গত ৭ ই এপ্রিল ২০২১ এ বাংলাদেশ মেডিকেল টিচার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও প্লাটফর্ম অব মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল সোসাইটি চিকিৎসক, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য পেশাজীবী বিভাগে চিকিৎসক পদক ২০২১ এর তালিকা প্রকাশ করে। উক্ত তালিকায় ডেন্টিস্ট্রি এন্ড এলায়েড বিষয়ে অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমান মোল্লা নির্বাচিত হন।
গতকাল (১৩/১২/২১) রাজধানীর কুর্মিটোলায় অবস্থিত হোটেল লা মেরিডিয়ানে পদক প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
পদক গ্রহণপূর্বক বক্তৃতায় অধ্যাপক ডা.মতিউর রহমান মোল্লা বলেন – “মেডিকেল ও ডেন্টাল এর এত গুণীজনদের মাঝে আমাকে নির্বাচিত করায় আমি আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ডেন্টিস্ট্রিতে এই প্রথম আমি নির্বাচিত হয়েছি বলে উচ্ছসিত। আশির দশকে দেশে এসে দেখি ডেন্টিস্ট্রির করুনদশা।
১৯৮৭ সালে দেশে আশার পরে আমার কয়েকজন সাথিকে নিয়ে আমি উদ্যোগ নেই যে দেশে ওরাল এন্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারী প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং ঢাকা ডেন্টাল কলেজে আমরা প্রথম ট্রেইনিং প্রোগ্রাম শুরু করি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ঢাকা ডেন্টাল কলেজে এম এস কোর্স চালু করি।
পরবর্তীতে ২০০০ সালে শহীদ সোহরাওয়ার্দীতে ২০ বেডের ওরাল এন্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারী ইউনিট আমার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং এম এস কোর্স রিকগনাইজড করানো হয়।
এছাড়াও ২০০৪ সালে আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এও ওরাল এন্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারীর ডীন ও চেয়ারম্যান ছিলাম। সেখানে ২০ বেডের ওয়ার্ডসহ ইউনিটটিকে পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনিদের জন্যে সুন্দরভাবে সাজানোর চেষ্টা করেছি।
আমার জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আমার ছেলে-মেয়েকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা যাতে তারা দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে।”
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ওরাল এন্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জানস এসোসিয়েশন(বামোস) এর অগ্রযাত্রা শুরু হয় অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমান মোল্লার মাধ্যমে। এ বিষয়ে তিনি ডেন্টাল টাইমসকে জানান – “ প্রথমদিকে আমার হাত ধরে ঢাকা ডেন্টাল কলেজ থেকে বাামোস এর যাত্রা শুরু হলেও পরবর্তীতে ডা. এস এম ইকবাল শহিদ, ডা. রফিক আহমেদ ভূঁইয়া, ডা. কে এইচ আলতাফ এবং ডা. মহিউদ্দীন আহমেদ ওরাও যুক্ত হয়।”
অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমান মোল্লা বর্তমানে আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ এর অনারারী অধ্যাপক এবং সিনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে এভারকেয়ার হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন।
কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত হয়েছে বাংলাদেশের সিনেমা ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের পরিচালনায় সিনেমাটি কানে প্রদর্শীত হওয়ার পর ‘স্ট্যান্ডিং ওভেশন’ পেয়েছে। এসময় কেঁদে ফেলেন চলচ্চিত্রটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করা আজমেরী হক বাঁধন।
এখন একটি সিনেমা মুক্তির পর হলে প্রথম শোতে কতজন দর্শক আশা করা হয়? প্রশ্নটি যদি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে হয় উত্তর হবে এক-দেড়শ। আর যদি বাংলাদেশী ছবি বিদেশী কোনো প্রদর্শনীতে হয় তাহলে তো দর্শক আরো কমে যাবে। কিন্তু চলচ্চিত্রের বিশ্বকাপখ্যাত কান উৎসবে বাংলাদেশের ছবি রেহেনা মরিয়ম সব হিসাব উল্টে দিয়েছে। ৭৪তম আসরের আঁ সার্তে রিগা বিভাগে প্রথম প্রদর্শনীতে এক হাজার ৬৮ জন দর্শক পিনপতন নীরবতায় সিনেমাটি উপভোগ করেন।
