বৈশ্বিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের হিসাব অনুযায়ী, আজ (০৩.০৪.২০২০) বাংলাদেশ সময় রাত ১ টা পর্যন্ত বিশ্বের ২০০ টির ও বেশি দেশ ও অঞ্চল কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছে। এএফপি ও বিবিসি এর সূত্র অনুযায়ী, বৈশ্বিক মৃত্যুর হার ৫ শতাংশ।
পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা-ঃ •৫১ হাজার ৫৬৩জন, •২০০টির ও বেশি দেশে আক্রান্ত ১০০৪৫৩৩ জন (জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটি) • সুস্থ হয়েছে ২ লক্ষ ১০ হাজার ৫১৯ জন। এর মধ্যে ইউরোপের (ইতালি ১১৫২৪২) পর বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রে। (আক্রান্ত ২৩৬২২১ ও ৫৭২১ মৃত) ও যুক্তরাজ্যে।
• ভারতে পালিত হচ্ছে লক ডাউন। ১০০ কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশটিতে আজ পর্যন্ত কভিড-১৯- এ আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩৪১ জনে ও মৃত-৬৮ জন,সুস্থ্য ১৭৭ জন।
করোনা ও হোম কোয়ারেন্টাইন তথা সামাজিক বিচ্ছিন্নতায় আমাদের কি করনীয় তা নিয়েই আজকের আলোচনা
১. বাড়িতে (হোম) কোয়ারান্টাইনে থাকার অর্থ কী?
এর অর্থ হলো কোনও সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবের সময়ে অন্যদের থেকে আলাদা থাকা। আইসোলেশনের সময়ে অসুস্থ মানুষদের সুস্থদের থেকে আলাদা রাখা হয় এবং যাদের সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে তাঁদের পৃথক করা এবং দেখা তারা অসুস্থ হচ্ছেন কিনা।
২. বাড়িতে কোয়ারান্টাইনে কিভাবে থাকবেন?
বাড়িতে কোয়ারান্টাইন থাকার অর্থ হল কোনও ব্যক্তিকে নিজের বাড়ির খোলামেলা একটি ঘরে বন্ধ রাখা, তাঁর জন্য পৃথক শৌচাগার থাকলে ভাল হয়। যদি পরিবারের অন্য কাউকে সে ঘরে থাকতেই হয়, তাহলে দুজনের মধ্যে অন্তত ১ মিটারের দূরত্ব রাখতেই হবে।
কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে বাড়তি ঝুঁকির কথা মনে রাখতে হবে। বয়স্ক মানুষ, গর্ভবতী মহিলা, শিশু এবং বাড়ির মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা আছে এমন কারও কাছ থেকে দুরে থাকতেই হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে শিশুদের সংক্রমণের হার অন্যদের চেয়ে কম।
চীনে ২০ বছরের নিচে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ২ শতাংশেরও কম। তবে, এই ভাইরাস যেহেতু অজানা, সে কারণে সরকার বাড়িতে কোয়ারান্টাইনে থাকার নির্দেশিকায় শিশুদের থেকেও দূরত্ব বজায় রাখবার কথা বলেছে। সমস্ত সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া ১৪-২৭ দিনের জন্য বন্ধ রাখতে হবে। কোয়ারান্টাইনে থাকা ব্যক্তি ডিশ, জলের গ্লাস, কাপ, তোয়ালে, বিছানা বাড়ির অন্য কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না এবং সর্বদা মাস্ক পরে থাকবেন।
রোগীর সেবাযত্নকারী এবং নিকটজন, সকলেই সাধারণ ব্লিচ সলিউশন (৫%) বা সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট সলিউশন (১%) দিয়ে জীবাণুমুক্ত করবেন এবং তারপর অনেকটা গভীরে পুঁতে দিয়ে বা জ্বালিয়ে দিয়ে সেগুলো নষ্ট করে দেবেন।
৪. রোগ ছড়ানো নিয়ন্ত্রণ করতে এটি কি পরিচিত পদ্ধতি?
