করোনাভাইরাসের থাবায় যখন সবাই দিশেহারা হয়ে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতদের দিকে চেয়ে আছে, ঠিক সেই সময়ে চট্টগ্রামের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউএসটিসির অধীন বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল থেকে ১৯ জন নার্স এবং ১১ জন ক্লিনার ও ৪ জন আয়াকে আকস্মিক চাকরিচ্যূত করেছে কর্তৃপক্ষ। চাকরিচ্যূতির কোন ব্যাখ্যা না দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে ‘কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে’।
চাকুরিচ্যুত করার প্রতিবাদে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ইউএসটিসি)’ প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা। রোববার (২৬ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালের সামনে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা।
জানা গেছে, গত ৮ এপ্রিল ১৯ জন নার্স এবং ১৫ জন আয়া ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে নোটিশ বোর্ডে বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রতিষ্ঠানটি। নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে প্রথমে বেতন ভাতাও আটকে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরে অবশ্য বেতন পরিশোধ করা হলেও চাকুরিচ্যুত করার নির্দেশনা জারি রাখা হয়।
ইউএসটিসি কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সোলায়মান চট্টগ্রামের একটি গণমাধ্যমে বলেন, ইউএসটিসিতে কোন শৃঙ্খলা নেই। এখানে দুই বার দুইজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডিরেক্টর হিসেবে এসেছিলেন। মালিকপক্ষের এসব অনিয়মের কারণে উনারা চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। এরপর থেকে মালিকপক্ষ তাদের পোষা লোকজনকে চেয়ারে বসায়, যাদের কোন ব্যক্তিত্ব নেই। মালিকের কথায় উঠবে, বসবে। এখন তারা অভিজ্ঞ নার্স, আয়া, স্টাফদেরকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বিদায় করার নোটিশ দিয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অজুহাতে অনেককে চাকরিচ্যূত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ৮ এপ্রিল চাকরিচ্যূতির নোটিশে আমরা অবাক হয়েছি। নোটিশে কোন কারণ উল্লেখ করা হয়নি। এভাবে কাউকে চাকরিচ্যূত করা যায় না। চাকরিচ্যূতদের অনেকেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আমরা এর প্রতিবাদে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, নগর পুলিশের কমিশনার, জেলা প্রশাসক, খুলশী থানাসহ, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েছি। করোনা পস্থিতিতে আমরা এই মুহুর্তে আন্দোলনে যেতে না পারলেও আমরা সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে অগ্রসর হবো।
চাকরিচ্যূত নার্স হামিদা আক্তার বলেন, ‘আমরা ডিপ্লোমাধারী না হলেও আমাদের দিয়েই ইউএসটিসি সৃষ্টি। সরকারতো ডিপ্লোমা ছাড়া নার্স নিয়োগ দিতে নিষেধ করেছে। আমাদেরকে তো চাকরি থেকে বাদ দিতে বলেনি।’
চাকরিচ্যূতির শিকার আরেক নার্স রেহানা আক্তার বলেন, ‘আমার চাকরির বয়স ১৯ বছর। আমি বাইরে ডিপ্লোমা করেছি। নার্সিং কাউন্সিলের নাম্বার ছিল না। কিন্তু যে প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা করেছি তাদের নাম্বার ছিল। সেটা ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেনি।’
এদিকে হাসপাতালের পরিচালক ডা. কামরুল হাসান গণমাধ্যমকে জানান, আমাদের মোট ৭৮ জন নার্স কর্মরত আছেন। যাদের বিদায়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী তাদের যোগ্যতায় ঘাটতি আছে। আগ থেকেই এদের নিয়োগ নিয়ে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আপত্তি ছিল। গত ডিসেম্বর থেকে তাদের বিদায় দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিপরীতে ডিপ্লোমাধারী ২২ জন নার্স আমরা নিয়োগও দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, নার্স-আয়া-স্টাফ মিলে যে ৩৪ জনকে বিদায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে তাদের যাবতীয় পাওনা দিয়ে আমরা বিদায় দিচ্ছি। তাদের যে এসোসিয়েশনগুলো আছে ওগুলোর সাথে আমরা আগে বসেছি, তাদের সাথে বসেছি যে তারা কোন শর্তে যে চায়। সে সব শর্ত মেনেই তাদের আমরা বিদায় দিচ্ছি। তারা যাবতীয় পাওনা নিয়েই যাবেন। আর একমাস সময় আমরা হাতে রেখেছি। এই এক মাসের বেতনও তারা পাচ্ছেন।