কানের ডবসি থিয়েটারে বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ৩টা ১৫ মিনিট) সিনেমাটির প্রদর্শনী শুরু হয়।
সিনেমাটি শেষ হওয়ার পর দর্শক দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন এবং হাততালিতে মুখরিত করেন ডবসি থিয়েটার। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিল ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ এর পুরো টিম।
আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ নির্মিত ছবিটি দেখতে আগে থেকেই বেশ লম্বা লাইন ছিল ডেবুসি হলের সামনে। প্রদর্শনীতে সিনেমাটির পরিচালক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ ছাড়াও অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন, ছবিটির সিঙ্গাপুরের প্রযোজক জেরেমি চুয়া, চিত্রগ্রাহক তুহিন তমিজুল, প্রডাকশন ডিজাইনার আলী আফজাল উজ্জল, শব্দ প্রকৌশলী শৈব তালুকদার, কালারিস্ট চিন্ময় রয় এবং নির্বাহী প্রযোজক এহসানুল হক বাবু উপস্থিত ছিলেন।
দর্শক প্রতিক্রিয়ায় অভিভূত রেহানা মরিয়ম নূর চরিত্র রূপদানকারী অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন এ সময় আপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন। গণমাধ্যমের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বাঁধন বলেন, ‘এখানে আসার মতো এত বড় স্বপ্ন দেখার সাহসও আমার ছিল না। যে সম্মান পেলাম তার পুরো কৃতিত্ব টিমের ও পরিচালকের। আমি শুধু তাকে বিশ্বাস করেছি আর তার কথামতো পরিশ্রমটা করেছি। আজ যে রেসপন্স পেয়েছি, আমি জানি না এরপর আমার আর কী পাওয়ার থাকতে পারে।’
দর্শক যখন দাঁড়িয়ে সম্মান জানাচ্ছিল, সে মুহূর্তের অনুভূতি সম্পর্কে বাঁধন বলেন, ‘এত সম্মান, আমি জানি না…আমি সত্যিই সম্মানিত, অনেক আনন্দিত। এই সম্মানটা শুধু তো আমাদের নয়, আমাদের দেশের সম্মান। সবাই যখন দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছিল, তখন…আসলে তো আমরা আমাদের দেশটাকে সাথে করে নিয়ে এসেছিলাম। এটা দেশের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে দর্শক আমাদের স্ট্যান্ডিং ওভেশন দিয়েছে। সেই সঙ্গে সবার হাততালিতে মুখরিত ছিল হল রুম। এটা অসাধারণ এক অনুভূতি, বলে বোঝাতে পারব না। নিজের অজান্তে গর্বে আমার চোখে পানি চলে এসেছে।’
এই উৎসবে যোগ দেয়া একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, সিনেমাটির প্রদর্শনী শেষে তিনি দর্শকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। দর্শকরা একবাক্যে সিনেমাটি নিয়ে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন। ইংরেজি সাবটাইটেল দেয়া ছবিটি বুঝতে তাদের কোনো সমস্যা হয়নি বলেও জানিয়েছেন। হলভর্তি পুরো অডিয়েন্স যেভাবে বাংলাদেশের সিনেমাটিকে স্বাগত জানিয়েছে, তা অভাবনীয়।
কান চলচ্চিত্র উৎসবকে ‘সিনেমার অলিম্পিক’ হিসেবেও ধরা হয়। দক্ষিণ ফ্রান্সের কান শহরের সাগর উপকূলে পালে দে ফেস্টিভাল ভবনে গত মঙ্গলবার ৭৪তম উৎসবের পর্দা উঠেছে। উৎসব চলবে ১৭ জুলাই পর্যন্ত।
উৎসবের মূল পর্বে দেখানো হবে ৪৪টি চলচ্চিত্র। প্রতিযোগিতা বিভাগে ২৪টি। আঁ সার্তে রিগা বিভাগে ২০টি চলচ্চিত্র স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’।
বাস্তব জীবনও ডাঃ আজমেরী হক বাঁধন একজন চিকিৎসক (ডেন্টাল সার্জন), অভিনয় করেছেন একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক রেহানা মরিয়ম নূর চরিত্রে। যাকে কেন্দ্র করে সিনেমাটির গল্প। কর্মস্থলে ও পরিবারে তাল মেলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। শিক্ষক, চিকিৎসক, বোন, কন্যা ও মা হিসেবে জটিল জীবন যাপন করেন তিনি। এক সন্ধ্যায় একজন অধ্যাপকের কক্ষ থেকে এক ছাত্রীকে কাঁদতে কাঁদতে বের হতে দেখেন রেহানা। এ ঘটনার পর ক্রমে একরোখা হয়ে ওঠেন তিনি। ওই ছাত্রীর পক্ষ হয়ে সহকর্মীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। একই সময়ে তার ছয় বছর বয়সী মেয়ের বিরুদ্ধে স্কুল থেকে রূঢ় আচরণের অভিযোগ ওঠে। অনড় রেহানা তথাকথিত নিয়মের বাইরে গিয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী ও নিজের মেয়ের জন্য ন্যায়বিচারের লড়াই করতে থাকেন।