কোভিড ১৯ সনাক্তকরণ এবং নজরদারির কাজে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি এটি।
”সাবান-পানিই কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ আটকানোর মোক্ষম অস্ত্র-এটাই মূল কথা। যদি কোনো ব্যক্তি ১৪ দিনের কোয়ারান্টাইনে থাকার সময় রোগের সংস্পর্শে না এসে কাটানোর পর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা শুরু করেন এবং আবারো একবার COVID-19 রোগীর সংস্পর্শে আসেন, তাহলে তাঁকে পুনরায় ১৪ দিনের জন্য বাড়িতে কোয়ারান্টাইনে থাকতে হবে।
৫. কাদের বাড়িতে কোয়ারান্টাইনে রাখা প্রয়োজন?
COVID-19 রোগে আক্রান্ত বা সংক্রমণের সম্ভাবনা যুক্ত কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন, এমন প্রত্যেককে বাড়িতে কোয়ারান্টাইনে থাকা উচিত। কারণ এরোগ যে অতি সংক্রামক শুধু তাই নয়,তার আরও একটা কারণ হল এই ভাইরাসের ইনকিউবেশনের সময়কাল ১৪ দিন-২৭ দিন। এই ১৪ দিনের মধ্যে কোনও ব্যক্তির কোনও রোগলক্ষণ না দেখা দিলেও তিনি ভাইরাস ছড়াতে পারেন।
৬. COVID-19-এর রোগীদের সঙ্গে সংস্পর্শ বলতে কি বুঝায়?
★COVID-2019 আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির সঙ্গে একই বাড়িতে বসবাস।
★COVID-2019 আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সংস্পর্শ বা তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র প্রয়োজনীয় সুরক্ষা না নিয়েই তা ব্যাবহার।
★বদ্ধ পরিবেশে যে ব্যক্তি COVID-19 সংক্রমিত, সে যদি অন্য কোনো ব্যক্তির মুখোমুখি সংস্পর্শে এসে থাকেন এবং উভয়ের মধ্যে দূরত্ব ১ মিটারের কম ছিল। বিমানযাত্রাও এর অন্তর্ভুক্ত ।
৭. হোম কোয়ারান্টাইনে থাকার সময়ে পরিবারের লোকজনকে কী ধরনের নিয়ম মেনে চলতে হবে?
★প্রথমতঃ পরিবারের নির্দিষ্ট একজনই মাস্ক ও গ্লাভস পরিহিত অবস্থায় রোগীর সেবা করবে। সমস্ত রকম শারীরিক সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে, বিছানাপত্রও আলাদা হওয়া উচিত। কেউ দেখতে আসা চলবে না।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, “কোনও ব্যক্তি কোয়ারান্টাইনে থাকবার সময়ে যদি তাঁর লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে তাঁর নিকটজনের সকলকেই ১৪ দিনের কোয়ারান্টাইনে থাকতে হবে এবং ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় রোগ বিষয়ে নেতিবাচক রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মেনে চলতে হবে।”
★দ্বিতীয়তঃ বাড়িতে কোয়ারান্টাইনে থাকার পরো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো “জীবাণুমুক্ত করা “এবং ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা সব কিছু ১ শতাংশ সোডিয়াম হাইপোক্লারাইট দিয়ে পরিষ্কার করা। শৌচাগার ফিনাইল জাতীয় বা বাড়ির জন্য ব্যবহৃত অন্য কোনও ব্লিচিং সলিউশন দিয়ে পরিষ্কার করা যেতে পারে। জামাকাপড় আলাদা ধুতে হবে।
৮. কোভিড-১৯ নিয়ে শিশুদের মানসিক চাপ মুক্ত রাখতে করনীয় কি?
