পরামর্শ
দাঁতের চিকিৎসার সময় যে তথ্যগুলো গোপন করবেন না!
Published
1 month agoon
ডা. মোঃ আরিফুর রহমান
দাঁতের চিকিৎসার সময় অনেকেই ভুলে যান যে দাঁতের সাথে আমাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গ জড়িত তাই অনেক সময় চিকিৎসক কে সব কিছু খুলে বলার প্রয়োজন মনে করেন না আবার সংরক্ষণশীল সমাজের অংশ হিসেবে অনেকে লজ্জায় অনেক তথ্য গোপন করে যান ।যার ফলে চিকিৎসা প্রদানে অনেক ক্ষেত্রেই বিরূপ পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয় ডাক্তার এবং রোগী উভয়কেই। আজ আপনাদের এমন কিছু সাধারন বিষয় নিয়ে আলোকপাত করবো যেগুলো চিকিৎসককে জানানো খুব প্রয়োজনীয় ।
আপনি যদি গর্ভবতী হন অথবা গর্ভ ধারণের জন্য চেস্টারত হনঃ
জেনে রাখবেন গর্ভের সন্তানের জন্য অধিকাংশ ব্যাথার ওষুধ ক্ষতিকর।
একজন গর্ভবতী মায়ের সাথে দুইটি জীবন জড়িয়ে থাকে, তার মধ্যে গর্ভস্থ যে শিশুটি তার জন্য অনেক ধরনের ওষুধ বিষ হিসেবে কাজ করতে পারে। তাই একজন গর্ভবতী মায়ের অবশ্যই জানানো উচিত উনার কত সপ্তাহ চলছে। এতে চিকিৎসক নিরাপদ ওষুধ প্রদান করবেন এবং এক্স-রে কিংবা অন্যান্য কার্যপ্রণালী নির্বাচনে সতর্ক থাকতে পারবেন। দাঁতের রোগীরা বেশির ভাগ সময় ব্যাথা নিয়ে আসেন। অনেকে ফার্মেসী থেকে ব্যাথার জন্য ইটোরিক্স জাতীয় ওষুধ কিনে খান । জেনে রাখবেন গর্ভের সন্তানের জন্য অধিকাংশ ব্যাথার ওষুধ ক্ষতিকর। আপনার সন্তান যদি বুকের দুধ খায় সেটাও ডেন্টাল সার্জনকে অভিহিত করবেন কারন কিছু ওষুধ বুকের দুধের সাথে নিঃসরণ হয়- যা শিশুর উপর প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক দম্পতি আছেন গর্ভধারণের জন্য চেস্টায় আছেন কিন্তু এখনো পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন নাই। এমন মহিলাদের উচিত চিকিৎসককে এটা অবহিত করা। কারন গর্ভ ধারনের পরে প্রথম ৩ মাস অনেক সতর্ক থাকতে হয় ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে।
আপনার যদি কোন ক্রনিক রোগ যেমন – ডায়াবেটিকস, ব্লাড প্রেসার, এ্যাজমা ইত্যাদি থাকেঃ
প্রেসারের রোগিদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রক্তপাত একটি সাধারন সমস্যা
ডায়াবেটিকস এর রোগীদের মাড়ির ইনফেকশন বেশি হয় এবং ডায়াবেটিকস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে শরীরের যেকোন ক্ষত শুকাতে চায়না। সুতরাং আপনার যদি ডায়াবেটিকস থাকে তবে অবশ্যই ডাক্তার কে অবহিত করুন। অনেক ক্ষেত্রেই ইনফেকশন বেশি বা অনিয়ন্ত্রিত সুগার এর রোগিদের এন্টিবায়োটিকের মাধ্যমে ইনফেকশন কমিয়ে তারপর দাঁত তোলা বা অন্যান্য দাঁতের চিকিৎসা করা হয়। প্রেসারের রোগীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রক্তপাত একটি সাধারন সমস্যা। সেই সাথে আপনার যদি উচ্চ কোলেস্টোরল এর সমস্যা থাকে তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা রক্ত পাতলা করার উপাদানযুক্ত ওষুধ যেমন ইকোস্প্রিন, Clopidogrel, warfarin ইত্যাদি দিয়ে থাকেন। এই জাতীয় ওষুধগুলো দাঁত তোলা বা যেকোন অস্ত্রোপচারের অন্তত ৫ দিন আগে থেকে বন্ধ না রাখলে সার্জারির পরে রক্তপাত বন্ধ করা কঠিন হয়ে যায়। কিডনির রোগে আক্রান্ত রোগীদের অনেক ওষুধ দেয়া যায় না। তাই আপনি যদি নিয়মিত কোন ওষুধ খান সেগুলোর প্রেস্ক্রিপশন ডেন্টাল সার্জনকে দেখাবেন এবং আপনার সকল রোগের ব্যাপারে উনাকে অভিহিত করবেন ।
আপনার মেডিকেল ইতিহাস : কোনদিন কোন দুর্ঘটনায় কেটে যাবার পরে আপনার কি রক্তপাত বন্ধ হতে অনেক সময় নিয়েছিলো? ছোটবেলায় মুসলমানির পরে কি অতিরিক্ত রক্তপাত হয়েছিলো? যদি এমন অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে তবে হয়তো আপনার রক্তপাত জনিত জটিলতা (Bleeding disorders) থাকতে পারে। আগে থেকে জানা না থাকলে এটা একটা দুঃস্বপ্নের মতো পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে সার্জন এবং রোগী উভয়কেই। তাই এধরনের ইতিহাস ডাক্তারের কাছে খুলে বলা জরুরী। এক্ষেত্রে বিশেষ ব্যাবস্থা এবং সতর্কতার সাথে অপারেশন করা হয়। এছাড়াও কোন বড় অপারেশন হয়ে থাকলে , অতীতে কোন বিশেষ ওষুধ খাবার পরে এলার্জি বা অসুবিধা হয়ে থাকলে, ক্যান্সারের রোগী , কোন সংক্রমন ব্যাধি যেমন- হেপাটাইটিস, এইডস ইত্যাদি থাকলে অবশ্যই জানানো উচিত। অনেক সময় কেমো-রেডিও থেরাপীর রোগী দাঁত তুলতে আসেন – কিন্তু রেডিয়েশনের প্রভাবের কারনে সেই দাঁত স্বাভাবিকভাবে তোলা অসম্ভব হয়ে যায়। হেপাটাইটিস বা এইডস রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যাবস্থা নিতে হয় যেন জীবানু না ছড়ায়। এসব গোপন করলে রোগী এবং সমাজের সকলেরই ক্ষতি হয়।
আপনার কোন বদ অভ্যাস থাকলেঃ
সিগারেট খেলে আমাদের মুখের ভেতরের যেকোন ক্ষত শুকাতে বিলম্ব হয়
একবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এক রোগীর দাঁত তুলার জন্য চেতনা নাশক ইঞ্জেকশন কিছুতেই কাজ করছিল না। যতটুকু দেয়া যায় পুরোটাই দিয়ে অবশ করতে ব্যর্থ হবার পরে রফিকুল্লাহ স্যারকে ডাকতে বাধ্য হলাম। স্যার রোগী কে বললেন- “ দুই জাতের মানুষের কাছে কখনো মিথ্যা বলতে হয়না – এক উকিল আর দুই ডাক্তার, এখন বলেন কি খান ?” রোগী জানালো সে হেরোইনসেবী এবং আসার আগেও খেয়ে এসেছে ব্যাথা লাগবে না এই আশায়। সুতরাং যেকোন ধরনের নেশা সেটা সিগারেট থেকে হেরোইন পযন্ত যাই হোক না কেন ডাক্তারের কাছে লুকানো যাবে না। সিগারেট খেলে আমাদের মুখের ভেতরের যেকোন ক্ষত শুকাতে বিলম্ব হয়। এভাবে প্রতিটা নেশা উপাদানেরই কিছু না কিছু প্রভাব আছে যা ডেন্টাল সার্জন রা বুঝতে পারেন , রোগী বললে ডায়াগনোসিস আরো সুবিধা হয়। এছাড়া দাঁত দিয়ে নখ কাটা, সুতা কাটা, ড্রিংসের বোতলের মুখ খোলা এসব বদ অভ্যাসের প্রভাব দাঁতের উপর পরে। সুতরাং স্থায়ী সমাধানের জন্য এসব অভ্যাস গোপন না করে ডাক্তারের কাছে জানানোই বুদ্ধিমানের কাজ।
