আফসানা মিমি: আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে, মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিটগুলোতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের সম্ভবত সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার হতে হয়। ক্ষেত্র বিশেষে আসলে নার্সিং/ হেলথ এসিস্ট্যান্টদের মত মনে করা হয় কিনা বুঝি না। এখানে ভর্তির পর দু’বছরে প্রতিনিয়ত এমন অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে যা ভাবতে গেলেই কষ্ট পায় খুব।
প্রায় প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট থেকেই শুনতে হয়, আসলে তোমরা দুর্বল ছাত্র তো বেশি পড়ানো ঠিক হবে না ! আবার বলা হয়, তোমরা তো বিডিএস, এতো কিছু লাগবে না! এগুলো তোমাদের কেন যে সিলেবাসে দেয়, অযথা বাড়াবাড়ি! হাত – পা ছাড়া ডাক্তার। কেউ কেউ আরও একধাপ অগ্রসর হয়ে বলে, “কেন পড়তে এসেছো বিডিএস ? ভার্সিটিতে পড়লেই পারতে!” ইত্যাদি।
৫ বছর কোর্স করায় আমাদের মনে হয়েছিলো বৈষম্য হয়তো কিছুটা কমবে। কিন্তু না, এতে কেবল কারিকুলাম’ই পরিবর্তন হলো, পরীক্ষা পদ্ধতি কঠিন হলো, সিলেবাস কিছুটা বাড়লো। আগাগোড়া আর কিছুই হলো না। আমাদের এমবিবিএস সহপাঠীদের ধারণা আমাদের তেমন পড়াশোনা করা লাগে না অথবা অর্ধেক পড়াশোনা করলেই সহজেই পাশ হয়ে যায়। একসাথে দীর্ঘদিন ক্লাস করা সত্ত্বেও, তারা যেন আমাদেরকে মেডিকেল কলেজের অংশ মনে করতে পারে না। তাদের ধারণা অনুযায়ী কলেজটি মূলতই তাদের জন্য/ ক্লাসগুলোও তাদের শেখানোর জন্য নেয়া হয়। আমরা এখানে লেজুড়! অথচ প্রতিটি বর্ষে কমন বিষয়গুলোর পাশাপাশি ২/৩ টা ডেন্ট্রিস্ট্রি পাঠ্যবই সিলেবাস ভুক্ত। এটি যেন কারোরই চোখেই ধরে না।
সব মিলিয়ে সিলেবাস যে সমান এটিও তারা মানতে নারাজ! ভাবখানা এমন, এই ওদের কথা বাদ দাও, ওরা তো বিডিএস! একটা পেশা আর তার প্রতি সম্মানের জন্য যথেষ্ঠ উদারতার অভাবে- ‘এই, ওরাতো বিডিএস!’- উক্তিটাতে কেমন যেন অবজ্ঞা থাকে প্রায়শই। বলার ধরন অনুযায়ী গালি মনে হতে পারে।
সময়ের সাথে সাথে অভ্যস্ত হয়ে ওঠার কথা ছিলো আমাদের। কিন্তু তবুও কেন জানি মাঝেমধ্যে কথা গুলো খুব মনে লাগে। স্কুল- কলেজের দিনগুলোকে খুব মনে পরে, প্রত্যেক বোর্ড পরীক্ষায় সর্বোচ্চ রেজাল্ট/স্কলারশিপ পাওয়ার দিনগুলো আসলে খুব বেশি দিন আগে পার করে আসিনি আমরা। যাই হোক, এক্ষেত্রে আমাদের করনীয় হলো যার যার অবস্থান থেকে আমাদের পেশার ভালো দিক গুলো সকলের কাছে উপস্থাপন করা। আর শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ এবং সহপাঠিদের আরও উন্নত দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করবেন এমনটাই আশা করি। যা হয়ত আমাদের একাডেমিক এই কঠিন মুহুর্তগুলোতে হতাশা থেকে বাঁচাবে। আর একটা সুন্দর কর্মজীবনের স্বপ্ন জিইয়ে রাখতে সহায়তা করবে।
লেখক: বি.ডি.এস.-৩য় বর্ষ , ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল ইউনিট, রাজশাহী