জানা গেছে, ইউএসটিসির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. ইফতেখার ইসলাম প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলামের ছেলে। তার স্ত্রী ডা. সাবা কাশ্মীরের নাগরিক। ৬ মাস আগে একই প্রতিষ্ঠান থেকে এমবিবিএস পাস করে তিনিও ডিরেক্টর হিসেবে হাসপাতালে জয়েন করেছেন। এই আদেশের বিষয়ে অনেকে আঙ্গুল তুলছেন ডাঃ সাবা’uর দিকে। কিন্তু আরেক চিকিৎসক ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, এসব সিদ্ধান্ত চেয়ারম্যান, নার্সিং ইন্সটিটিউটসহ অন্য অথরিটির সম্মতিতে গ্রহণ করা হয়। একজনের ওপর চাপানোর কোন সুযোগ নেই।
এ ব্যাপারে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মিনহাজুর রহমান বলেন, কোন কারণ দর্শানো নোটিশ এবং যৌক্তিক কারণ ছাড়া কথায় কথায় চিকিৎসক, নার্স স্টাফ চাকরিচ্যূত করা ইউএসটিসির জন্মগত স্বভাব। করোনা সংকটে তারা অসচ্ছল স্টাফদের চাকরিচ্যূত করাটা অন্যায়। আমরা এই আদেশ প্রত্যাহার চাই।
বিষয়টিকে মানবাধিকারের লঙ্ঘন দাবি করে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ডেপুটি গভর্নর আমিনুল হক বাবু বলেন, করোনা সংকটে পুরো জাতি যখন একে অপরের পাশে দাঁড়াচ্ছে, সেখানে ইউএসটিসি তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ নার্স, স্টাফ ছাঁটাই করছে— এটা অমানবিক, মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধও। কর্তৃপক্ষ চাকরিচ্যূতির এই আদেশ প্রত্যাহার না করলে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়াবে।
করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখীতে দেশে বিভিন্ন ধরনের লকডাউন আসতে পারে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘আজই হয়তো এর ডিক্লিয়ারেশন আসতে পারে।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘বিভিন্ন টাইপের লকডাউন আসবে।’
সেটা কেমন হবে জানতে চাইলে বলেন, ‘চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দারবানে যাওয়া আসা বন্ধ হবে। বিয়ের অনুষ্ঠান, পিকনিক, ওয়াজ মাহফিল বন্ধ করার নির্দেশনা আসতে পারে। যেখানে জনসমাগম হয় সেসব জায়গায় রেস্ট্রিকশন আসতে পারে-এভাবেই বিভিন্ন ধরনের রেস্ট্রিকশন আসবে। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রাণলয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে এ বিষয়ের প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে ২২ দফার যে প্রোপোজাল গেছে, সেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব রয়েছে। তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী দেখে যেটা ভালো মনে করবেন সে অনুযায়ী নির্দেশনা জারি করবেন। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের লকডাউন থাকবে।’
প্রস্তাবানার মধ্যে আছে:
১. সব ধরনের (সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয়/অন্যান্য) জনসমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। কমিউনিটি সেন্টার/কনভেনশন সেন্টারে বিয়ে/জন্মদিন/সভা/সেমিনার ইত্যাদি অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা।
২. বাড়িতে বিয়ে/জন্মদিন ইত্যাদি অনুষ্ঠানে জনসমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।
৩. মসজিদসহ সব উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ন্যূনতম উপস্থিতি নিশ্চিত করা (ওয়াক্তিয়া নামাজে ৫-এর অধিক নয় এবং জুমার নামাজে ১০-এর অধিক নয়)।
৪. পর্যটন/বিনোদন কেন্দ্র/সিনেমা হল/থিয়েটার ও সব ধরনের মেলা বন্ধ রাখা।
