ডাঃ সাজিদ হাসান
ব্যথা অর্থাৎ পেইন এমন একটা জিনিস যেটা আমাদের ডাক্তাদের জন্য ব্লেসিং। কথাটা কেমন জানি শোনালো তাই না! চলেন ব্যাখ্যা করি।
একটি পেসেন্ট এসেছে দাঁত এবং মাড়ির ব্যথা নিয়ে। আমি আমার প্রাকটিসিং লাইফে সবসময় সময় নিয়ে রোগী দেখি যার কারণে আমি বেশি রোগী দেখতে পারিনা। তো যাই হোক রোগী ১০ বছর যাবত এ রোগ নিয়ে ভুগছে।
চেম্বারে এসে রোগী বলা শুরু করলো “স্যার আমি ১০ বছর ধরে মাড়ির ব্যথায় ভুগছি। যখন ব্যাথা উঠলে পাগল হয়ে যাই। একটার পর একটা ডাক্তান দেখিয়েছি কিন্তু লাভ হয় না। এই ব্যথার জন্য মাড়ির ৩।টা দাঁত ফেলে দিয়েছি। তাও ব্যথা কমে না। ঢাকায় যেয়েও দেখিয়েছি কিন্তু লাভ হচ্ছে না।”
এমতাবস্থায় আমি চুপচাপ পেসেন্ট এর কথা শুনছি আর তার চেহারার দিকে তাকিয়ে আছি। এই ক’বছরের অভিজ্ঞতায় আল্লাহর রহমতে রোগীর চেহারা এবং ব্যথার জন্য মুখের এক্সপ্রেশনে ওটি টেবিলে ওঠানোর আগেই প্রভিশনাল একটা ডায়াগনোসিস করে ফেলতে পারি।
তো যাই হোক জিজ্ঞেস করলাম ব্যথা টা কেমন হয় বাবা..!! আর কখন কখন হয়..!!
(বলে রাখি আমি আমার রোগীদের সবসময় বাবা,মা কিংবা এ জাতীয় বিশেষণ দিয়ে রোগীকে সম্মোধন করি..)
এবার পেসেন্ট বলা শুরু করলো স্যার প্রতিদিনই ব্যথা হয়। এর আগে একজন ডাক্তার মাড়ির ইনফেকশনের কারণে ওষুধ দিয়েছিলো তাতে করে একটু ভালো ছিলাম। ওই ক’দিন। তারপর আবার যা তাই।
পেসেন্ট এর আগে যে ডাক্তারদের দেখিয়েছে তাদের প্রেসক্রিপশন গুলো দেখলাম,বিভিন্ন টেস্ট করেছে সেগুলা দেখলাম,পেসেন্ট ওপিজি (ডেন্টাল এক্স-রে) করেও নিয়ে এসেছে। সেটা হাতে নিয়ে দেখার আগে ব্যথার ন্যাচার তথা কেমন হয় আর কতক্ষণ ব্যথা থাকে সেটাও জিজ্ঞেস করে নিলাম।
পেসেন্ট উত্তর দিলো “স্যার ব্যথা টা চিড়বিড় করে ওঠে,আর অনেক ব্যথা আর এ প্রতিদিনই হয়,শুধু একপাশেই হয়। বলতে বলতে পেসেন্ট তার বাম গালে মুখে হাত দিয়ে বসলো…”
আমার বুঝতে বাকি রইলো না পেইন এ্যাটাক করেছে।।তার ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন, তার ব্যথার তীব্রতা এবং সময় আমাকে অলরেডি পথ দেখিয়ে দিয়েছে…
ওপিজি দেখলাম। আগের সব প্রেসক্রিপশন চেক করলাম এরপর পেসেন্ট কে ওটি টেবিলে শুইতে বললাম।
মনে মনে একটা সুন্দর ডায়াগনোসিস ভেসে উঠছে..এই তো এটাই তো হওয়া উচিত। এই ভাবতে ভাবতে গ্লবস পরলাম,হেড ক্যাপ পরলাম, মুখে মাস্ক পরলাম পেসেন্ট এর ওরাল এক্সামিনেশনও ডান।
এবার পেসেন্ট কে সামনে বসিয়ে বলা শুরু করলাম। বাবা ব্যথা টা যখন হয় কারেন্ট শক হওয়ার মত হয় তাই না! বললো হ্যাঁ..
বাবা ব্যথাটা সবসময় তো থাকে না তাই না..!!
বললো না..
বাবা ব্যথাটা অল্প সময় থাকে তাই না..!! বললো জ্বী স্যার ১/২ মিনিট…
বাবা ব্যথা টা মুখের ঠিক এই জায়গা (ট্রিগারড একটা পয়েন্ট) থেকে শুরু হয় তাই না..!!
বললো হ্যাঁ স্যার…
ডায়গনোসিসের দরজা খুলে গেছে আমার। আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না দিস ইজ এ কমপ্লিট কেইস অফ “ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া”..
পেসেন্ট কে এবার প্রথম থেকে কাউন্সেলিং শুরু করলাম। সে যত ডাক্তারদের কাছে গেছে তার ভিতর একজন কোয়াক ও ছিলো। সেটা দিয়েই শুরু করলাম। এরপর একে একে তাকে সব বুঝিয়ে দিলাম…ওষুধ প্রেসক্রাইব করছি আর আমার সার্জারীর শ্রদ্ধেয় প্রফেসর কবির স্যারকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। কারণ?
কারণ স্যার আমার খাতার উপর বড় করে লিখিয়েছিলেন “সাজিদ তুমি লিখো। এই কথাটা সবসময় লিখে রাখবে তোমার কাছে।” জিগ্যেস করেছিলাম কি কথা স্যার..!!
স্যার বলেছিলেন “লিসেন টু ইউর পেসেন্ট। ইউর পেসেন্ট উইল টেল ইউ দ্যা ডায়াগনোসিস।”
এর সাথে আমি আরও একটা কথা এড করে নিতাম সেটা হলো “ডায়াগনোসিস ইজ দ্যা কি ফ্যাক্টর অফ ইউর ট্রিটমেন্ট। ইফ ইউ ক্যান ডু ডায়াগনোসিস দেন ইউ ক্যান হ্যান্ডেল এনি কেসেস”।
ঠিক এই জন্যই পোস্টের শুরুতে বলেছিলাম ” পেইন হলো ব্লেসিং”। কারণ পেইন এর ন্যাচার এবং পেইন এর ইন ডিটেইলস তোমাকে ডায়াগনোসিস এর পথে এগিয়ে নিতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করবে…
আলহামদুলিল্লাহ। প্রাকটিসিং জীবনে এই ছোট্ট ছোট্ট ভালোলাগা কিংবা নিজের কনফিডেন্স টা বুস্ট আপ হওয়াটা অনেক সুখের।
আমার জুনিয়র দের সবসময় আমি বলি “ইউ ডোন্ট নিড টু বি পারফেক্ট যাস্ট বি অনেস্ট ইন ইউর ওয়ার্ক। এন্ড অলওয়েজ রিমেম্বার তুমি ঠিক সে ধরণেরই ডাঃ হও যে ধরণের ডাঃ তুমি পেসেন্ট হইলে আশা করতে”।
শেষমেশ ধন্যবাদ উপরওয়ালা কে। ডেন্টিস্ট্রির মত ভ্যাস্ট এবং বিউটিফুল একটা প্রফেশনে আমাকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য…. 💞