যেকোনাে মানসিক চাপে শিশুরা বড়দের চাইতে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়; তারা বাবা-মাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়, উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে, নিজেকে গুটিয়ে রাখে, রাগ করে, অস্থির হয়ে উঠে কিংবা বিছানায় প্রস্রাব করে।
শিশুর মানসিক চাপজনিত এই প্রতিক্রিয়াগুলাের প্রতি আপনি সাহয্যের হাত বাড়িয়ে দিন, তাদের কথাগুলাে আন্তরিকতার সাথে শুনুন, তাদের প্রতি একটু বেশি মনােযােগী হােন।
প্রতিকূল পরিস্থিতিতে শিশুরা বড়দের ভালােবাসা আর মনােযােগ একটু বেশি চায় শিশুদের কথাগুলাে মন দিয়ে শুনুন, তাদেরকে আশ্বস্ত করুন এবং তাদের প্রতি সদয় হয়ে কথা বলুন। যদি সুযােগ থাকে তবে শিশুকে খেলতে দিন এবং তাকে চাপমুক্ত রাখুন।
করােনা ভাইরাস সংক্রমণের সকল পর্যায়ে শিশুকে তার মা-বাবা এবং পরিবারের সাথেই রাখুন এবং তাদেরকে পরিবার বা যত্নপ্রদানকারীদের কাছ থেকে আলাদা করা থেকে বিরত রাখুন। হাসপাতালে ভর্তি, কোয়ারেন্টাইন বা যেকোনাে কারনে যদি আলাদা করতেই হয় তবে টেলিফোন বা অন্য মাধ্যমের সাহায্যে যােগাযােগ রক্ষা করুন এবং শিশুদের নিয়মিত আশ্বস্ত করুন। প্রতিদিনকার নিয়মিত রুটিন আর পরিকল্পনামাফিক কাজগুলাে যতদূর সম্ভব আগের মতই বজায় রাখার চেষ্টা করুন অথবা প্রয়ােজন হলে নতুন পরিবেশে রুটিনমত কাজ করে যেতে শিশুদের সাহায্য করুন।
শিশুকে তার বয়স উপযােগী করে প্রকৃত সত্য তথ্য প্রদান করুন, তাদেরকে প্রতিকূল পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিন এবং কিভাবে সে নিজেকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে পারবে এবং সংক্রমণ থেকে দূরে থাকবে সেগুলাে সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলুন।
সংক্রমণের পরিণতি সম্পর্কে শিশুকে আগাম তথ্য জানিয়ে রাখুন এবং নিরাপত্তার বিষয়ে তাকে আশ্বস্ত করুন। যেমন – শিশু বা তার পরিবারের কেউ যদি অসুস্থ বােধ করে এবং হাসপাতালে ভর্তির প্রয়ােজন হয় তবে সেটি শিশুকে আগে থেকে জানিয়ে দিন, সেই সাথে জানান যে এতে আতংকিত হবার কিছু নেই, তাদের সুস্থতার জন্য চিকিৎসক প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বিশ্লেষক ও তথ্যসূত্রঃ ডাঃ তাসনোভা রহমান, সহযোগী অধ্যাপক (জনস্বাস্থ্য)
লেখক
ডাঃ সালাহউদ্দীন আল আজাদ অধ্যক্ষ, মেন্ডি ডেন্টাল কলেজ ও মুখপাত্র, গ্লোবাল ডেন্টাল ফাউন্ডেশন।
করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখীতে দেশে বিভিন্ন ধরনের লকডাউন আসতে পারে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘আজই হয়তো এর ডিক্লিয়ারেশন আসতে পারে।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘বিভিন্ন টাইপের লকডাউন আসবে।’
সেটা কেমন হবে জানতে চাইলে বলেন, ‘চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দারবানে যাওয়া আসা বন্ধ হবে। বিয়ের অনুষ্ঠান, পিকনিক, ওয়াজ মাহফিল বন্ধ করার নির্দেশনা আসতে পারে। যেখানে জনসমাগম হয় সেসব জায়গায় রেস্ট্রিকশন আসতে পারে-এভাবেই বিভিন্ন ধরনের রেস্ট্রিকশন আসবে। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রাণলয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে এ বিষয়ের প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে ২২ দফার যে প্রোপোজাল গেছে, সেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব রয়েছে। তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী দেখে যেটা ভালো মনে করবেন সে অনুযায়ী নির্দেশনা জারি করবেন। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের লকডাউন থাকবে।’
প্রস্তাবানার মধ্যে আছে:
১. সব ধরনের (সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয়/অন্যান্য) জনসমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। কমিউনিটি সেন্টার/কনভেনশন সেন্টারে বিয়ে/জন্মদিন/সভা/সেমিনার ইত্যাদি অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা।
২. বাড়িতে বিয়ে/জন্মদিন ইত্যাদি অনুষ্ঠানে জনসমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।