একটি মেডিক্যাল কলেজে পুরো চলচ্চিত্রের শুটিং হয়েছে। পুরো সিনেমাতেই এক ধরনের অনুজ্জ্বল নীলাভ-সাদা আলো বেছে নেওয়া হয়েছে। ভবনের ভেতরে বা বাইরে কোথাও কখনো উজ্জ্বল আলো দেখা যায়নি। আলো-আঁধারির যে খেলা সিনেমায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তা রেহানার গল্পের সাথেও মানানসই। পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রেও যত্ন করে আলোর বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে। কোনো চরিত্রই তেমন উজ্জ্বল কাপড় পরেনি। বরং সমাজে নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন এবং এ নিয়ে যে লুকোচুরি এবং হুশ-হাশ চুপ-চুপের অবতারণা করা হয়, সিনেমার লাইটিং তাকে দারুণভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছে। ভালো একটি দৃশ্যের জন্য ক্যামেরার যে কয়টি নিয়ম মানার কথা বলা হয়ে থাকে, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তার কোনোটির ধার ধারেননি সাদ। রেহানা মরিয়ম নূরে ট্রাইপড বা অন্য কোনো ডিভাইস ব্যবহার করে দৃশ্যকে স্থিতিশীল করার কোনো চেষ্টাই করা হয়নি।
বাংলা ভাষায় নির্মিত এক ঘণ্টা ৪৭ মিনিটের এই ছবিতে ইংরেজি সাবটাইটেল দেয়া হয়েছে। চলচ্চিত্রটি আগামী সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে মুক্তি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন চলচ্চিত্রটির নির্বাহী প্রযোজক এহসানুল হক বাবু।
৩৭ বছর বয়সী আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের হাত ধরেই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে কোনো চলচ্চিত্র অফিশিয়াল সিলেকশনে জায়গা পেল। এর আগে ১৯৯৪ সালে ‘আঁ সার্তে রিগা’ বিভাগে ভারতীয় চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র ‘উত্তরণ’ নির্বাচিত হয়েছিল। কানের অফিশিয়াল সিলেকশনের চার বিভাগের বাইরে প্যারালাল বিভাগের ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটে ২০০২ সালে উৎসবের ৫৫তম আসরে নির্বাচিত হয়েছিল প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ পরিচালিত ‘মাটির ময়না’। ছবিটি সেবার পুরস্কৃত হয়েছিল।
করোনার জিনোম সিকোয়েন্স উদ্ভাবনের স্বীকৃতি স্বরূপ এ বছর একুশে পদক পাচ্ছেন অণুজীববিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. সমীর কুমার সাহা। বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গবেষণা ক্যাটাগরিতে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (অনুষ্ঠান) অসীম কুমার দে স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিক চলতি বছর (২০২১) একুশে পদক পাচ্ছেন।
ড. সমীর কুমার সাহা ১৯৫৫ সালে নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা চন্দ্রকান্ত সাহা ও মা দুলালী প্রভা সাহা। চন্দ্রকান্ত সাহা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। পেশাগত কারণে চন্দ্রকান্ত সাহাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকতে হতো। সেই সুবাদে ড. সমীর কুমার সাহার শৈশব ও স্কুলজীবন কেটেছে রাজশাহীতে। রাজশাহীর চারঘাট থানার আড়ানী গ্রামের মনমোহিনী হাইস্কুলে স্কুলজীবন করেন। চৌমুহনীর মদনমোহন হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করার পর চন্দ্রকান্ত সাহা সপরিবারে চাঁদপুর চলে আসেন। সেখানে জেলার সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন সমীর কুমার সাহা। কলেজে পড়াকালীন সময়ে তিনি রামকৃষ্ণ আশ্রমে থাকতেন।
