বর্তমানে বিশ্বের চলমান আতঙ্ক করোনা ভাইরাস। যার উৎপত্তি ২০২০ সালের জানুয়ারির শুরুর দিকে চীনের উহান শহর থেকে। কোভিড-১৯ ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব প্রায় ১৬৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং মহামারী আকার ধারণ করেছে।
সর্বশেষ পাওয়া সূত্রমতে প্রায় ২ লক্ষ লোক এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে, যেখানে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় দশ হাজার। গত কয়েকদিনেই আমাদের দেশে প্রায় ২০ জন আক্রান্তকে সনাক্ত করা হয়েছে, মৃত্যুবরণ করেছে ১ জন , আর কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে হাজারেরও বেশী প্রবাসীকে, সুস্থ হয়েছেন ৩ জন।
করোনা ভাইরাস নিয়ে আমাদের এখনো সাধারণ কিছু বিষয়ে সঠিক ধারণা অভাব দেখা যাচ্ছে। আমরা আতঙ্কিত না হয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকেই করোনা ভাইরাসের মোকাবেলা আমরা নিজেই করতে পারি। যার জন্য প্রয়োজন সঠিক নিয়ম অনুসরণ করা।আজকে করোনা ভাইরাস এবং আমাদের যে সকল সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী তা নিয়ে কথা বলবো –
★ করোনা ভাইরাস কি?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের নিচে এই ভাইরাস ফেললে মনে হয় এরা মাথায় মুকুট পরে আছে। ল্যাটিন ভাষায় একে বলে ‘করোনাম’ (Coronam)। যে খোঁচাগুলি দেখা যায় সেগুলি আসলে স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিন (spike glycoproteins)। এদের মূল কাজ হল মানুষের শরীরে বন্ধু প্রোটিনকে খুঁজে নেওয়া। বাহক কোষের প্রোটিনের সঙ্গে জুটি বেঁধে এরা কোষের মধ্যে ঢুকতে পারে। SARS-CoV-2: এই ভাইরাসই করোনা ভাইরাস নামে পরিচিত। করোনার CO, ভাইরাসের VI এবং ডিজিসের D নিয়ে হয়েছে COVID-19।
★ করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি কোথা থেকে?
২০১৯ সালে ভাইরাসটি প্রথম ধরা পড়ায় নাম দেয়া হয়েছে COVID 19। এটি প্রথম চিনের উহানে প্রদেশে আবির্ভূত হয়।
★ করোনা ভাইরাসের লক্ষন ও উপসর্গ কি কি?
রেসপিরেটরি লক্ষণ ছাড়াও জ্বর, কাশি, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত প্রধান লক্ষণ। এটি ফুসফুসে আক্রমণ করে। সাধারণত শুষ্ক কাশি ও জ্বরের মাধ্যমেই শুরু হয় উপসর্গ দেখা দেয়, পরে শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত রোগের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে গড়ে পাঁচদিন সময় নেয়। শুরুর দিকের উপসর্গ সাধারণ সর্দিজ্বর এবং ফ্লু’য়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্থ হওয়া স্বাভাবিক।
★ করোনা ভাইরাসের টেস্ট সমূহ কি এবং কোথায় করা হয়?
আইইডিসিআর সূত্রে জানা যায়, মুখের লালা ও নাকের শ্লেষ্মা সংগ্রহ করা টিউব অতিমাত্রায় শীতল করে বরফের বাক্সে ভরে পাঠানো হয় ল্যাবরেটরিতে, সেখানে টেস্ট কিট দিয়ে আরটি- পিসিআর পরীক্ষা করা হয়। রোগীর নমুনায় যদি করোনা ভাইরাস থাকে, তাহলে এ পরীক্ষায় তার সংখ্যা বাড়বে। ফলাফল আসবে ‘পজেটিভ’। বাংলাদেশে কেবল আইইডিসিআরেই করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করার ব্যবস্থা রয়েছে।
★ আমার কি মেডিক্যাল মাস্ক পরা উচিত?