৩. মসজিদসহ সব উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ন্যূনতম উপস্থিতি নিশ্চিত করা (ওয়াক্তিয়া নামাজে ৫-এর অধিক নয় এবং জুমার নামাজে ১০-এর অধিক নয়)।
৪. পর্যটন/বিনোদন কেন্দ্র/সিনেমা হল/থিয়েটার ও সব ধরনের মেলা বন্ধ রাখা।
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ‘বিটকরোনা’ নামের করোনা শনাক্তকারী কৃত্তিম বৃদ্ধিমত্তা টুল তৈরি করেছে দেশি সফটওয়্যার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইজেনারেশন । তাদের দাবি, করোনাবট এবং এক্স-রে ইমেজ অ্যানালাইসিস টুল উন্নত উপায়ে ও দ্রুতগতিতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কি না, তা নিজে থেকে শনাক্ত করার জন্য ব্যবহার করা যাবে।
ইজেনারেশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্যবহারকারী নিজেই কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত কি না, সেই সিদ্ধান্ত যাতে নিতে পারেন, এ জন্য ইজেনারেশন করোনাবটকে সেলফ-টেস্টিং টুলস হিসেবে তৈরি করেছে। এটি ব্যবহারকারীকে নিজে থেকেই তাৎক্ষণিকভাবে আইসোলেশনে থাকতে উৎসাহ দেয়।
এটি স্বাস্থ্যকর্মীদের সময় বাঁচাতে পারে। ব্যবহারকারীদের প্রশ্ন বুঝতে পারা এবং সেটির যথাযথ উত্তর দেয়ার জন্য করোনাবটটিতে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করা হয়েছে। বটটি ইংরেজি, বাংলা এবং বাংলা ভাষাকে ইংরেজি অক্ষরে লেখা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।
এর পাশাপাশি ইজেনারেশন মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির মাধ্যমে এক্স-রে ছবি বিশ্লেষণী টুল তৈরি করেছে যা বুকের এক্স-রে ছবি দেখে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণে কার্যকর হতে পারে। এই টুল ব্যবহার করে ব্যবহারকারীরা সুস্থ আছেন কিনা, মৃদু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত কিনা অথবা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন কিনা সেটি জানা যাবে। ইজেনারেশন বিটকরোনা (http://beatcorona.egeneration.co/) ওয়েবসাইটে গিয়ে এক্স-রে ছবি আপলোড করলে টুলটি ফলাফল দেখাবে
ইজেনারেশন গ্রুপের চেয়ারম্যান শামীম আহসান বলেন, ‘ইজেনারেশন বিগত দুই বছর ধরে স্বাস্থ্যসেবা সফটওয়্যার ও অ্যানালিটিক্স নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করে আসছে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির যে সক্ষমতা আমাদের তৈরি হয়েছে, সেটি ব্যবহার করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের এই সল্যুশনগুলি আমরা স্বল্প সময়ে তৈরি করতে পেরেছি।’
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে এক নারীসহ আরও দুইজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তারা হলেন, উপজেলার ভাওড়া ইউনিয়নের কামাড়পাড়া গ্রামের ৫৫ বছরের এক নারী ও জামুর্কী ইউনিয়নের পাকুল্যা গ্রামের ৩০ বছরের এক যুবক।
আক্রান্ত ওই নারী ঢাকায় বোনের বাসায় এবং যুবক ঢাকায় জুয়েলারি দোকানে থাকতেন। ২৬ এপ্রিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যকর্মীরা ৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠান। এরমধ্যে তাদের ওই দুইজনের করোনা পজিটিভ ও চারজনের নেগেটিভ আসে বলে স্বাস্থ্যকর্মী এজাজুল হক হাসান রাত সাড়ে এগারোটায় জানিয়েছেন।
এর আগে ৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের পলি ক্লিনিকের সিনিয়র ওটি বয় অখিল চন্দ্র সরকারের করোনা পজিটিভ হলে ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়ে ২৪ এপ্রিল বাড়ি আসেন।
এ পর্যন্ত মির্জাপুরে বিভিন্ন এলাকা থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা ১৫২ জনের নমুনা সংগ্রহ করেন। এরমধ্যে ১৪৯ জনের করোনা নেগেটিভ ও ৩ জনের পজিটিভ আসে।
উপজেলা প্রশাসন রাতেই তাদের ঢাকায় কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো এবং আশপাশের অর্ধশত বাড়ি লকডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
চিকিৎসক-নার্সসহ ৬৬০ জন স্বাস্থ্যকর্মী মরণব্যাধী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, যা দেশের মোট আক্রান্তের ১১ ভাগ। আজ সোমবার (২৭ এপ্রিল) চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।