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ‘বিটকরোনা’ নামের করোনা শনাক্তকারী কৃত্তিম বৃদ্ধিমত্তা টুল তৈরি করেছে দেশি সফটওয়্যার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইজেনারেশন । তাদের দাবি, করোনাবট এবং এক্স-রে ইমেজ অ্যানালাইসিস টুল উন্নত উপায়ে ও দ্রুতগতিতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কি না, তা নিজে থেকে শনাক্ত করার জন্য ব্যবহার করা যাবে।
ইজেনারেশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্যবহারকারী নিজেই কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত কি না, সেই সিদ্ধান্ত যাতে নিতে পারেন, এ জন্য ইজেনারেশন করোনাবটকে সেলফ-টেস্টিং টুলস হিসেবে তৈরি করেছে। এটি ব্যবহারকারীকে নিজে থেকেই তাৎক্ষণিকভাবে আইসোলেশনে থাকতে উৎসাহ দেয়।
এটি স্বাস্থ্যকর্মীদের সময় বাঁচাতে পারে। ব্যবহারকারীদের প্রশ্ন বুঝতে পারা এবং সেটির যথাযথ উত্তর দেয়ার জন্য করোনাবটটিতে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করা হয়েছে। বটটি ইংরেজি, বাংলা এবং বাংলা ভাষাকে ইংরেজি অক্ষরে লেখা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।
এর পাশাপাশি ইজেনারেশন মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির মাধ্যমে এক্স-রে ছবি বিশ্লেষণী টুল তৈরি করেছে যা বুকের এক্স-রে ছবি দেখে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণে কার্যকর হতে পারে। এই টুল ব্যবহার করে ব্যবহারকারীরা সুস্থ আছেন কিনা, মৃদু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত কিনা অথবা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন কিনা সেটি জানা যাবে। ইজেনারেশন বিটকরোনা (http://beatcorona.egeneration.co/) ওয়েবসাইটে গিয়ে এক্স-রে ছবি আপলোড করলে টুলটি ফলাফল দেখাবে
ইজেনারেশন গ্রুপের চেয়ারম্যান শামীম আহসান বলেন, ‘ইজেনারেশন বিগত দুই বছর ধরে স্বাস্থ্যসেবা সফটওয়্যার ও অ্যানালিটিক্স নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করে আসছে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির যে সক্ষমতা আমাদের তৈরি হয়েছে, সেটি ব্যবহার করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের এই সল্যুশনগুলি আমরা স্বল্প সময়ে তৈরি করতে পেরেছি।’
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে এক নারীসহ আরও দুইজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তারা হলেন, উপজেলার ভাওড়া ইউনিয়নের কামাড়পাড়া গ্রামের ৫৫ বছরের এক নারী ও জামুর্কী ইউনিয়নের পাকুল্যা গ্রামের ৩০ বছরের এক যুবক।
আক্রান্ত ওই নারী ঢাকায় বোনের বাসায় এবং যুবক ঢাকায় জুয়েলারি দোকানে থাকতেন। ২৬ এপ্রিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যকর্মীরা ৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠান। এরমধ্যে তাদের ওই দুইজনের করোনা পজিটিভ ও চারজনের নেগেটিভ আসে বলে স্বাস্থ্যকর্মী এজাজুল হক হাসান রাত সাড়ে এগারোটায় জানিয়েছেন।
এর আগে ৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের পলি ক্লিনিকের সিনিয়র ওটি বয় অখিল চন্দ্র সরকারের করোনা পজিটিভ হলে ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়ে ২৪ এপ্রিল বাড়ি আসেন।
এ পর্যন্ত মির্জাপুরে বিভিন্ন এলাকা থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা ১৫২ জনের নমুনা সংগ্রহ করেন। এরমধ্যে ১৪৯ জনের করোনা নেগেটিভ ও ৩ জনের পজিটিভ আসে।
উপজেলা প্রশাসন রাতেই তাদের ঢাকায় কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো এবং আশপাশের অর্ধশত বাড়ি লকডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
চিকিৎসক-নার্সসহ ৬৬০ জন স্বাস্থ্যকর্মী মরণব্যাধী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, যা দেশের মোট আক্রান্তের ১১ ভাগ। আজ সোমবার (২৭ এপ্রিল) চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।
সংগঠনটির মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বৈশ্বিক করোনা মহামারীতে বাংলাদেশও গভীর সংকটের সম্মুখীন। আজ সোমবার পর্যন্ত দেশের করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৯১৩ জন এবং মারা গেছেন ১৫২ জন।