করোনা ভাইরাসসহ অন্যান্য রোগের বিস্তার সীমিত পর্যায়ে রাখতে মেডিক্যাল মাস্ক সাহায্য করে। তবে এটার ব্যবহারই এককভাবে সংক্রমণ হ্রাস করতে যথেষ্ঠ নয়। নিয়মিত হাত ধোঁয়া এবং সম্ভাব্য সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে মেলামেশা না করা এই ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর সর্বোত্তম উপায়।
★ কোয়ারেন্টাইন বলতে কি বোঝায় ? হোম কোয়ারেন্টাইন কিভাবে মেনে চলতে হবে?
কোয়ারেন্টাইন অর্থ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পৃথক থাকা। তবে কোয়ারেন্টাইন মানে এই নয় যে, আপনাকে সম্পূর্ণ আলাদা করে দেয়া হলো। যদি কোনো ব্যক্তির করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে তাকে জনবহুল এলাকা থেকে দূরে রাখতে এবং ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে কিছুদিন আলাদা থাকতে বলা হয়। ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার পর থেকে রোগের পূর্ণ প্রকাশ হতে ১৪ থেকে ৩৭ দিন সময় লাগে। সে জন্য হোম কোয়ারেন্টাইন করতে বলা হয়েছে ১৪ থেকে ৩৭ দিনের জন্য। |
হোম কোয়ারেন্টাইন মানে আপনি থাকবেন নিজের বাড়িতে। হোম কোয়ারেন্টাইন- অর্থাৎ সংক্রমিত সংস্পর্শে আসার কারণে বাধ্যতামূলক ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।এই ১৪দিন একটি নির্দিষ্ট ঘরে সকালের কাছ থেকে আলাদা থাকতে হবে।স্কুল, কলেজ, উপাসনালয়, বাজার বা কোন প্রকার জমায়েত হওয়া যাবেনা, গণপরিবহনে উঠা যাবেনা। সাক্ষাৎ জরুরী হলে কমপক্ষে ৩ ফুট দুরুত্ব রাখতে হবে।
★করোনাভাইরাসের কারণে কারা হোম কোয়ারেন্টিনে থাকবেন?
যেসব দেশে কোভিড-১৯–এর স্থানীয় সংক্রমণ ঘটেছে, সেসব দেশ থেকে যেসব যাত্রী এসেছেন এবং আসবেন (দেশি-বিদেশি যেকোনো নাগরিক), যাঁরা দেশে শনাক্তকৃত ৩ জন কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন এবং যার অথবা যাঁদের কোনো শারীরিক উপসর্গ নেই, তাঁদের ১৪ দিন স্বেচ্ছা/গৃহ কোয়ারেন্টিন পালন করতে হবে।
★হোম কোয়ারেন্টাইনে আপনি যা করবেন ?
নিজের বেডরুমে থাকুন। একা থাকুন।
সম্ভব হলে নিজের আলাদা টয়লেট ব্যবহার করুন।
নিজের তোয়ালে, গামছা, ব্যবহার করুন। নিজের বিছানা আলাদা রাখুন।
যথাসম্ভব সাক্ষাৎ এড়িয়ে চলুন, এমনকি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও।
যে কারও সামনে মাস্ক পরে থাকুন।
অন্যের সঙ্গে যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রাখুন।
ঘন ঘন হাত ধুয়ে ফেলুন। যেসব জায়গায় বারবার স্পর্শের সম্ভাবনা আছে, সেগুলো দিনশেষে ভালো করে জীবাণুনাশক দিয়ে মুছে ফেলুন। যেমন দরজার হাতল, কম্পিউটার, ফোন, টয়লেট ইত্যাদি।
★ আইসোলেশন কি এবং কেন আইসোলেশনে থাকা গুরুত্বপূর্ণ?
