পরীক্ষা বাতিলসহ সেশনজটের প্রতিবাদে আন্দোলন করেছেন সাধারণ মেডিকেল এবং ডেন্টাল শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর মহাখালীতে কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনের রাস্তা, আমতলী মোড় অবরোধ করেন। মেডিকেলের ১ম, ২য় ও ৩য় প্রফেশনাল পরীক্ষার শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পেশাগত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বিশ্বব্যাপী যখন করোনার সেকেন্ড ওয়েভ (দ্বিতীয় ঢেউ) চলছে তখন পরীক্ষায় বসলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুঝুঁকিও তৈরি হবে। এ কারণে মেডিকেল শিক্ষার্থীরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে রাজি নন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করলেও তারা পুলিশের বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। তবুও যথাযথ কর্তৃপক্ষ হতে দাবি আদায়ের লিখিত আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত তারা এই কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল শিক্ষা বিভাগের পরিচালক জানান, “ এই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে আগামী সপ্তাহের মধ্যে জানিয়ে দেয়া হবে ।”
রাজধানী ছাড়াও টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এই আন্দোলন কর্মসূচি পালন হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই চর দফা দাবীতে গত ১ নভেম্বর রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা। তাদের চারটি দাবী গুলো হলো:
- করোনাকালীন সময়ে ঝুঁকি নিয়ে সেকেন্ড ওয়েভ এর মহামারীর মধ্যে প্রফ নয়।
- সেশনজট নিরসন করে যথা সময়ে কোর্স সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
- প্রাইভেট মেডিকেল কলেজগুলোয় করোনায় কার্যক্রম বন্ধ থাকাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৬০ মাসের অতিরিক্ত বেতন নেওয়া যাবে না।
- করোনাকালীন সময়ে আমরা শিক্ষার্থীরা কোনভাবেই স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিতে রাজি নই। কোন শিক্ষার্থী প্রফ দিতে এসে করোনায় আক্রান্ত হলে এর দায়ভার কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে।
আন্দোলনে অংশ নেয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া সেকেন্ড ওয়েভের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় মেডিকেলের পেশাগত পরীক্ষা ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, পরীক্ষা দেয়ার আগে আবাসিক হলগুলোতে এক মাস অবস্থান করার বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
তারা আরও বলেন, প্রতিটি হলে একটি রুমে তিন-চারজন করে শিক্ষার্থী থাকেন। এ অবস্থায় তারা কেউ আক্রান্ত হলে এর দায়ভার কর্তৃপক্ষ নেবে না। কেউ আক্রান্ত হলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। ফলে শিক্ষার্থীরা ছয় মাস পিছিয়ে পড়বে। তারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরীক্ষা গ্রহণের জন্য দাবি জানান।
বেসরকারি মেডিকেলের একজন শিক্ষার্থী জানান, গত সাত মাসে ক্লাস বন্ধ থাকার পরও স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরীক্ষা গ্রহণের নির্দেশের পর প্রতিটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন-ভাতা পরিশোধের নোটিশ দেয়া হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) শর্তানুসারে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নকালে ৬০ মাসের বেতন পরিশোধ করতে হবে। সেক্ষেত্রে করোনা মহামারির কারণে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকার পরও বেতন আদায় এবং পরে অতিরিক্ত ক্লাস করানো হলে সেজন্য টাকা আদায় করবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। একদিকে সেশনজট অন্যদিকে অতিরিক্ত বেতন পরিশোধ, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি-এসব কারণে পরীক্ষা দিতে চান না তারা।