এতে আরও বলা হয়েছে, করোনা যুদ্ধের সম্মুখ সারির যোদ্ধা চিকিৎসক, নার্স ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ সেবাদানকারীগণ আশঙ্কাজনকভাবে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এ পর্যন্ত ২৯৫ জন চিকিৎসক, ১১৬ জন নার্স ও ২৪৯ জন অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীসহ চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬০, যা দেশের মোট আক্রান্তের ১১ ভাগ।
চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবাদানকারী ব্যক্তিগণ এই হারে আক্রান্ত হতে থাকলে আগামীতে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।
তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারের প্রতি নিম্নলিখিত প্রস্তাবনাসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানায় বিএমএ। এগুলো হলো:
১. দ্রুততম সময়ের মধ্যে কোভিড হাসপাতালে নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্সসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য সঠিক মানের পিপিই, এন-৯৫ বা এর সমমানের মাস্ক প্রদান করা জরুরি। ২. নন-কোভিড হাসপাতালের প্রবেশদ্বারে ট্রায়াজ সিস্টেম চালু করে সেখানে কর্মরত সকল চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপযুক্ত পিপিই, এন-৯৫ বা সমমানের মাস্ক প্রদান নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। ৩. সকল সরকারি বেসরকারি হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসন, প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ ও হাসপাতালে যাতায়াতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।
দেশে মহামাহারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে ১৫২ জনের মৃত্যু হলো। আক্রান্ত হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৪৯৭ জন। ফলে দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে পাঁচ হাজার ৯১৩।
সোমবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় চার হাজার ১৯২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে তিন হাজার ৮১২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সব মিলিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫০ হাজার ৪০১টি। নতুন যে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে তার মধ্যে আরও ৪৯৭ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ফলে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৯১৩ জনে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন আরও সাতজন, এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫২ জনে। এছাড়া সুস্থ হয়েছেন আরও নয়জন। ফলে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৩১ জন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকার এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয় বুলেটিনে।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন গোটা বিশ্বে তাণ্ডব চালাচ্ছে। চীন পরিস্থিতি অনেকটাই সামাল দিয়ে উঠলেও এখন মারাত্মকভাবে ভুগছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে দুই লাখ সাত হাজার। তবে পৌনে নয় লাখের বেশি রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর প্রথম দিকে কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর মিললেও এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুও।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। নিয়েছে আরও নানা পদক্ষেপ। এসব পদক্ষেপের মূলে রয়েছে মানুষে মানুষে সামাজিক দূরত্ব বজায়, বিশেষত ঘরে রাখা। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনী, র্যাব ও পুলিশের টহল জোরদার করেও মানুষকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না বিধায় করোনাভাইরাসের বিস্তার উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।