সংগঠনটির মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বৈশ্বিক করোনা মহামারীতে বাংলাদেশও গভীর সংকটের সম্মুখীন। আজ সোমবার পর্যন্ত দেশের করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৯১৩ জন এবং মারা গেছেন ১৫২ জন।
এতে আরও বলা হয়েছে, করোনা যুদ্ধের সম্মুখ সারির যোদ্ধা চিকিৎসক, নার্স ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ সেবাদানকারীগণ আশঙ্কাজনকভাবে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এ পর্যন্ত ২৯৫ জন চিকিৎসক, ১১৬ জন নার্স ও ২৪৯ জন অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীসহ চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬০, যা দেশের মোট আক্রান্তের ১১ ভাগ।
চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবাদানকারী ব্যক্তিগণ এই হারে আক্রান্ত হতে থাকলে আগামীতে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।
তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারের প্রতি নিম্নলিখিত প্রস্তাবনাসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানায় বিএমএ। এগুলো হলো:
১. দ্রুততম সময়ের মধ্যে কোভিড হাসপাতালে নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্সসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য সঠিক মানের পিপিই, এন-৯৫ বা এর সমমানের মাস্ক প্রদান করা জরুরি। ২. নন-কোভিড হাসপাতালের প্রবেশদ্বারে ট্রায়াজ সিস্টেম চালু করে সেখানে কর্মরত সকল চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপযুক্ত পিপিই, এন-৯৫ বা সমমানের মাস্ক প্রদান নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। ৩. সকল সরকারি বেসরকারি হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসন, প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ ও হাসপাতালে যাতায়াতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।
দেশে মহামাহারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে ১৫২ জনের মৃত্যু হলো। আক্রান্ত হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৪৯৭ জন। ফলে দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে পাঁচ হাজার ৯১৩।
সোমবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় চার হাজার ১৯২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে তিন হাজার ৮১২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সব মিলিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫০ হাজার ৪০১টি। নতুন যে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে তার মধ্যে আরও ৪৯৭ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ফলে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৯১৩ জনে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন আরও সাতজন, এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫২ জনে। এছাড়া সুস্থ হয়েছেন আরও নয়জন। ফলে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৩১ জন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকার এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয় বুলেটিনে।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন গোটা বিশ্বে তাণ্ডব চালাচ্ছে। চীন পরিস্থিতি অনেকটাই সামাল দিয়ে উঠলেও এখন মারাত্মকভাবে ভুগছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে দুই লাখ সাত হাজার। তবে পৌনে নয় লাখের বেশি রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর প্রথম দিকে কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর মিললেও এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুও।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। নিয়েছে আরও নানা পদক্ষেপ। এসব পদক্ষেপের মূলে রয়েছে মানুষে মানুষে সামাজিক দূরত্ব বজায়, বিশেষত ঘরে রাখা। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনী, র্যাব ও পুলিশের টহল জোরদার করেও মানুষকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না বিধায় করোনাভাইরাসের বিস্তার উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।