আইসোলেশন হচ্ছে, কারো মধ্যে যখন জীবাণুর উপস্থিতি ধরা পড়বে বা ধরা না পড়লেও তার মধ্যে উপসর্গ থাকবে তখন তাকে আলাদা করে যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে তাকে বলা হয় আইসোলেশন। ইতিমধ্যে ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে এবং চিকিৎসাধীন আছেন এমন ব্যাক্তিকে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত সকলের কাছ থেকে একবারে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে হবে। সংক্ষেপে বলতে গেলে বলা যায়, আইসোলেশন হচ্ছে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা থাকার ব্যাবস্থা।
★ চিকিৎসকদের প্রতিরক্ষার জন্য কি কি পদক্ষেপগুলো পালন করতে হবে?
লম্বা পোশাক, লম্বা হাতার পোশাক পরিধান করা।
Latex অথবা Nitrile গ্লাভস ১৫-৩০মিনিট পর পর বদলাতে হবে, কারণ এরপর এটি এর প্রতিরক্ষামূলক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলে। প্রত্যেক পেশেন্টের জন্য অবশ্যই গ্লাভস বদলাতে হবে অথবা যদি গ্লাভস ছিড়ে যায় তখন ও গ্লাভস বদলাতে হবে।
প্রত্যেক পেশেন্টের জন্য মাস্ক বদলাতে হবে। মাস্ক কখনো পকেটে অথবা গলায় ঝুলিয়ে রাখা থেকে বিরত থাকতে হবে। (যদি মাস্ক পেশেন্টের ফ্লুইডের সংস্পর্শে আসে), যদি মাস্ক ভিজা থাকে তাহলে এরা এদের প্রতিরক্ষামূলক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলে,তাই অবশ্যই বদলে নিতে হবে।
সুরক্ষার জন্য সবসময় সেফটি গ্লাস পড়তে হবে।
টার্বাইন থেকে নিসৃত পানি এবং রোগীর লালার মিশ্রনকে প্রতিহত করতে রাবার ড্যাম ব্যবহার করতে হবে।
হাতের কাছে পাওয়া যায় এমন প্রতিরক্ষামূলক উপকরণ ব্যবহার যেমন: লম্বা পোশাক, ক্যাপ, গ্লাস, প্লাস্টিক এপ্রন, বিশেষ পুরু গ্লাভস।
Instruments উপযুক্ত জীবানুনাশক পদার্থে ডুবিয়ে রাখতে হবে ব্যবহারের সাথে সাথে। থার্মোডিসইনফেক্টর উত্তম সল্যুশন যেহেতু এটি সরাসরি পেশেন্টের মুখ থেকে আসে।ইন্সট্রুমেন্ট ম্যাশিনে দিলে এগুলো পরিষ্কার, শুকনা, থার্মোডিসইনফেক্টর হয়ে বের হয়। অবশ্যই ইন্সট্রুমেন্ট শুকিয়ে নিতে হবে, ভেজা থাকলে জীবানুমুক্তকরন প্রক্রিয়া অকার্যকর হয়ে যায়।
টাইপ B অটোক্লেভে জীবানুমুক্তকরণ করতে হবে।
Instruments অটোক্লেভের দেয়ালে লাগতে দেয়া যাবেনা । এতে বাস্প চলাচল করতে পারবে।
ব্যবহারের পর ফেলে দেয়া যায় এমন উপকরণ ব্যবহার করতে হবে (ডেন্টাল চেয়ারের কভার, রেডিওগ্রাফি ম্যাশিনের কভার)
ডেন্টাল চেয়ার জীবানুনাশক পদার্থ দিয়ে পরিস্কার করতে হবে। কাউন্টার টপ, ফার্নিচার, ফ্লোর এসব ব্লিচ দিয়ে জীবানুমুক্ত করতে হবে।
‘
★ আক্রান্ত ব্যাক্তির মল থেকে আমরা কি covid-19 এ আক্রান্ত হতে পারি?
আক্রান্ত ব্যাক্তির মল থেকে COVID-19 সংক্রমণের সম্ভাবনা তেমন দেখা যায়নি। তবে প্রতিবার ওয়াশরুম ব্যাবহারের পর ভালো ভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
★ গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুকিতে কে আছে?
প্রবীণ ব্যাক্তি এবং প্রাক-বিদ্যমার চিকিৎসারত যেমন ( উচ্চরক্ত চাপ,হৃদরোগ,ফুসফুসের রোগ,ক্যান্সার অথবা ডায়াবেটিস) অন্যান্য ব্যাক্তিদের তুলনায় প্রায়ে COVID-19 এ সংক্রমিত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হতে পারে।
★করোনা ভাইরাস কি উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় বাঁচতে পারে?
করোনা ভাইরাস ঠান্ডা ও শুস্ক আবহাওয়ার দেশের পাশাপাশি উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ার দেশেও বিস্তার লাভ করেছে।
★মশা কিংবা গৃহপালিত প্রাণীরা কি করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে?
মশার কামড়ে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গৃহপালিত প্রাণীদের আক্রান্তের কোন তথ্যও পাওয়া যায়নি।
★দোকানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার শেষ হয়ে গেলে কি করবো?
সাধারণ সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুলেও করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষা সম্ভব।
★ শিশুরা কি ঝুঁকিতে?
যে কোন বয়সের মানুষই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। তবে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। প্রধানত: আগে থেকে অসুস্থ বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস মারাত্মক হতে পারে। তবে শহরাঞ্চলের দরিদ্র শিশুদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাসের পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। এসব প্রভাবের মধ্যে রয়েছে বিদ্যালয় বন্ধ থাকা, যা সম্প্রতি মঙ্গোলিয়ায় দেখা গেছে ।
★ প্রতিরোধ বা চিকিৎসায় অ্যান্টবায়েটিক কি কার্যকর?
অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাসের বিরুদ্ধে নয়, ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকরী। সুতরাং ভাইরাস প্রতিরোধে অ্যান্টিবায়োটিকের কোন কার্যকারিতা নেই।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং পরিসংখ্যান বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা- ওয়ার্ল্ডোমিটার এর হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৬৮ হাজার ২৭ জন, যাদের মধ্যে গুরুতর ৬ হাজার ৮২ জন। বিশ্বব্যাপী ৭২ হাজার ৫শ’ ৩২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। সেই হিসাবে বলা যায়, প্রতি ১০০ জনে মারা যাচ্ছেন সাত জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন ৯৩ জন।
করোনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনে বর্তমানে চিকিৎসাধীন ১২ হাজার আটাশি জন। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চার হাজার। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৫ হাজার ৫৪৭ মানুষ। রোগী না থাকায় হুবেই প্রদেশের চারটি অস্থায়ী হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
করোনা ভাইরাস সারা বিশ্বে বর্তমানে একটি আতঙ্কের নাম হলেও চীন প্রমাণ করেছে , সঠিক চিকিৎসা ও সচেতনতাই পারে করোনার আক্রমণ থেকে বাঁচাতে। শুধু প্রয়োজন নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহযোগিতা।
এতো কিছুর মাঝেও একটি ভালো খবর দিয়ে লেখাটি শেষ করছি, চীনের স্বাস্থ্য কমিশনের ঘোষণায় বলা হয়েছে – ”উহান শহরে নতুন করে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। অর্থাৎ ১৯ ও ২০ মার্চ এই দুই দিনে নতুন একজনও করোনায় আক্রান্ত হয় নি। যেটা চীনের জন্য যুদ্ধ জয়ের চেয়েও অনেক বড় খবর।”
রাজধানীসহ সারাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকরাই আক্রান্ত হচ্ছেন প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে। শীর্ষে ঢাকা ।
ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিজের (এফডিএসআর) তথ্য অনুযায়ী, রোববার (২৬ এপ্রিল) পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগে মোট ৩৭১ জন চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে ৩০৫ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন।
অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে- বরিশালে ৯ জন, চট্টগ্রামে ১৫, সিলেটে ৫, খুলনায় ১০, রংপুরে তিন ও ময়মনসিংহ বিভাগে ২৪ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হন।
ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিজ নামক একটি সংগঠনটি সারাদেশের চিকিৎসকদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরিসংখ্যান তুলে ধরছে।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৪৫ জনে। আক্রান্ত হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৪১৮ জন। এতে দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৪১৬। এছাড়া নতুন করে সুস্থ হয়েছেন আরও নয়জন। ফলে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১২২ জনে।
করোনাভাইরাসের থাবায় যখন সবাই দিশেহারা হয়ে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতদের দিকে চেয়ে আছে, ঠিক সেই সময়ে চট্টগ্রামের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউএসটিসির অধীন বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল থেকে ১৯ জন নার্স এবং ১১ জন ক্লিনার ও ৪ জন আয়াকে আকস্মিক চাকরিচ্যূত করেছে কর্তৃপক্ষ। চাকরিচ্যূতির কোন ব্যাখ্যা না দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে ‘কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে’।
চাকুরিচ্যুত করার প্রতিবাদে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ইউএসটিসি)’ প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা। রোববার (২৬ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালের সামনে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা।
জানা গেছে, গত ৮ এপ্রিল ১৯ জন নার্স এবং ১৫ জন আয়া ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে নোটিশ বোর্ডে বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রতিষ্ঠানটি। নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে প্রথমে বেতন ভাতাও আটকে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরে অবশ্য বেতন পরিশোধ করা হলেও চাকুরিচ্যুত করার নির্দেশনা জারি রাখা হয়।
ইউএসটিসি কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সোলায়মান চট্টগ্রামের একটি গণমাধ্যমে বলেন, ইউএসটিসিতে কোন শৃঙ্খলা নেই। এখানে দুই বার দুইজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডিরেক্টর হিসেবে এসেছিলেন। মালিকপক্ষের এসব অনিয়মের কারণে উনারা চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। এরপর থেকে মালিকপক্ষ তাদের পোষা লোকজনকে চেয়ারে বসায়, যাদের কোন ব্যক্তিত্ব নেই। মালিকের কথায় উঠবে, বসবে। এখন তারা অভিজ্ঞ নার্স, আয়া, স্টাফদেরকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বিদায় করার নোটিশ দিয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অজুহাতে অনেককে চাকরিচ্যূত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ৮ এপ্রিল চাকরিচ্যূতির নোটিশে আমরা অবাক হয়েছি। নোটিশে কোন কারণ উল্লেখ করা হয়নি। এভাবে কাউকে চাকরিচ্যূত করা যায় না। চাকরিচ্যূতদের অনেকেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আমরা এর প্রতিবাদে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, নগর পুলিশের কমিশনার, জেলা প্রশাসক, খুলশী থানাসহ, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েছি। করোনা পস্থিতিতে আমরা এই মুহুর্তে আন্দোলনে যেতে না পারলেও আমরা সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে অগ্রসর হবো।
চাকরিচ্যূত নার্স হামিদা আক্তার বলেন, ‘আমরা ডিপ্লোমাধারী না হলেও আমাদের দিয়েই ইউএসটিসি সৃষ্টি। সরকারতো ডিপ্লোমা ছাড়া নার্স নিয়োগ দিতে নিষেধ করেছে। আমাদেরকে তো চাকরি থেকে বাদ দিতে বলেনি।’
চাকরিচ্যূতির শিকার আরেক নার্স রেহানা আক্তার বলেন, ‘আমার চাকরির বয়স ১৯ বছর। আমি বাইরে ডিপ্লোমা করেছি। নার্সিং কাউন্সিলের নাম্বার ছিল না। কিন্তু যে প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা করেছি তাদের নাম্বার ছিল। সেটা ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেনি।’
এদিকে হাসপাতালের পরিচালক ডা. কামরুল হাসান গণমাধ্যমকে জানান, আমাদের মোট ৭৮ জন নার্স কর্মরত আছেন। যাদের বিদায়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী তাদের যোগ্যতায় ঘাটতি আছে। আগ থেকেই এদের নিয়োগ নিয়ে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আপত্তি ছিল। গত ডিসেম্বর থেকে তাদের বিদায় দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিপরীতে ডিপ্লোমাধারী ২২ জন নার্স আমরা নিয়োগও দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, নার্স-আয়া-স্টাফ মিলে যে ৩৪ জনকে বিদায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে তাদের যাবতীয় পাওনা দিয়ে আমরা বিদায় দিচ্ছি। তাদের যে এসোসিয়েশনগুলো আছে ওগুলোর সাথে আমরা আগে বসেছি, তাদের সাথে বসেছি যে তারা কোন শর্তে যে চায়। সে সব শর্ত মেনেই তাদের আমরা বিদায় দিচ্ছি। তারা যাবতীয় পাওনা নিয়েই যাবেন। আর একমাস সময় আমরা হাতে রেখেছি। এই এক মাসের বেতনও তারা পাচ্ছেন।
জানা গেছে, ইউএসটিসির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. ইফতেখার ইসলাম প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলামের ছেলে। তার স্ত্রী ডা. সাবা কাশ্মীরের নাগরিক। ৬ মাস আগে একই প্রতিষ্ঠান থেকে এমবিবিএস পাস করে তিনিও ডিরেক্টর হিসেবে হাসপাতালে জয়েন করেছেন। এই আদেশের বিষয়ে অনেকে আঙ্গুল তুলছেন ডাঃ সাবা’uর দিকে। কিন্তু আরেক চিকিৎসক ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, এসব সিদ্ধান্ত চেয়ারম্যান, নার্সিং ইন্সটিটিউটসহ অন্য অথরিটির সম্মতিতে গ্রহণ করা হয়। একজনের ওপর চাপানোর কোন সুযোগ নেই।
এ ব্যাপারে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মিনহাজুর রহমান বলেন, কোন কারণ দর্শানো নোটিশ এবং যৌক্তিক কারণ ছাড়া কথায় কথায় চিকিৎসক, নার্স স্টাফ চাকরিচ্যূত করা ইউএসটিসির জন্মগত স্বভাব। করোনা সংকটে তারা অসচ্ছল স্টাফদের চাকরিচ্যূত করাটা অন্যায়। আমরা এই আদেশ প্রত্যাহার চাই।
বিষয়টিকে মানবাধিকারের লঙ্ঘন দাবি করে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ডেপুটি গভর্নর আমিনুল হক বাবু বলেন, করোনা সংকটে পুরো জাতি যখন একে অপরের পাশে দাঁড়াচ্ছে, সেখানে ইউএসটিসি তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ নার্স, স্টাফ ছাঁটাই করছে— এটা অমানবিক, মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধও। কর্তৃপক্ষ চাকরিচ্যূতির এই আদেশ প্রত্যাহার না করলে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়াবে।
রাজধানীর হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে শর্তসাপেক্ষে করোনা হাসপাতাল হিসেবে চালু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরকে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
২৫ এপ্রিল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সহকারী স্বাস্থ্য-১ শাখার উপসচিব মো. আবু রায়হান মিয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তিনটি শর্তসাপেক্ষে হাসপাতালটিতে করোনাভাইরাসের চিকিৎসাসেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা জারি করা হয়।
শর্ত তিনটি হলো-
১. হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সাথে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে হাসপাতালটি শুধু করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবার জন্য পরিচালিত হবে।
২. হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য পরিচালনা ব্যয় নির্ধারণ করা যাবে ৩. রোগীর চিকিৎসার ব্যয়বাবদ খরচ সরকার বহন করবে
করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র যে কিট উদ্ভাবন করেছে, সেটা সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর নেয়নি উল্লেখ করে কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্ট্রি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ব্যবসায়িক স্বার্থে জাতীয় স্বার্থের বিপক্ষে কাজ করছে। তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে গণস্বাস্থ্যের কিট গ্রহণ করেনি। আমরা জনগণের স্বার্থে শুধু সরকারের মাধ্যমে পরীক্ষা করে কিটটি কার্যকর কি-না, তা দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকারিভাবে প্রতি পদে পদে পায়ে শিকল দেয়ার চেষ্টা হয়েছে।
রোববার (২৬ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ কথা বলেন।
এর আগে শনিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে একই জায়গায় করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লট’ হস্তান্তর করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। আমন্ত্রণ জানানোর পরও যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার্স ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ছাড়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত এ কিট গ্রহণের জন্য যায়নি সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান। পরদিনই এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানান, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কার্যালয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের করোনা কিটের উদ্ভাবক ড. বিজন কুমার শীলসহ তিনজন এটি জমা দিতে যান। তবে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর তা গ্রহণ করেনি। এমনকি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তিনজনের একজনকে ওষুধ প্রশাসনের কার্যালয়ে প্রবেশও করতে দেয়া হয়নি।
‘কর্তৃপক্ষ জমা নেবেন না। আমরা গিয়েছিলাম, তারা জমা নেননি। বললেন যে সিআরও নিয়ে আসেন। তারপরে বললেন, এটা আপনারা ভেরিফিকেশন করে আনেন সিআরও থেকে। সিআরও হলো চুক্তিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ওখানে পয়সা দিতে হবে। কত খরচ লাগবে, তা উনারা (সিআরও) বাজেট দেবেন। পরে আইসিডিডিআর,বি থেকে ভেরিফিকেশন করিয়ে আনার কথা বলেন। আইসিডিডিআর,বি লকডাউন থাকায় তারা বিএসএমএমইউ, আইইডিসিআর কিংবা আর্মি প্যাথলজি ল্যাবরেটরি থেকে কার্যকারিতা আছে কি-না পরীক্ষা করে দেখার প্রস্তাব দিলেও তা মানা হয়নি।’
তিনি বলেন, জাতির এ দুর্যোগের সময় যুগান্তকারী আবিষ্কার এ কিট কাজে লাগানো যাচ্ছে না। যেখানে ইরানে এ ধরনের কিট প্রতিদিন ১০ লাখ তৈরি ও ব্যবহৃত হচ্ছে, সেখানে তারা কিট জমাই রাখেননি। যে কোনো ল্যাবরেটরি থেকে পরীক্ষাতে আপত্তি নেই। কিন্তু জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে তারা এখন বাজেট ঠিক করবেন, তারপর সিআরও’র মাধ্যমে রিপোর্ট নেবেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আপনাদের বুঝতে হবে, কিভাবে তারা ব্যবসায়িক স্বার্থকে রক্ষা করছেন। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর অনৈতিক কাজ করছে, দেশের ক্ষতি করছে। তারা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে রেখে চলেন, তাতে তাদের লেনদেনে সুবিধা হয়।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এ প্রধান বলেন, প্রথমে আমাদের বললো, অনুমোদন নেই দেখে আমরা আসতে পারব না। আমরা তো আপনাদের হাতে দিতে চাই, যাতে আপনারা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আমাদের গতকাল বলা হলো, তারা আসবেন না। ঠিক আছে, আজকে আমরা গেলাম। আজকে গণস্বাস্থ্যের ড. বিজন কুমার শীলসহ তিনজন গেলেন। তারপরও দেখেন, কেমন আমলাতান্ত্রিকতা। দুজনকে ঢুকতে দেবে, আরেকজনকে দেবে না। অথচ বাইরের তিনজন লোককে ভেতরে বসিয়ে রেখেছেন। তাদের ব্যবসা সংশ্লিষ্ট লোকদের ভেতরে বসিয়ে রেখেছেন। ফিরোজ, তিনি হেড অব এ ডিপার্টমেন্ট অব নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পদমর্যাদায় ওই ডিজি সাহেবের সমতুল্য তিনি। এ জাতীয় লোককে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি যুক্তিতর্কে হেরে যাওয়ার ভয়ে।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, গতকাল আমরা এখানে কিট হস্তান্তরের একটি উদ্যোগ নিয়েছিলাম, এটার অনুমোদনের জন্য। এটা অনুমোদন করার দায়িত্ব হলো ওষুধ প্রশাসনের। দুর্ভাগ্যবশত, ওষুধ প্র্রশাসন এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, তারা না ফার্মাসিস্ট, না ফার্মাকোলজিস্ট। তার ফলে এই জিনিসগুলির গুরুত্ব সেভাবে তারা উপলব্ধি করতেই সক্ষম হচ্ছেন না। তারা সম্পূর্ণ ব্যবসায়ী স্বার্থ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছেন।
‘বিজ্ঞানীরা জনস্বার্থে এটি আবিষ্কার করেছেন। এটি ব্যবহারে যত দেরি হবে তত জনগণের ক্ষতি বেশি হবে। এ গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের গুরুত্ব আমরা ওষুধ প্রশাসনকে বোঝাতে পারছি না। সিআরও নামের এজেন্টকে পরীক্ষার জন্য ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। আমরা চাই এটির মূল্য ২৫০ থেকে ২০০ টাকা নামাতে, আর তারা ব্যবসায়িক স্বার্থে নানা অজুহাতে ৫০০ টাকা দাম করতে চায়। ওষুধ প্রশাসন থেকে বলা হয়, দাম বাড়লে বাড়বে। এটা কি জনস্বার্থে কথা হলো? আমার ধারণা একটা শ্রেণী সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করছে।’
আপনারা গতকাল কিট হস্তান্তর করা হবে বলেছিলেন কেন? এ প্রশ্নের জবাবে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, কিটটি পরীক্ষা করে দেখার জন্য সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে চেয়েছি। এখন আমার কাছে কিট থাকলেও সরকারের অনুমোদন ছাড়া আমরা পরীক্ষা করতে পারবো না।
তিনি বলেন, গত ১২ এপ্রিল কিটের যথার্থতা প্রমাণের জন্য সরকারের কাছে রক্ত চেয়েছি। কিন্তু পেয়েছি ২২ এপ্রিল, তাও আবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের হস্তক্ষেপের পর। আমার মতো লোক ২৫ বার ফোন করেছি।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালকের উদ্দেশে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, আপনাদের সকল ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করে দেবো, তবে ঘুষ দেবো না। গণস্বাস্থ্যের ৪৮ বছরে কাউকে ঘুষ দেইনি, এতে প্রোডাক্ট বাজারে আসুক না আসুক, আমরা ঘুষ দেইনি, দেবো না। এই দুর্নীতির অংশীদার হইনি, হবো না। আমরা আন্দোলন করে যাবো।
মহামারি করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৪১৮ জন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫ হাজার ৪১৬ জনে। সেইসঙ্গে করোনায় আরো ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৫ জনে।
রবিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৪২২ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৪৭৬ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে। ৪১৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
ডা. নাসিমা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ৫ জন। সুস্থ হয়েছে ৯ জন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। দেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হন ৮ মার্চ এবং এ রোগে আক্রান্ত প্রথম রোগীর মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মত তিনজনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের তথ্য জানায় আইইডিসিআর।
এরপর ২৫ মার্চ প্রথমবারের মতো রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানায়, বাংলাদেশে সীমিত পরিসরে ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা সামাজিকভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে।