য তারা প্রস্তাবনা তৈরি করেছেন। একাডেমিক ভবনে মোট ২৮টি বিভাগ থাকবে। প্রশাসনিক ভবন হবে আট তলা। প্র্যাকটিক্যাল কক্ষ, বিভিন্ন ধরনের ল্যাব, বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক বিভাগ ও ৪০০ আসনের একটি লাইব্রেরি নির্মাণ করা হবে। থাকবে অডিটোরিয়াম, লেকচার গ্যালারি, শ্রেণিকক্ষ, টিউটোরিয়াল কক্ষ, ছাত্রছাত্রীদের জন্য পৃথক কমন রুম, ক্যাফেটেরিয়া প্রভৃতি। কলেজে মর্গ ও মরচুয়ারি এবং ডিএনএ টেস্টের আধুনিক ল্যাব থাকবে। এর পাশাপাশি অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, হোস্টেলসুপার ও হাসপাতাল পরিচালকের আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে।
তিনি জানান, হাসপাতালে ৫০০ শয্যার পাশাপাশি অপারেশন থিয়েটার, জরুরি বিভাগ, আউটটোর, ফার্মেসি প্রভৃতি থাকবে। নির্মাণ করা হবে হাসপাতাল ভবন, প্রশাসনিক ভবন। বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন, হেলিপ্যাড, মসজিদ, পুকুর, মাঠ ও জিমনেসিয়াম তৈরি করা হবে।
সোমবার দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউজে ‘খুলনা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা’ শীর্ষক প্রকল্পের মতামত জরিপ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতামত জরিপ ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনার শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুর রহমান।
সভাপতিত্ব করেন খুলনার জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার। বক্তৃতা করেন খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. দ্বীন উল ইসলাম, উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ, খুলনা ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অসিম কুমার সাহা, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেন্টাল বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহীদুজ্জামান বাবলু, খুলনা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মামুন রেজা প্রমুখ।
সভায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা পুলিশ, পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, বিআইএম, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় খুলনা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। সভায় যাতে দ্রুত কলেজ ও হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা যায়, সেজন্য গুরুত্বারোপ করা হয়। সভায় জানানো হয়, প্রস্তাবিত ডেন্টাল কলেজের জায়গার পাশেই শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
সভায় জেলা প্রশাসক জানান, দ্রুত জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করার জন্য জেলা প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করবে।