১৯৭৫ সালে এইচএসসি শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮৩ সালে উদ্ভিদবিজ্ঞানে স্নাতক করার পর মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।
এরপর তিনি ঢাকা শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজিতে যোগ দেন। ১৯৮৯ সালে ভারতের বানারসে ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স থেকে মেডিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে আবার ঢাকা শিশু হাসপাতালে ফিরে আসেন।
ঢাকা শিশু হাসপাতালে ফিরে আসার পর এখানে সীমিত পরিসরে গবেষণার জন্য দল গঠন করেন তিনি। সেই সময় শিশুরা ডায়রিয়ার থেকে বেশি মারা যেতো নিউমোনিয়া, টাইফয়েড ও মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়ে। তখন তিনি নিউমোনিয়ার নির্দিষ্ট দুটি জীবাণু নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। একই সঙ্গে টাঙ্গাইলে মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতাল, রাজধানীর মিরপুরের শিশু স্বাস্থ্য হাসপাতাল, চট্টগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতাল এবং সিলেটের বালুচরের গবেষণাগার থেকেও তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করেন।
তাঁর গবেষণার তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সরকার শিশু মৃত্যু হার কমানোর জন্যে বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচিতে ভ্যাকসিন ‘হিব পেন্টাভ্যালেন্ট’ ও ‘নিউমোকক্কাস’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শিশু মৃত্যুহার কমানোর স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৭ সালে তিনি ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে প্রথম এশীয় হিসেবে জে. ফিনলে পুরস্কার অর্জন করেন ডা. সমীর। একই সঙ্গে অণুজীববিজ্ঞানীদের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সংগঠন আমেরিকান সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলজির পক্ষ থেকে সম্মানসূচক পুরস্কার পান। যুক্তরাষ্ট্র আর কানাডার বাইরে এই পুরস্কার আগে দেওয়া হয়নি।
এবার একুশে পদক পাচ্ছেন ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল ট্রাস্ট এর চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ও চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ কাজী কামরুজ্জামান । সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিতে এবার একুশে পদক পাচেছন তিনি।
বৃহস্পতিবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (অনুষ্ঠান) অসীম কুমার দে স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, শিল্পকলা, সাংবাদিকতা, সাহিত্য, শিক্ষা, অর্থনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য একুশে পদক দেওয়া হয়ে থাকে।
এতে বলা হয়, ‘সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিককে ২০২১ সালের একুশে পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
সাধারণ মানুষের আয়-সীমার মধ্যে একটি টেকসই, নিরাপদ এবং সংহত চিকিৎসা সেবা প্রদানের অঙ্গীকার নিয়ে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল ট্রাস্ট ৩ দশকের বেশি সময় ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
হাসপাতালে সাধারণ চিকিৎসা প্রদান ছাড়াও চিকিৎসা শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবা কর্মসূচীর মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ট্রাস্ট ইতিমধ্যে একটি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল ইউনিট, নার্সিং কলেজ এবং প্যারামেডিক ইনস্টিটিউট স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে।
সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবার অঙ্গীকার থেকে গ্রামের গরীব জনগণের জন্য চালু করেছে গ্রামীন স্বাস্থ্য সেবা কর্মসূচী, বিভিন্ন শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য শিল্প স্বাস্থ্য সেবা কর্মসূচী এবং দরিদ্র শিশু-কিশোরদের জন্য স্কুল স্বাস্থ্য সেবা কর্মসূচী ।
স্কুল স্বাস্থ্য কর্মসূচী সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দরিদ্র ও শ্রমজীবী শিশু কিশোরদের জন্য সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে পরিচালিত বিদ্যালয়সমূহে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম যা ২ দশকেরও বেশি সময় ধরে অব্যাহত আছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের “যখন তখন শিক্ষা” নামে পরিচালিত ৬ টি স্কুল, মহিলা সমিতি পরিচালিত শিশুদের স্কুল, সুলতান-ছফা পাঠশালা, ইউসুফ স্কুল, শিশু স্বর্গ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে এই সেবাটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।
এছাড়া, পিতৃমাতৃহীন বা পিতৃহীন এতিম শিশুদের ভরণপোষণ, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং উপযুক্ত মর্যাদায় সমাজে পুনর্বাসনের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণাধীন সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে সরকারি শিশু পরিবার পরিচালনা করছে। দৃষ্টি , শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী দরিদ্র শিশু-কিশোরদের জন্য পরিচালনা করছে আবাসিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সমূহ ।
গত ডিসেম্বর’২০ মাস থেকে সমাজ সেবা অধিদপ্তর পরিচালিত ঢাকা শহরের অনাথ, উদ্বাস্তু ও প্রতিবন্ধী শিশু কিশোরদের ৭টি স্কুল ডিসিএইচ ট্রাস্টের স্কুল স্বাস্থ্য সেবা কর্মসূচীর সাথে যুক্ত হয়েছে। স্কুল গুলো হলো সরকারী শিশু পরিবার (বালক), সরকারী শিশু পরিবার (বালিকা), ছোট মনি নিবাস, দিবাকালীন শিশু যতকেন্দ্র, সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম, সরকারী বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় ও সরকারী আশ্রয় কেন্দ্র।
বাংলাদেশে বিবাহিত নারীদের নিয়ে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘মিসেস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০১৯’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছেন দন্ত চিকিৎসক ডাঃ উর্বি ইসলাম। সোমবার রাতে রাজধানীর আইসিসিবি’তে এই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিযোগিতায় প্রায় আট হাজার নারী এই প্রতিযোগিতার জন্য আবেদন করেছিলেন। তাদের মধ্যে থেকে ৫০০ প্রতিযোগীকে বাছাই করে, প্রাথমিক অডিশনের মধ্য দিয়ে প্রায় ২০০ প্রতিযোগী টিকে ছিল। কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে ১০০ জনকে নিয়ে শুরু হয় মূল আয়োজন। সেরা এগারো প্রতিযোগী নিয়ে হয় চূড়ান্ত পর্ব। চ্যাম্পিয়ন হওয়া উর্বি ইসলাম ডিসেম্বরের শেষের দিকে চায়না’তে অনুষ্ঠিত মিসেস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজের ১৮তম ব্যাচের সাবেক এ শিক্ষার্থী বাংলাদেশ টেলিভিশনে ইংরেজী সংবাদ পাঠক এবং উপস্থাপিকা হিসবে কাজ করছেন। এছাড়া তিনি ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবেও কাজ করছেন।
‘বায়োজিন কসমেসিউটিক্যালস মিসেস ইউনিভার্স বাংলাদেশ-২০১৯’ শিরোনামের এ প্রতিযোগিতার আয়োজক অপূর্ব আব্দুল লতিফ বলেন, ‘বাংলাদেশে মেধাবী ও বিবাহিত নারীদের নিয়ে উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু হয়নি। সেই তাগিদেই এমন একটা আয়োজন করা। নারী শক্তি ও নারী জাগরণকে একধাপ এগিয়ে দেয়ার লক্ষ্যেই এ আয়োজন।’
এই প্রতিযোগিতায় শুরু থেকে অডিশন, গ্রুমিং এবং মোটিভেশনাল সেশনে বিচারক হিসেবে ছিলেন, অভিনেতা ও পরিচালক শহীদুল আলম সাচ্চু, আবদুন নুর তুষার, আবৃত্তি শিল্পী শিমুল মোস্তফা, গ্রুমিং ইন্সট্রাক্টর কৃষান ভূইয়া, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ও মডেল জাহারা মিতু, উপস্থাপিকা ইসরাত পায়েল, মডেল অভিনেতা অন্তু করিম, ফারহানা আফরিন ঐশী প্রমুখ।