বেশিরভাগ ল্যাবরেটরিতে টেস্টই হয় না। নষ্ট হয় বাক্সবন্দি কোটি কোটি টাকার মেশিনপত্র। ইন্টার্নরাই ভরসা, ডাক্তার মেলে না ওয়ার্ডে। নার্সদের সেবা নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই।
অন্যদিকে কতিপয় কর্মচারী আর দালালদের দৌরাত্ম্যে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবার মান প্রায় তলানিতে। বিশিষ্টজনদের মতে, প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে অসুস্থ হাসপাতালটি নিজেই। যদিও এ পরিস্থিতি পরিবর্তনের অঙ্গীকারের কথা জানালেন, সদ্য যোগ দেয়া পরিচালক।
বছরে ৬ মাসে পুলিশি অভিযানে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ে দালাল ও প্রতারকচক্রের সদস্যরা। কিন্তু কিছু দিন জেলে থেকে বেরিয়ে এসেই দ্বিগুণ উৎসাহে আবারও নামছে পুরোনো ধান্দায়। বাইরের বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরির এজেন্ট হিসেবে রোগী শিকারি এ দালালদের দৌরাত্ম্যে প্রতারিত ও সর্বশান্ত হচ্ছে গ্রাম থেকে আসা মানুষ।
তবে এদের থেকে বেশি ভয়ঙ্কর কর্মচারীদের কেউ কেউ। স্ট্রেচারে করে রোগীদের হাসপাতালে আনা নেয়াসহ নামমাত্র সেবা দিয়েই জোর জবরদোস্তি করে টাকা আদায় করছে অসহায় রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে। ৩০ টাকা ফিয়ের বদলে ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা দিতে হয় তাদের। ভুক্তভোগীরা বলেন, ট্রলিতে আনতে গেলেই টাকা লাগে। না দিলে কোনোভাবেই ট্রলি দেবে না তারা।
ভুক্তভোগীরা জানান, উল্লেখযোগ্য ল্যাবরেটরিতে টেস্ট হয় না এই হাসপাতালে। হয় নষ্ট, না হয় বাক্সবন্দি কোটি কোটি টাকার মেশিনপত্র। ইন্টার্নরাই ভরসা, ডাক্তার মেলে না ওয়ার্ডে। নার্সদের সেবা নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই। তারা আরও বলেন, যত টেস্ট হয়েছে সেগুলো কোনো মেডিকেল থেকে হয়নি সব বাইরে থেকে হয়েছে।
বিব্রত সরকার দলীয় নেতা, ক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও। এই অবস্থার জন্য হাসপাতাল প্রশাসনের বরাবরের নতিস্বীকার প্রবণতাকেই দায়ী করছেন।
জেলা সুজনের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার ফকরুল আনাম বলেন, দীর্ঘদিন থেকে দেখে আসছি এখানে সেবার নামে প্রতারণ হচ্ছে। সেবা পাওয়ার জন্য অসহায় হয়েই হাসপাতালে যায়। সেখানে ট্রলি থেকে শুরু করে সুস্থ হয়ে বের হয়ে আসা পর্যন্ত প্রত্যেক পর্যায়ে টাকা দিতে হচ্ছে।
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য স্বাস্থ্য সেবা কমিটির প্রধান। উনি এই বিষয়ে খোঁজ রাখেন কিনা এ বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু নাগরিক হিসেবে আমরা যা দেখছি এখানে কোন স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছি না।
পরিস্থিতি পরিবর্তনের অঙ্গীকার করলেন সদ্য যোগ দেয়া হাসপাতালের নবনিযুক্ত পরিচালক। রংপুর মেডিকেলের নবনিযুক্ত পরিচালক ডা. শরীফুল হাসান বলেন, ৮টা বিভাগ শনাক্ত করেছি যেখানে কেউ এক মাসের বেশি থাকতে পারবে না।
১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালটি ২০১০ সালে ১ হাজার শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেও এখনও চলছে ৫শ’ শয্যার লোকবলে। গড়ে প্রতিদিন আউটডোরে ৩ হাজার এবং ১৮শ’ থেকে ২২শ’ রোগী ভর্তি থাকছে ইনডোরে।