লেখকঃ
ডাঃ মোঃ আরিফুর রহমান
বিডিএস, এমপিএইচ
প্রাক্তন সহকারী অধ্যাপক ও ডেন্টাল ইউনিট প্রধান,
নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ
চীফ কন্সালটেন্ট , হলি ডেন্টাল কেয়ার , চৌহাট্টা , সিলেট
BMDC Reg. 2274
drarifur_rahman@yahoo.com
জীবন ও কর্ম
সমাজকল্যাণের অগ্রযাত্রায় ফিমেল ডেন্টাল সার্জন অব বাংলাদেশ
Published
10 months agoon
December 7, 2021৩ ডিসেম্বর অত্যন্ত জাকজমক ভাবে, প্লাটিনাম ক্লাব,ধানমন্ডিতে উদযাপিত হলো, ফিমেল ডেন্টাল সার্জনস অব বাংলাদেশ ক্লাবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন মাননীয় মন্ত্রী ডা.দীপু মনি,এম.পি,শিক্ষা মন্ত্রনালয়, বাংলাদেশ।
এই প্রথম সারা বাংলাদেশের সমগ্র ফিমেল ডেন্টাল সার্জনদের একত্রিত করার উদ্দ্যোগ নেন ক্লাবের প্রতিস্ঠাতা ডা. ফারিয়া তাবাসসুম তন্বী। এই ক্লাবের যাত্রা শুরু হয় ১৫ জুন,২০১৯ সালে ফেইসবুকের একটি গ্রুপের মাধ্যমে।
কভিড ১৯ অতিমারীতে সারা বাংলাদেশ ব্যাপী রাত দিন ২৪ ঘন্টা অনলাইন টেলিমেডিসিন, অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ, প্লাজমা সংগ্রহ, আই,সি,ইউ,বেড,এম্বুলেন্স সহযোগীতা করেছে এই এফ ডি এস বি ক্লাব।যা অসংখ্য মানুষের জীবন বাচাতে সাহায্য করেছে। এই গ্রুপের প্রতিস্ঠাতা ডা.ফারিয়া তাবাসসুম তন্বীকে মানবিক ডাক্তার বলে বিভিন্ন গণ মাধ্যমে আখ্যায়িত করা হয়।এর পাশাপাশি ঘরে রেখে অতিমারীর সময় রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা করে হাস্পাতাল সন্কট মকাবেলায় দেশের মানুষের পাশে থাকার জন্য,তাকে আইডিয়া জেনেরেটর বলা হয়।এই ফেইসবুক গ্রুপের সকল সমাজ কল্যান মুলক কার্যক্রমকে পরবর্তীতে অব্যাহত রাখার জন্য ২১ জন ফিমেল ডেন্টাল সার্জনকে নিয়ে গঠন করা হয় ফিমেল ডেন্টাল সার্জন অব বাংলাদেশ ক্লাব(এফ ডি এস বি).
ফিমেল ডেন্টিস্ট সকলকে এক সাথে নিয়ে চলা,প্রফেশনে পিছিয়ে পড়া ডেন্টিস্টদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি জাতীয় সমস্যায় দেশের মানুষের পাশে দাড়ানো জন্য সমাজ কল্যাণ মুলক কাজে উদ্ভুদ্ধ করার জন্য, যে সকল উদ্দ্যোগ এই ক্লাব থেকে নেয়া হয়েছে তার প্রশংসা করেন মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী ড. দীপু মনি।তিনি তাদের ভালো ডেন্টিস্ট হওয়ার পাশাপাশি খুব ভালো মানুষ এবং ভালো নাগরিক হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।
পরিশেষে তার ভাষনে, ফিমেল ডেন্টাল সার্জনস অব বাংলাদেশ ক্লাবের উত্তরোত্তর উন্নয়ন কামনা করছেন।
পড়ালেখা
উন্নত বিশ্বের প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশে গবেষণাভিত্তিক শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করা উচিত
Published
2 years agoon
September 8, 2020ডেন্টিস্ট্রির উচ্চতর ডিগ্রী নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে প্রচুর চিকিৎসক দেশে থেকে বিদেশের মাটিতে পাড়ি জমান । ভাষাগত জটিলতার কারণে বাংলাদেশ থেকে গিয়ে থাইল্যান্ডে পড়ালেখা বা চিকিৎসা সেবা দেয়ায় অনেকের আগ্রহ্য কম। কিন্তু থাইল্যান্ডে ডেন্টিস্ট্রিতে ক্যারিয়ার তৈরীর অনেক সুযোগ রয়েছে এমনটাই ডেন্টাল টাইমসকে জানান, বাংলাদেশ ডেন্টাল কলেজের ৪র্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও কলেজটির এলামনাই এসোসিয়েশনের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ডাঃ নাদিয়া সুলতানা সূবর্ণা। যিনি ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান। ডেন্টাল টাইমসের সাথে থাইল্যান্ডের মাহিদল বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা, কর্মজীবন, শিক্ষাব্যবস্থা সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলাপের মূলঅংশ তুলে ধরেছেন আফিয়া মাহমুদা খান।
১.আপনার শৈশব ও শিক্ষা জীবন সম্পর্কে আমরা জানতে আগ্রহী ।
প্রথমেই আমি ধন্যবাদ দিতে চাই ডেন্টাল টাইমসকে আমাকে এত সুন্দর একটা প্লাটফর্মে এসে আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আমার শৈশব কেটেছে পুরান ঢাকায়। বলতে গেলে হৈচৈ উৎসব আমেজের মধ্যে ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছি। আমি এসএসসি পাস করেছি অগ্রণী স্কুল থেকে এবং এইচএসসি পাস করেছি বদরুন্নেসা কলেজ থেকে। যৌথ পরিবার থেকে আমার বেড়ে ওঠা। আমার বড় ভাই বোনেরা পড়াশোনার প্রতি যথেষ্ট সিরিয়াস ছিল। তখনকার সময়ে তারা স্ট্যান্ড করত। তাদেরকে দেখেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহটা জমে ওঠে।
২. বর্তমানে আপনি বাংলাদেশ থেকে শিক্ষাবকাশ নিয়ে থাইল্যান্ডে পড়াশোনা করছেন আমরা সবাই জানি। থাইল্যান্ডে আপনার শিক্ষা অভিজ্ঞতা সম্পর্কে শেয়ার করুন পাঠকদের সাথে৷
আমি যখন বাইরে পড়ালেখা করার কথা ভাবছিলাম তখন এমন ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ খুঁজছিলাম, যেখানে উন্নত মানের ক্লিনিক্যাল প্রাক্টিস করা সম্ভব। পরে খোঁজ নিয়ে দেখলাম যে মাহিদল ইউনিভার্সিটি সাউথ এশিয়ার মধ্যে ক্লিনিক্যাল কাজের জন্য ওয়ান অফ দা বেস্ট ইনস্টিটিউশন। কারণ এখানে শিক্ষার জন্যে এত সুন্দর বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে যে, তুমি যদি কাজ করতে আগ্রহী হও তাহলে তোমাকে যথেষ্ট কাজ করার সুযোগ দেয়া হবে। এখানকার প্রফেসর, লেকচারার, স্টাফরা তোমাকে কাজের সময় খুবই সহজ করে নিবে এবং যথাসাধ্য সাহায্য করবে।
৩. পোস্টগ্র্যাজুয়েশন করতে গিয়ে থাইল্যান্ডে কেমন প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হতে হয়েছে? কিভাবে ওভারকাম করলেন?
প্রথমেই আমি বলব থাই ভাষা একটা বিশাল প্রতিবন্ধকতার কারণ। তুমি এখানে কাজ করতে পারবে তখনই যখন তুমি থাই ভাষায় কথা বলতে পারবে। সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা পরিবেশে পেশেন্টের উপর কাজ করা প্রথমদিকে একটু কষ্টকর ছিল। আমাদের দেশের সাথে এ দেশের প্র্যাক্টিস করার ধরণটা একটু ভিন্ন। কাজগুলো খুব কাছ থেকে অবজার্ভ করে করতে হয়েছে। যেহেতু আমার আগের কিছু অভিজ্ঞতা ছিলো কনসাল্ট ডিপার্টমেন্টে কাজ করে, তাই পরবর্তীতে আমার জন্য এখানে কাজ করাটা একটু সহজ হয়ে গিয়েছিল।
৪. বাংলাদেশ এবং থাইল্যান্ড দুই দেশের মধ্যে ভালো ক্যারিয়ারের সুযোগ কোথায় বলে মনে হয়? কেন?
ভালো ক্যারিয়ারের প্রসঙ্গ আসলে আমি বলব বাংলাদেশ পোস্টগ্রাজুয়েশনের জন্য যে ডিগ্রীগুলো আছে যেমন এফসিপিএস, এমএস,ডিডিএস এগুলোতে একটা প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে চান্স পাওয়া এবং পরবর্তীতে পাস করে বের হয়ে আসা কম কষ্টসাধ্য নয়।
অন্যদিকে, থাইল্যান্ডে ক্যারিয়ার গঠন করতে চাইলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এখানে ক্লিনিক্যাল এবং গবেষণা দুইদিকে সমভাবে ক্যারিয়ার তৈরি করা সম্ভব। ক্লিনিক্যাল কাজের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। তবে হ্যাঁ, গবেষণাভিওিক পড়ালেখার ক্ষেত্রে আমি বলব বাংলাদেশ কিছুটা পিছিয়ে আছে। এক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশে গবেষণাভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার উপর গুরুত্বারোপ করা উচিত।
৫.থাইল্যান্ড – এ ক্লিনিক্যাল প্র্যাক্টিস করার সময় মজার কোন অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করুন।
আসলে মাহিদলের প্রত্যেকটা দিনের ক্লিনিকই আমার কাছে একটা মজার অভিজ্ঞতার। আমি যখন থাইদের স্বরভঙ্গি করে থাই ভাষায় কথা বলতাম তখন রোগীরা আমার দিকে অবাক করে তাকিয়ে থাকতো আর ভাবতো, যে কিভাবে একজন বহিরাগত ব্যাক্তি থাই ভাষায় এত সুন্দর করে স্বরভঙ্গি কথা বলতে পারে। এই বিষয়টা আমার কাছে খুব মজার লাগতো।
আর হ্যাঁ টিমওয়ার্কের অভিজ্ঞতাটাও খুব মজাদার ছিল আমি বলব। কারণ তারা কখনোই আমাকে বহিরাগত হিসেবে মনে করেনি। সব সময় একটা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে কাজ করেছি আমি।
৬. থাইল্যান্ডের মানুষ ডেন্টিস্ট্রি এর ব্যাপারে কেমন সচেতন? এর পেছনের কারণ কি?
থাইল্যান্ডের মানুষ যথেষ্ট দন্ত স্বাস্থ্য সচেতন। জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সেবা প্রদান এবং জনস্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে এখানকার স্বাস্থ্যবিদগণ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। এখানকার রোগীরাও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে গাফিলতি করে না। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থসামাজিক দিক বিবেচনা করলে দেখা যায় যে রোগীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া চিকিৎসা সেবা নিতে ইচ্ছা পোষণ করে না। আমাদের দেশে এই বিষয়টিতে সচেতনতা জোরদার করা উচিত।
৭. থাইল্যান্ডের ডেন্টিস্ট্র শিক্ষাব্যাবস্থা সম্পর্কে সংক্ষেপে ধারণা দিন।
থাইল্যান্ডের প্রথম সারির ইউনিভার্সিটি গুলোর মধ্যে রয়েছে – Mahidol University, Walailak University, Chulalongkorn University, Chiang Mai University। এরমধ্যে Mahidol এবং Walailak University তে ব্যাচেলর এবং পোস্ট গ্রাজুয়েশন দুটো প্রোগ্রামই আছে।
পোস্ট গ্রাজুয়েশনের ভর্তি হওয়ার জন্য:
- IELTS ৬-৬.৫ স্ট্যান্ডার্ড মার্ক ধরা হয়,
- ২ টা রিকমেন্ডেশন লেটার,
- ইন্টার্নশিপ শেষ করে সংশ্লিষ্ট ফিল্ডে ছয় মাস বা এক বছরের ক্লিনিক্যাল অভিজ্ঞতা দরকার হবে।মাহিদল সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে এটির ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। Mahidol University তে মেজর সাব্জেক্ট গুলোর মধ্যে রয়েছে:
- Advanced General Dentistry,
- Oral and Maxillofacial Surgery,
- Endodontics,
- Community Dentistry,
- Oral Medicine,
- Oral and Maxillofacial Radiology,
- Prosthodontics,
- Pediatric Dentistry
অ্যাডভান্সড জেনারেল ডেন্টিস্ট্রি তে সবক্ষেত্রেই জেনারেল প্র্যাকটিস করতে পারবে।রুট ক্যানেল থেকে শুরু করে ইমপ্ল্যান্ট, এক্সট্র্যাকশন, ইম্প্যাকশন, অর্থডোনটিক ট্রিটমেন্ট এর মধ্যে মৌলিক কিছু কাজ করানো হয়। সাউথ এশিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ এন্ডোডোনটিক্স মাইক্রোস্কোপিক ট্রেনিং এর কাজ শেখানো হয় এখানে।
কেউ যদি অ্যাডভান্সড জেনারেল ডেন্টিস্ট্রিতে পোস্টগ্রাজুয়েশন করতে চায়, তবে সে এখানে সব ফিল্ডের জেনারেল প্র্যাকটিস করতে পারবে। রুট ক্যানেল থেকে শুরু করে ইমপ্ল্যান্ট, এক্সট্রাকশন, ইম্প্যাকশন অর্থডোনটিক ট্রিটমেন্ট এর মত মৌলিক কিছু কাজগুলো করানো হয়। এখানে ওরাল রেডিওলজিতে ডিজিটাল ইমেজিং, এক্সট্রাওরাল এবং ইন্ট্রাওরাল ইমাজিনেশন টেকনোলজি, আল্ট্রাসাউন্ড অ্যাডভান্স ইমেজিং,থ্রিডি বায়োপ্রিন্টিং,ফেসিয়াল স্ক্যান এগুলোর ওপর পড়াশোনার পাশাপাশি হাতের কাজ শেখানো হয়।
মাস্টার্স ইন ইমপ্ল্যান্টোলোজী তিন বছরের একটা প্রোগ্রাম যেখানে দুই বছর মাহিদলে থেকে পরে ফাইনাল ইয়ারের সময় জার্মানিতে নিয়ে যাওয়া হয় ক্লিনিক্যাল কাজগুলো শেখানোর জন্য। এই প্রোগ্রামটি কিছুটা ব্যয়বহুল হওয়ায় কারো পক্ষে যদি ইমপ্ল্যান্টোলোজীর উপর মাস্টার্স করা সম্ভব না হয় তাহলে সে এন্ডোডোনটিক্স এর ওপর মাস্টার্স করতে এসে ইমপ্ল্যান্ট বেসড কোন থিসিস ওয়ার্ক করতে পারবে। এতে এন্ডোডোনটিক্স এবং ইমপ্ল্যান্টের একটা কম্বাইন্ড কোর্স করা হয়ে যাবে।
৮. মাহিদল ইউনিভার্সিটিতে কোর্স খরচের ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে আমরা জানতে চাই আপনার কাছ থেকে।
মেজর সাবজেক্টগুলোর মধ্যে ক্লিনিক্যাল কাজের পাশাপাশি থিসিস ওয়ার্ক এবং ইন্টারভেনশনাল কাজগুলো যেহেতু এখানে বিস্তৃতভাবে করানো হয় তাই কোর্সের খরচ গড়ে ১৮ থেকে ২৫ লাখ টাকা লেগে যায়। ইমপ্লান্টওলজি কোর্স কিছুটা এক্সপেন্সিভ হওয়ায় মোট ৪০ লাখ টাকা খরচ পরে। ওরাল বায়োলজির উপর কোর্স খরচ হলো ১৭-১৮ লাখ টাকা।
আর শর্ট কোর্স বলতে অবজারভেশনাল কোর্স বোঝায় যেখানে সরাসরি রোগীর উপর ক্লিনিক্যাল কাজ করতে দেয়া হয় না এবং কোর্সের খরচও ৬-৭ লাখ টাকা লেগে যায়। কোর্সের সময়কাল হিসেব করলে দেখা যায় যেহেতু টাকার পরিমানটা বেশি, তাই আমাদের বাংলাদেশিদের জন্য এখানে শর্ট কোর্স করা খুব একটা লাভজনক বলে আমি মনে করিনা। আর স্টুডেন্টসদের জন্য থাকা খাওয়া এবং অন্যান্য খরচ সহ প্রতিমাসে মোট ১৮০০০-২০০০০ থাই বাতের মতো খরচ হবে।
৯. থাইল্যান্ডের পোস্টগ্র্যাজুয়েশন অথবা পিএইচডি শেষ করে থাইল্যান্ড/বাংলাদেশ /অনান্য দেশে কাজের সুযোগ কেমন?
থাইল্যান্ডের পোস্টগ্রাজুয়েশন শেষ করে যেকোন জায়গায় অ্যাপ্লাই করা যাবে। কারণ এখানকার সার্টিফিকেটকে যথেষ্ট প্রাধান্য দেয়া হয়। থাইল্যান্ডে ক্লিনিক্যাল প্রাক্টিস করার লাইসেন্স সাধারণত দেয়া হয় না কারণ লাইসেন্সের পরীক্ষা দিতে হলে থাই ভাষাটাকে ওদের স্বরভঙ্গিতে ভালো করে রপ্ত করতে হবে। যেটা বহিরাগতদের পক্ষে সম্ভবপর হয় না। কিন্তু এখানে একাডেমিক ফ্যাকাল্টিতে লেকচারার, রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট হিসেবে যোগদান করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ও কাজের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
১০. শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ করে ক্লিনিক্যাল ভিত্তিক পড়ালেখায় উন্নতর প্রযুক্তি ব্যবহারে থাইল্যান্ড কতটুকু এগিয়ে?
থাইল্যান্ডে শুধুমাত্র চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নয় যেকোনো ক্ষেত্রে তারা সর্বোচ্চ গুণগত মান বজায় রাখে। এখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে হাইলি রিসোর্সফুল অ্যাডভান্স টেকনোলজি ব্যবহার সর্বত্র বিদ্যমান। অর্থগনেথিক সার্জারিতে উন্নত প্রযুক্তির সফটওয়্যার, থ্রিডি বায়োপ্রিন্টিং, ফেসিয়াল স্ক্যান , যথেষ্ট উন্নতর টেকনোলজির সাপোর্টের ব্যবহার বলাই বাহুল্য। আমাদের মাহিদলে এক্সপেরিয়েন্সড স্পেশালিস্ট, অ্যাডভান্সড টেকনোলজি, হাইলি প্রফেশনাল অ্যাটিটিউড সবকিছু মিলে একটা প্যাকেজের সুবিধা পাওয়া যাবে।
১১. থাইল্যান্ডে পারমানেন্ট রেসিডেন্সি পাওয়ার কি কোনো সুযোগ আছে?
থাইল্যান্ডের পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাওয়া কিছুটা কমপ্লিকেটেড কারণ এখানে তিন বছর একনাগাড়ে থাকা লাগবে, সাথে থাই ভাষা শিখতে হবে এবং পরিবারের প্রতি জনের জন্য টাকার একটা অ্যামাউন্টও দেয়া লাগবে।
ফ্রান্সে ডেন্টিস্ট্রির উচ্চশিক্ষা : যেসব তথ্য জেনে নেয়া প্রয়োজন
১২. বাংলাদেশের ডেন্টিস্ট্রি এবং ডেন্টাল পড়ালেখায় কোন কোন দিকগুলোতে নীতিনির্ধারকদের বিশেষ দৃষ্টি দেয়া জরুরী বলে আপনি মনে করেন৷
আমি বলব
- ডেন্টিস্ট্রি শিক্ষাব্যবস্থার মৌলিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হচ্ছে কিনা এই বিষয়টা খতিয়ে দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে দক্ষ নীতিনির্ধারকদের শিক্ষাব্যবস্থার নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান যাতে বজায় থাকে এই বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে।
- যে যেই ফিল্ডে স্পেশালাইজড সে যেন সংশ্লিষ্ট ফিল্ডে তার জ্ঞান বাস্তবায়ন করে। আমি যেমন ওএমএসে স্পেশালাইজড। আমি সার্জারি ফিল্ডে আমার জ্ঞানটাকে ভালো করে কাজে লাগাতে পারবো, কনজারভেটিভ বা প্রস্থডোনটিকস ফিল্ডে নয়।
- আমাদের কিছু বাঙালীদের মধ্যে স্বজনপ্রীতি খুব জোরালোভাবে কাজ করে। নীতিনির্ধারকদের এই বিষয়টিতে একটু পর্যবেক্ষণ করে দেখা উচিত। নিজস্ব পেশায় সৎ থেকে যদি এগিয়ে যাওয়া যায় তাহলে দিন শেষে স্বজনপ্রীতির ট্যাগ লাগানোর কোন প্রয়োজন পড়ে না।
- আমাদের দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার কথা চিন্তা করে ডেন্টিস্ট্রি ফিল্ডে অনেক উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলেও যাতে বেসিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়। না হলে আমরা উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারব না।
- আমাদের দেশের অনেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ফিল্ডের শিক্ষকদের সাথে সম্পর্ক ভালো করে পাস করার টেনডেনসি দেখা যায়। একজন শিক্ষক যদি তার প্রফেশনাল অ্যাটিটিউড বজায় রাখে তাহলে এই সমস্যা গুলো দেখা যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।
- পড়াশোনা বা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতিবান্ধব দুর্নীতিকে প্রাধান্য দেয়ার পরিবর্তে যদি সঠিক জ্ঞান কে প্রাধান্য দেয়া হয় তাহলে হয়তো সবাইকে এক কাতারে সামিল করা যাবে।
১৩. দন্ত চিকিৎসার ব্যপারে বাংলাদেশের মানুষদের সচেতনতার প্রচুর ঘাটতি রয়েছে৷ এই অসচেতনতার কারণ কি বলে মনে হয়?
সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে আমাদের নীতিনির্ধারক এবং স্বাস্থ্যবিদগণদের এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসক থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যবিদগণ যদি কমিউনিটি বেসড স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টি এবং সাশ্রয়ী মূল্যে দন্ত চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এগিয়ে আসেন তাহলে হয়তো জনসাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।
১৪. আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে সার্জারি ফিল্ডে কাজ করতে যেয়ে মেয়েদের অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সেখানে স্বামী সন্তান থাকা সত্ত্বেও আপনি এই ফিল্ডে স্পেশালাইজড ডিগ্রি নিয়ে সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিবন্ধকতাগুলো কাটিয়ে উঠতে মেয়েদের কী করা উচিৎ বলে আপনি মনে করেন?
প্রথমেই আমি বলব প্রবল ইচ্ছাশক্তির কথা। প্রচন্ড ইচ্ছা শক্তি আমাকে সব সময় তাড়া করত। সবসময় মনে রাখতাম সামনে যতই প্রতিবন্ধকতা আসুক না কেন হাসি মুখে সব বাধা পেরোতে হবে। আজকালকার মেয়েদের মধ্যে ধৈর্যশক্তির খুব অভাব দেখা যায়। আমি নিজেও একজনের স্ত্রী এবং দুইটা ছেলের মা। নিজের পড়ালেখা এবং কাজের পাশাপাশি পরিবারকে সময় দেওয়া দিতে হয় আমার। আমি বলব কখনো হাল ছেড়ে দিবেনা। প্রতিকূল পরিবেশকে ধৈর্য ধরে অনুকূলে আনতে হবে। পারিবারিকভাবেও অনেক প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে। অর্ধৈয হয়ে হাল ছেড়ে দিয়ে আসলে কখনো সফলতা অর্জন করা যায় না। পরিবার যদি তোমার ইচ্ছাকে প্রাধান্য না দেয় তাহলে ধৈর্য ধরে পরিবারকে বোঝাতে হবে। দেখবে একটা সময় পর এসে ঠিকই তোমাকে বুঝবে।
১৫. সচেতনতা বৃদ্ধিতে মিডিয়ার ভুমিকা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ডেন্টিস্ট্রি ফিল্ডে নয় বরং সব ফিল্ডেই যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে মিডিয়া। মিডিয়ার মাধ্যমে স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টির সাথে সাথে স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ মানুষের কাছে সহজলভ্য উপায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে।
১৬. ডেন্টাল টাইমস নিয়ে আপনার মূল্যায়ন।
ডেন্টিস্ট্রি ফিল্ডের স্বাস্থ্যশিক্ষা ও চিকিৎসা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো তাদের নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে চমৎকার উপায়ে প্রকাশ করে যাচ্ছে ডেন্টাল টাইমস যা যথেষ্ট প্রশংসার দাবিদার।
তিন কথা
৩ জন ডেন্টিস্ট্রির বন্ধু যাদের সাথে যোগাযোগ নেই কিন্তু এখনো মিস করেন।
- ডাঃ শাফিন , নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে এমপিএইচ করে এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত আছেন।
- ডাঃ শম্পা, আর্মি মেডিকেল মেডিকেল কলেজের লেকচারার হিসেবে কর্মরত আছেন।
- ডাঃ নুসরাত কবির মিশুকা , জাপানের পিএইচডি করে ওখানে ফ্যাকাল্টি মেম্বার হিসেবে কর্মরত আছেন।
ডেন্টিস্ট্রিতে ৩ জন কিংবদন্তি ব্যক্তির কথা বলুন যারা আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছে।
অনেকেই আছেন যারা আমাকে সার্জারি পেশায় কাজ করতে অনুপ্রাণিত করেছেন। তবে প্রথমেই আমি বলব
- ডাঃ রাজন কর্মকার স্যারের কথা। স্যারের মারা গিয়েছেন দেড় বছর হল। বাংলাদেশ ডেন্টাল কলেজে ওএমএস এর ডিপার্টমেন্টাল হেড ছিলেন। স্যারের কাছেই আমার সার্জারি পেশায় হাতেখড়ি হয়েছিল।
- ওএমএসের লিভিং লিজেন্ড ডাঃ মতিউর রহমান মোল্লা স্যারের কথা।
- ডাঃ গোলাম মহিউদ্দিন স্যার । স্যারকে আমি যথেষ্ট সম্মান করি এবং আমি নিজেও অনেক অনুপ্রানিত হই স্যারের কাজ দেখে।
৩টি পয়েন্টে – বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে পোষ্টগ্র্যাজুয়েশনের ক্ষেত্রে কি কি বিশেষ সুবিধা রয়েছে?
- ক্লিনিক্যাল এবং গবেষণা দুটো ক্ষেত্রেই সমান তালে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ।
- দক্ষ স্পেশালিস্ট, হাইলি প্রফেশনাল অ্যাটিটিউড অ্যাডভান্সড টেকনোলজিকাল সাপোর্ট, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে পড়ালেখা করার সুযোগ।
- একাডেমিক এবং ক্লিনিক্যাল শিক্ষার পাশাপাশি সিপিআর, ফায়ার ফাইটিং, অ্যাডভান্সড ডিজিটাল লিটারেসি, এফেক্টিভ প্রেজেন্টেশন ইত্যাদি বিষয়ে সফট স্কিল ট্রেনিং পাওয়ার সুযোগ।
৩টি পয়েন্টে – পোস্টগ্র্যাজুয়েশনের জন্য বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের করণীয়।
- থার্ড এবং ফাইনাল ইয়ার থেকেই নিজের লক্ষ্যস্থির করতে হবে যে কোন ফিল্ডে স্পেশালাইজ ডিগ্রি অর্জন করতে চাই। ইন্টার্নশিপের সময়টাকে খুব ভালোভাবে কাজে লাগিয়ে ক্লিনিক্যাল কাজগুলো শিখতে হবে।
- চান্স পাওয়ার ক্ষেত্রে ফ্রেশ মাইন্ডে ধৈর্যসহকারে পড়ালেখা করতে হবে । একবার চান্স না পেলে ও দুই তিনবার অন্তত চেষ্টা করা উচিত। হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না।
- বাইরের দেশে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করতে চাইলে আগে লক্ষ্য স্থির করতে হবে যে কোন ফিল্ডে কাজ করতে চাই। তারপর সেই সংশ্লিষ্ট ফিল্ডে ভালো মানের পোস্টগ্রাজুয়েশন কোন দেশে করানো হয় সেটা খোঁজ নেওয়া উচিত। কোন শর্টকাট পন্থা অবলম্বন না করে একটু দেরি হলেও সঠিকভাবে খোঁজখবর নিয়ে যায় তারপর বাইরের জন্য এপ্লিকেশন করা উচিত।
ডাঃ সাজিদ হাসান
সবাইকে পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা। রোজা রাখা অবস্থায় কারো কারো ক্ষেত্রে দাঁতের চিকিৎসা করানো জরুরি হয়ে পড়তে পারে। রোজা রাখা অবস্থায় দাঁতের চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যান। আজকে রোজায় দাঁত ও মুখগহ্বর বিষয়ক কিছু প্রশ্নের উত্তর এবং কিছু পরামর্শ দেওয়ার জন্য এই লেখাটা ৷
আশা করি অনেকেই অনেকের উত্তর পেয়ে যাবেন এবং ধৈর্য সহকারে পুরা লেখাটা পড়বেন। চলুন শুরু করা যাক।
* প্রথমেই কয়েকটি প্রচলিত প্রশ্নের উত্তর দেই।
১. আমরা সাধারণত যারা দু’বেলা ব্রাশ করি সকালে এবং রাতে তারা এই রমজান মাসে কখন ব্রাশ করব কিংবা কতবার করব?
- অবশ্যই দু’বেলা ব্রাশ করবেন যেটা ইফতারের পর এবং সেহেরি করার পর করবেন। উপযুক্ত সময় এটাই।
২. আমরা কি এ সময় টুথপেস্ট এবং ব্রাশ ব্যবহার করব নাকি অন্য কিছু?
- অবশ্যই টুথপেষ্ট এবং টুথ ব্রাশ ব্যবহার করবেন এই দু’বেলা তথা ইফতারের পর এবং সেহেরীর পর ব্রাশ করার ক্ষেত্রে।
৩. তাহলে সকালে ঘুম থেকে উঠে কি আমরা ব্রাশ করতে পারব! কিংবা টুথ পেস্ট ব্যবহার করা যাবে?
- সকালে আপনি ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করতে পারেন । তবে সেটা টুথপেষ্ট দিয়ে না করাটা ভালো। কারণ টুথপেষ্ট এর ফ্লেভার কিংবা স্বাদ অথবা যে ফেনা টা উৎপন্ন হয় সটা অনেকসময় অনিচ্ছা স্বত্তেও গিলে ফেলে আপনার রোজায় ক্ষতি হতে পারে। তাই যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন টুথপেষ্ট ব্যবহার না করতে।
যদি সেহেরীর পর আপনি টুথ পেস্ট ব্যবহার করে সঠিক পদ্ধতিতে ব্রাশ করেন, তবে সেক্ষেত্রে আপনার সকালে পুনরায় ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করার দরকার পরে না। কারণ সঠিক নিয়মে খাবারের পর ব্রাশ করার কারণে আপনার দাঁত ও মুখগহ্বরে কোনো ধরণের খাদ্যকণার উপস্থিতি থাকে না।
তারপরও যদি মনে হয় তাহলে অবশ্যই “ব্রাশ পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেটা ব্যবহার করতে পারেন” এবং ফ্লসিং তথা ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করতে পারেন।
৪. রোজা রাখা অবস্থায় মুখে দুর্গন্ধ হয়। কি করা যেতে পারে?
- মুখে দুর্গন্ধ বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সাধারনত মুখে লালা থাকলে মুখে থাকা খাদ্যকণা গুলো এক জায়গায় জমে থাকতে পারে না। ফলে দুর্গন্ধও অপেক্ষাকৃত কম হয়। কিন্তু অপরিষ্কার জিহবা কিংবা দাঁতের মাঝে আটকে থাকা খাদ্যকণা কিংবা সারাদিন মুখে পানি না দেওয়ার ফলে সৃষ্ট ড্রাই মাউথ কিংবা লালা কম নিঃসরণ হওয়ার কারনে মুখ শুকনো থাকে। এতে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। এছাড়াও মাড়ির ইনফেকশন, ডেন্টাল ক্যারিজ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণেও হতে পারে।
সেক্ষেত্রে আমরা যেটা পরামর্শ দেই সেটা হল দাঁতের চিকিৎসার পাশাপাশি জিহবা পরিষ্কারের জন্য আধুনিক টাং ক্লিনার ব্রাশ ব্যবহার করে জিহবা পরিষ্কার রাখা,ব্রাশ করার পর কিংবা খাবার শেষে ভালভাবে মাউথওয়াশ ব্যবহার করা। এছাড়া ফ্লসিং করে দাঁতে আটকে থাকা খাদ্য পরিষ্কার করা। মূলত, এ সকল দিকগুলো খেয়াল রাখলে দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৫. তাহলে দাঁত ও মাড়ি সুরক্ষায় কি করা যেতে পারে ?
- দু’বেলা ( ইফতারের পর এবং সেহরীর পর ) সঠিক নিয়মে টুথপেষ্ট এবং টুথব্রাশ ব্যবহার করবেন। পাশাপাশি মাউথওয়াস এবং ডেন্টাল ফ্লস দিয়ে ফ্লসিং করবেন।
ঘুম থেকে সকালে উঠে প্রয়োজন বোধে পানি দিয়ে ভালোমত কুলকুচি করতে পারেন। এবং ভেজা ব্রাশও ব্যবহার করতে পারেন।
এর পাশাপাশি অনেকে ” মিসওয়াক ব্যবহার করতে চান”৷ হ্যাঁ, সেটাও করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করে মিসওয়াক করবেন৷ যেন জোরে জোরে মিসওয়াক করে মাড়ি কিংবা দাঁতের ক্ষতি না করে বসেন সেদিকে খেয়াল রাখবেন। আর অবশ্যই মিসওয়াক নিম গাছ কিংবা এ জাতীয় নরম আঁশযুক্ত গাছের ডাল হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
৬. ওষুধ সেবনে কি ধরণের পরিবর্তন আনতে পারি আমরা?
- যদি আপনি কোনো এন্টিবায়োটিক খেতে থাকেন এবং তার ডোজ যদি হয় ১২ ঘন্টা পরপর তবে অবশ্যই আপনি সেটা ইফতার এবং সেহরী টাইমে খেতে পারেন। আপনার ডোজ কভার হয়ে যাবে আশা করি৷
যদি ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করেন সেক্ষেত্রেও একইভাবে ইফতার এবং সেহরী সময় খেতে পারেন।
৭. রোজায় খাবারের অভ্যাস পরিবর্তনে কি দাঁত ও মুখগহ্বরের সুরক্ষায় সাহায্য করতে পারে? কিংবা খাদ্য তালিকায় কি রাখা উচিত?
- হ্যাঁ অবশ্যই খাবারের অভ্যাস পরিবর্তনে আপনার মুখ ও দাঁতকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। যেমন খাদ্য তালিকায় প্রচুর পরিমাণে পানিজাতীয় খাবার তথা ফল কিংবা শরীরে পানির ঘাটতি মেটায় এমন খাবার রাখা উচিত।
মিষ্টি, জাংক ফুড এবং স্টিকি তথা দাঁতের সাথে আটকে থাকে এমন জাতীয় খাবার যতটা পারা যায় কম খাওয়া এবং প্রচুর পানি পান করা উচিত।
৮. রোজা থাকা অবস্থায় দাঁতের চিকিৎসা করা সম্ভব কিনা ? কিংবা সম্ভব হলে সেটা কিভাবে ?
- এই প্রশ্নটার উত্তর একটু বিষদভাবে দেওয়া প্রয়োজন। কারন আমরা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হই আমাদের অজ্ঞতার কারণে। রোজা রাখা অবস্থায় একমাত্র সার্জিকাল কোনো ট্রিটমেন্ট ব্যতিত সকল ধরণের ট্রিটমেন্ট আপনি করতে পারবেন।
এতে করে রোজার ক্ষতি হবে না। তবে সেক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা আপনাকে এবং ডাক্তার উভয়কেই নিতে হবে।
আপনি যে কোনো ধরণের ফিলিং তথা দাঁতের ক্ষয় অর্থাৎ ক্যাভিটির ট্রিটমেন্ট করাতে পারবেন। আপনি দাঁতের স্কেলিং জাতীয় চিকিৎসা তথা দাঁতের জমে থাকা পাথর কিংবা খাদ্যকণিকা পরিষ্কার করতে পারবেন। তবে যেহেতু এসব ট্রিটমেন্ট এর ক্ষেত্রে কিছুটা ব্লিডিং হতে পারে তাই খেয়াল রাখতে হবে রক্ত যেনো লালার সাথে মিশে গলায় প্রবেশ না করে।
অন্যদিকে কিছু ইসলামিক স্কলারদের মতে “রক্তপাত” মানেই রোজা ভেঙে যাওয়া তাই যথাসম্ভব চেষ্টা করা একটুও রক্তপাত না হয় এমন চিকিৎসা গুলোই নেওয়ার।
এই চিকিৎসার ক্ষেত্রে ডাক্তার এর সতর্কতা খুব বেশি জরুরি। এই লালা এবং পানি মুখগহ্বর থেকে ভালোমত টেনে নিতে পারে সেদিকে অবশ্যই ডাক্তারকে খেয়াল রাখতে হবে। রোজা রাখা অবস্থায় আপনি রুট ক্যানাল এর মত ট্রিটমেন্টও করতে পারবেন। তবে অবশ্যই সতকর্তা জরুরী।
আর হ্যাঁ আরেকটি প্রশ্ন সকলের মাথাতেই আসতে পারে এসকল চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমরা যে “লোকাল এনেস্থিসিয়া তথা চেতনানাশক ব্যবহার করি” তা করা যাবে কিনা!
অবশ্যই করা যাবে। কারণ ইসলামিক চিন্তাবিদদের গবেষণায় দেখা গেছে এসকল এনেস্থিসিয়ায় কোনোধরণের পুষ্টি সরবরাহ করার মত উপাদান নেই। আর তাই লোকাল এনেস্থিসিয়া ব্যবহারে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এবং এটা রোজায় কোনো ক্ষতি করেনা।
৯. ডাক্তার রা অনেকেই এ সময় সাজেশন দেন “হালকা কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করার বা গার্গেল করার। এক্ষেত্রে আমরা দিনের বেলায় এটা কিভাবে করতে পারি অথবা রোজা রাখা অবস্থায় ঠিক হবে কিনা
- আমরা অনেকেই জানি ” কসমেটিক মাউথওয়াস” হিসাবে হালকা কুসুম গরম পানিতে লবণ পানিতে কুলকুচি করা মুখগহ্বরের উপকার এবং ব্যথানাশক হিসাবে বহুলপ্রচলিত। একটা কথাই এ ব্যাপারে বলার আছে সেটা হল “নামাজ পড়তে চাইলে ওযু করার যে বিধান সেখানে মুখে পানি দেওয়ার নিয়ম আছে”। আর তাই মুখে এ ধরণের গার্গেল বা কুলকুচি করায় কোনো সমস্যা নেই। আর তাই আপনারা এ ধরণের মাউথওয়াস চাইলেই রোজা রেখে করতে পারেন। তবে সতর্ক থাকবেন যেনো গলা দিয়ে পানি প্রবেশ না করে।
আর এর বাইরে একটা প্রশ্ন এবং শেষ প্রশ্নঃ-
১০. আমরা বারবার থুথু ফেলে রোজার দিন মুখ শুষ্ক হয়ে যাওয়ার কারণে অস্বস্তিতে ভুগি এ বিষয়ে পরামর্শ কি?
- সবার উদ্দেশ্যে একটাই কথা বলব ” মুখে থুথু আসা একটা ন্যাচারাল ফিজিওলজি অর্থাৎ এটাই স্বাভাবিক”। আপনি চাইলেই এটা থামাতে বা বন্ধ করতে পারবেন না। বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলারদের মতে যেটা ন্যাচারাল বা স্বাভাবিক নিয়ম সেটাকে অস্বাভাবিক করে ফেলার কোনো নিয়ম বা বিধি নিষেধ নেই ইসলামে। আপনারা যদি সারাদিন থুথু ফেলতে ব্যস্ত থাকেন তাহলে অবশ্যই নামাজের সময়ও আপনার কনসেনট্রেশান বা মনোযোগ সেদিকেই থাকবে। আর তখনও আপনি নামাজে মনোযোগ দিতে পারবেন না। মানুষের স্যালাইভারি গ্লান্ড থেকে কয়েক লিটার স্যালাইভা বা থুথু উৎপন্ন হয় প্রতিদিন আর তাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত না করাটা হল যৌক্তিক।আর মুখ গহ্বর স্বাভাবিক থাকলে আপনার অস্বস্তি হওয়ার সুযোগ নেই।
এ থেকে আমরা বুঝতেই পারি রোজার মাসে রোজা থাকা অবস্থায় সার্জারী ব্যতিত যেকোনো চিকিৎসা সম্ভব। আর তাই দাঁতের ব্যথায় কষ্ট পেয়ে কিংবা রোজায় ব্যাঘাত ঘটে এমন পরিস্থিতিতে না যেয়ে নিকটস্থ ” BDS ডিগ্রি ধারী” ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। দাঁত ও মুখগহ্বরের যত্ন নিন। ৬ মাস পরপর নিকটস্থ BDS ডিগ্রি ধারী ডাঃ এর পরামর্শ নিন।
কারোনাভাইরাসের তাণ্ডব চলছে বিশ্বব্যাপী। এদিকে, জ্বর বা শ্বাসকষ্ট গোপন করছেন অনেকেই। আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টাইন এড়াতে তারা এই কাজ করছেন। এতে তারা নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনছেন।
শুধু তাই-ই নয়, একজন এভাবে গোপন করতে গিয়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও সমস্যায় ফেলছেন। এভাবেই কার্যত বিপদ বাড়ছে গোটা সমাজে। সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতিতে এমনটা বিশেষজ্ঞদের মতামত।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
কলকাতার উত্তর শহরতলির সল্টলেক বা দমদমে যে ক’জন আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে, তাঁদের অনেকেই প্রাথমিকভাবে জ্বরের উপসর্গ চেপে গিয়েছিলেন। চিকিৎসককে বলেননি যে তাঁর জ্বর এসেছিল বা শ্বাসকষ্ট ছিল। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতির ফলে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তখন অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। এই তিনজনই জ্বর কমানোর ওষুধ খেয়ে গিয়েছিলেন হাসপাতালে।হাসপাতালে ভর্তি হতে দেরিও করেছেন। একই ঘটনা দেখা গিয়েছে দমদমেও।
শনিবার দমদমের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে করোনা মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছেন পরেশ ঘোষ। তিনি শরীরে জ্বরের লক্ষ্মণ টের পাওয়া মাত্র ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। চিকিৎসার পর এখন তিনি সুস্থ।
ওই হাসপাতালের সিইও নিবেদিতা চট্টোপাধ্যায় জ্বর গোপন করার প্রবণতা সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছেন, অনেকে ওষুধ খেয়ে জ্বর গোপন করে ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের জেনারেল বেডে রাখা হচ্ছে। তারপর ওষুধের প্রভাব কেটে যাওয়ার ১২ ঘন্টা পর শরীরের তাপমাত্রা দেখা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা করোনা টেস্টের জন্য জন্য নমুনা নিচ্ছি এবং তাদের আইসোলেশনও পাঠাচ্ছি। কিন্তু ততক্ষণে বিপদ যা ঘটার ঘটে গিয়েছে। জেনারেল বেডে অন্য রোগীর সংস্পর্শে চলে আসছেন তিনি।
এই প্রবণতা আটকাতে মানুষকে সতর্ক করে নিবেদিতা জানিয়েছেন, জ্বর বা অন্যান্য উপসর্গ গোপন করবেন না। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা করালে করোনা দূর করতে সময় লাগবে না।
তিনি বলেছেন, জ্বর বা শ্বাসকষ্টজনিত উপসর্গ দেখা দিলে দেরি করবেন না। তাতে নিজেরও ক্ষতি, সমাজেরও ক্ষতি।
পরামর্শ
করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় চিকিৎসক এবং ডেন্টিস্টদের সতর্কতা
Published
3 years agoon
March 18, 2020বর্তমানে বিশ্বের চলমান আতঙ্ক করোনা ভাইরাস। যার উৎপত্তি ২০২০ সালের জানুয়ারির শুরুর দিকে চীনের উহান শহর থেকে। কোভিড-১৯ ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব প্রায় ১৬৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং মহামারী আকার ধারণ করেছে।
সর্বশেষ (১৭/৩/২০২০) পাওয়া সূত্রমতে প্রায় ২ লক্ষ লোক এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে, যেখানে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। গত কয়েকদিনেই আমাদের দেশে প্রায় ১৪ জন আক্রান্তকে সনাক্ত করা হয়েছে, মৃত্যুবরণ করেছে ১ জন , আর কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে শতাধিকেরও বেশী প্রবাসীকে।
কিভাবে ছড়ায় ?
আক্রান্ত ব্যাক্তির থুথু, হাঁচি, কাশি, স্পর্শ, চোখ, নাক, প্রাণী (বাদুড়, কুকুর) ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাই এই রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসক , নার্স, ওয়ার্ডবয়, স্বাস্থ্য কর্মীরা খুব সহজেই আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এরমধ্যে ডেন্টিস্টদের ঝুঁকি রয়েছে সর্বাধিক।
বিভিন্ন দেশ এবং স্বাস্থ্যসংস্থা থেকে যেসব গাইডলাইন দেয়া হয়েছে তার আলোকেই নিম্নে কিছু দিক উল্লেখ করা হলো-
★ হাসপাতাল, ক্লিনিক, ওয়ার্ড বা চেম্বারে রোগী আসা মাত্রই সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার (৭০% এলকোহল যুক্ত ডিসইনফেকটেন্ট) দিয়ে ভালভাবে নির্দিষ্ট নিয়মে সর্বনিম্ন ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধৌত করে টিস্যু পেপার দিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে।
★ যেকোনো ময়লা প্রথমে ব্যাগে বা পলিথিনে ঢুকিয়ে,পায়ে চাপ দিয়ে খোলা যায় এই রকম বীনে ফেলতে হবে,যাতে বীনের সরাসরি সংস্পর্শ এড়ানো যায়।
★ গত ২দিন ধরে রোগীর জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা, কাশি, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, বিদেশ ভ্রমন বা বিদেশ আগত অথবা কোনো রোগীর সংস্পর্শ ছিল কিনা, ভালভাবে তার হিস্টরি নিতে হবে। প্রয়োজনে থার্মাল স্ক্যানার বা থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা দেখতে হবে।
★ যদি এসব লক্ষণগুলো মিলে তাহলে সরকার নির্ধারিত হাসপাতালে রেফার করতে হবে কিংবা icddr,b এর নিদিষ্ট নাম্বারে অবশ্যই যোগাযোগ করতে হবে।
★ বিদেশ থেকে আগত এসিম্পটোমেটিক লোকজনকে ১৪ দিন বা ৩৭ দিন নিজ ঘরে কোয়ারান্টাইনে থাকতে হবে।
চিকিৎসার দেয়ার ক্ষেত্রে সাধারন রোগীদের জন্য যেসব বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা যেতে পারে –
- রোগীর হাত ধৌত করে ডিসপজেবল গাউন,হ্যাড ক্যাপ, গগলস, গ্লাভস পরিধান করবে।
- চিকিৎসা শুরুর পূর্বে ১% হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এবং ০.২% পভিডোন আয়োডন পানির সাথে মিশিয়ে ২-৩বার ১মিনিট করে কুলি করতে হবে।
- রাবার ড্যাম সিস্টেম থাকলে তা ব্যবহার করতে হবে, ফলে কন্টামিনেশন মিনিমাম হবে।
- সম্ভবপর হলে এন্টিরিট্রাকশন হ্যান্ডপিস ব্যবহার করবে।
- চিকিৎসক প্রথমে হাত ভালোভাবে ধুয়ে বাইরের দিকে ধরে গ্লাভস, মাস্ক, গাউন/এপ্রোন, হ্যাড ক্যাপ, গগলস, জুতো পরিধান করবে। সম্ভব হলে ফেইস শিল্ড ব্যবহার করবে। কাজ শেষে গ্লাভসযুক্ত হাত অপরটির উপরের অংশ টাচ করে খুলবে, দ্বিতীয়টি খোলার সময় আঙুলে গ্লাভসের ভিতরের অংশ ধরে খুলবে। গাউন/এপ্রোন খোলার সময় ভিতরের অংশ ধরে খুলবে, পরে উল্টিয়ে মোচড়ে ফেলবে। মাস্কের ক্ষেত্রে N95 বা ৩স্তরযুক্ত সার্জিকেল মাস্ক পড়তে হবে। মাস্ক খোলার সময় পাশের সুতা ধরে খুলতে হবে।
- অপরিষ্কার হাতে কখনো নাক, চোখ,কোন যন্ত্রপাতি ধরা যাবে না।
- নার্স, ওয়ার্ড বয়, এসিস্ট্যান্টদের ও এধরনের PPE প্রস্তুতি নেয়া উচিত, উপায় না থাকলে মাস্ক, গ্লাভস অবশ্যই পড়তে হবে এবং হাত অবশ্যই ধৌত করতে হবে।
- এক্সট্রা ওরাল এক্স রে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে।
- কাজ করার সময় বা রোগীর সংস্পর্শের পূর্বে এবং পরে অবশ্যই হ্যান্ড ওয়াশ করতে হবে।
- ওয়ার্ড বা চেম্বারে কাজের শুরুতে এবং পরে অবশ্যই ডিসইনফেকটেন্ট দিয়ে রুম এবং জিনিষপত্র পরিষ্কার করতে হবে।
- ব্যবহৃত জিনিসপত্র অবশ্যই অটোক্লোভ করতে হবে কিংবা গ্লুটাল্ডিহাইড দিয়ে জীবাণুমক্ত করে নিতে হবে।
- দাঁত তোলার পর এবজরবেবল সুচার ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করতে হবে। (আইবোপ্রফেন এবং কর্টোসোন ঔষধ দেওয়া যাবেনা)
- হাঁচি, কাশি বা থুথু ফেলার সময় টিস্যুতে মুড়িয়ে বীনে ফেলতে হবে।
- রুমে সূর্যের আলো এবং বাতাস যাতায়াতের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে হবে।
- হাঁচি দেওয়ার সময় সামনে রুমাল/টিস্যু ধরতে হবে, যদি না থাকে,তাহলে হাতের কনুই এর ভিতরের অংশ দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলতে হবে। সামনে লোকজন থাকলে অপরদিকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।
- বর্জ্য পদার্থগুলো সিটি কর্পোরেশন বা হাসপাতালের নির্ধারিত স্থানে ফেলা।
- কুকুর,বাদুর ইত্যাদি প্রাণী স্পর্শ না করা।
- বাইরে থেকে বাসায় প্রবেশ করে প্রথমে ভালভাবে হ্যান্ডওয়াশ বা সাবান দিয়ে হাত রাব করে বা গোসল করে পরিবার পরিজনদের সাথে সাক্ষাত করতে হবে।
- জনসমাবেশপূর্ণ স্থান পরিহার করতে হবে।
- বাহিরের খাবার খাওয়া যাবেনা।
- বেশি বেশি পানি এবং ফলমূল খেতে হবে।
আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এবং মধ্যম আয়ের দেশে এসব প্রটোকোল সম্পূর্ণভাবে মেনে চলা সবসময় সম্ভব নয় তাই কমপক্ষে মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটেশন এবং স্টেরিলাইজেশন অবশ্যই করতে হবে।আমরা সচেতন না হলে অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশেও এই প্রাদুর্ভাব ঠেকানো সম্ভব নয়।
লেখক
ডাঃ মুহাম্মদ শোয়াইবুল ইসলাম অভি
গ্রন্থাগার ও প্রকাশনা বিষয়ক সহ-সম্পাদক, বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি, চট্রগ্রাম জেলা। সভাপতি, ডেন্টাল টাইমস চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজ শাখা।
জনস্বাস্থ্য ডেন্টিস্ট্রি বিভাগে পদসৃজন -(নিপসম)
অ্যান্টিবায়োটিকের মোড়ক হবে লাল, যথেচ্ছ ব্যবহার রোধে হচ্ছে আইন
দাউদকান্দিতে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকের রমরমা বাণিজ্য
৭ ছাত্র নিরুদ্দেশ: চিকিৎসক শাকিরের সহযোগী ভিলার স্বীকারোক্তি
চিকিৎসককে ছুরিকাঘাতের হুমকি দিয়ে ডেন্টাল চেম্বারে ছাত্রলীগ নেতার চাঁদাবাজি!
ডা: মোত্তাকিন আহমেদ স্মরণে বিএসপিডি’র দোয়া মাহফিল
চিকিৎসকদের জন্য লিডারশীপ এক্সেলেন্সি শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
স্বাস্থ্য খাতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব
সংস্থা বলছে জঙ্গি – পরিবারের দাবি ডাঃ শাকির নির্দোষ
দেশে রেকর্ড সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত
প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন কার্যক্রম কেউ ঠেকাতে পারবে না – স্বাস্থ্যমন্ত্রী
বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
ডেন্টাল সার্জন অবসরে, কর্তৃপক্ষের সম্মতিতে চিকিৎসা দিচ্ছে টেকনিশিয়ান
সিআইডি পরিচয়ে ‘চিকিৎসক’ তুলে নেওয়ার অভিযোগ
ওষুধের দাম বাড়ায় বিপাকে সাধারণ মানুষ
দাঁতের চিকিৎসার সময় যে তথ্যগুলো গোপন করবেন না!
হাসপাতালের ল্যাবে ইলিশ মাছ, সিলগালা করে দিলেন ম্যাজিস্ট্রেট
বাইরের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত মাস্টার্সে সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবছে ঢাবি
রংপুর মেডিকেলের ‘অসুখ’ সারবে কে?
কখনোই নিবন্ধন করেনি দেশের ১৪ শতাংশ হাসপাতাল: আইসিডিডিআর’বি
সম-সাময়িক
-
Campus News2 months ago
রংপুর মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল ইউনিটের দশ বছর পূর্তি উদযাপিত
-
সংগঠন2 months ago
বিএফডিএস’র আয়োজনে ডেন্টিস্টদের পদ্মা সেতু ভ্রমণ
-
স্বাস্থ্য প্রশাসন1 month ago
ঝিনাইদহে ১০ ডেন্টাল ও শেরপুরে ৭ ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ঘোষণা
-
সংগঠন3 weeks ago
চিকিৎসকদের জন্য লিডারশীপ এক্সেলেন্সি শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত