সারাদেশে অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। অভিযানের প্রথমদিন শনিবার (২৮ মে) দেশের বিভিন্ন জেলায় কয়েকশ’ অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে। বুধবার এক সভায় ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের সব অবৈধ স্বাস্থসেবা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ সময়ের মধ্যে ক্লিনিক বন্ধ করা না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়। এর পরই শুরু হয় এই অভিযান।
দেশের বিভিন্ন জেলায় অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযানের খবর
ফরিদপুর: ফরিদপুরে অবৈধ ২০টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সিভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দীকুর রহমানের নেতৃত্বে এ অভিযান চালায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। অভিযানে উপজেলা সদরের বাবু মেমোরিয়াল হাসপাতাল, ঢাকা ডিজিটাল ল্যাব, সানজিদা ক্লিনিক, সুমি ক্লিনিক, একতা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডায়াবেটিক সমিতি, মঈন ফেকো চক্ষু হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বোয়ালমারী উপজেলার আলনুর চক্ষু হাসপাতাল, সেতু সার্জিক্যাল, সেবা সার্জিক্যাল ক্লিনিক অ্যান্ড জননী ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আইডিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মডার্ন ল্যাবরেটরি, মীম ডায়াগনস্টিক, স্বর্না সার্জিক্যাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া মোল্লা আহম্মদ হোসেন মেমোরিয়াল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কোহিনুর ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল, দি ইস্টার্ন সার্জিক্যাল ক্লিনিক ও আল-আমিন সার্জিক্যাল ক্লিনিককে এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে নিবন্ধনসহ যাবতীয় কাগজপত্র সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে। জমা দিতে না পারলে বন্ধ করে দেওয়া হবে প্রতিষ্ঠানগুলো।
টাঙ্গাইল: কাগজপত্র না থাকায় ১৭টি ক্লিনিক সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। এ সময় কয়েকটিকে জরিমানা করা হয়েছে। এ অভিযান পরিচালনা করে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, অভিযানের প্রথমদিন টাঙ্গাইল শহরে চারটি, মধুপুর উপজেলায় দুটি, ভূঞাপুরে দুটি, মির্জাপুরে দুটি, ঘাটাইলে একটি ও গোপালপুরে ছয়টি অবৈধ ক্লিনিক সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রানুআরা খাতুন বলেন, ‘কাগজপত্র না থাকায় শহরের স্বদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পদ্মা ক্লিনিক, আমানত ক্লিনিক অ্যান্ড হসপিটাল সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কমফোর্ট হসপিটালের মালিককে ৩০ হাজার টাকা, দি সিটি হাসপাতালের মালিককে ২০ হাজার টাকা ও ডিজিল্যাবকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া রোগী থাকার কারণে ডিজি ল্যাবকে রবিবার পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। তারপর সেটিও সিলগালা করা হবে।’
নরসিংদী: নরসিংদীতে নিবন্ধন না থাকায় চারটি ডায়াগনস্টিক ও একটি ডেন্টাল সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বন্ধ করে দেওয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো হলো– নরসিংদী স্পেশালাইজড ডায়াবেটিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নরসিংদী ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মৃধা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মেডিকো ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রফুল্ল ডেন্টাল সেন্টার।
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু কাউসার সুমন বলেন, ‘নরসিংদীর ছয়টি উপজেলায় ৪০টি অনিবন্ধিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে এসব অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেওয়া হবে।’
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নগরীর চারটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন সিভিল সার্জন। সেগুলো হলো– চট্টগ্রাম কসমোপলিটন হসপিটাল প্রাইভেট লিমিটেড, সিএসটিসি হসপিটাল, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং নিরুপনী প্যাথলজি ল্যাবরেটরি। এ ছাড়া ট্রিটমেন্ট হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড এবং পলি হসপিটালের কাগজপত্র সঠিক থাকলেও ছিল না সেবার মূল্য তালিকা। এ দুই প্রতিষ্ঠানকে মূল্য তালিকা কাউন্টারে প্রদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় চারটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নিবন্ধন না থাকায় উপজেলার অ্যাপোলো হাসপাতালকে ৩০ হাজার, বাঁশখালী মাতৃসদন হাসপাতালকে ২০ হাজার, মর্ডান ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ২০ হাজার টাকা এবং নিউ ডেন্টাল কেয়ারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় সনদবিহীন চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করার অভিযোগে নিউ ডেন্টাল কেয়ার হাসপাতালটি সিলগালা করা হয়। বাকি তিনটি প্রতিষ্ঠানকে এক সপ্তাহের মধ্যে কাগজপত্র সংগ্রহ করার জন্য বলা হয়। এসব হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়।
যশোর: যশোরে একটি ক্লিনিকসহ ছয়টি অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। যশোর শহরের পিস হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নূরুল ইসলাম ডায়াগনস্টিক সেন্টার, রোটারি হেলথ অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সিএমসি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিবন্ধনের কাগজপত্র পায়নি স্বাস্থ্য বিভাগের টিম। সে কারণে তাদের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
মোংলা, বাগেরহাট: বাগেরহাটের মোংলায় অবৈধ ক্লিনিক প্যাথলজির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। এ সময় উপজেলার হাসপাতাল সড়কে পাঁচটিসহ মোট নয়টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এই অভিযান চালান।
জানা গেছে, অভিযানে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় হাসপাতাল সড়কে রাতুল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, লিয়ান ডায়াগনস্টিক সেন্টার, রাজিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং মাদ্রাসা রোডের রাব্বি ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিক, মুনতাহা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, তালুকদার আব্দুল খালেক সড়কে খান ডায়াগনস্টিক সেন্টার, দিগরাজ এলাকায় খান জাহান ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গায় হাসপাতাল সড়ক এলাকার তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালাসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় সেন্ট্রাল মেডিক্যাল সেন্টার, আমাদের সনো এবং চুয়াডাঙ্গা আল্ট্রাসনোগ্রাফি সেন্টার সিলগালা করা হয়। এ ছাড়া ইসলামী হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক বিভাগ এবং তিশা ডায়াগনস্টিক সেন্টার মৌখিকভাবে বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নাটোর: সদর উপজেলার সাতটি অবৈধ ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো– শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকার পদ্মা ক্লিনিক, সেন্ট্রাল ল্যাব ও প্রাইম ডায়াগনস্টিক, চকরামপুরের হেলথ কেয়ার অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক, চকবৈদ্যনাথের মদিনা চক্ষু হাসপাতাল, হাফরাস্তার তামান্না ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক এবং বড়হরিশপুরের বরাত ডায়াগনস্টিক।
হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের মাধবপুরে পাঁচটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় সেবা ডায়াগনস্টিক, অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক, হক ডায়াগনস্টিক, প্রাইম ডায়াগনস্টিক ও তিতাস শিশু জেনারেল হাসপাতাল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার যমুনা ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আলফা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কাজিপুর ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং সোনামুখীতে নিউ হেলথ কেয়ার ক্লিনিক ও ফারুক আল নাসির ওয়েলফেয়ার হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় নির্দেশনা অনুযায়ী যমুনা ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুইশ গজের বাইরে সরানোর জন্যে এক মাসের সময় দেওয়া হয়। এ সময় সোনামুখী ফারুক আল নাসির ওয়েলফেয়ার হাসপাতালটির কাগজপত্র অনুযায়ী লোকবল এবং প্যাথলজির কোনও প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ান না থাকায় হাসপাতালটি বন্ধ নির্দেশ দেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোমেনা পারভীন।
মাগুরা: অবৈধ ও অনিবন্ধিত সাতটি প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। সেগুলো হচ্ছে– শহরের ভায়না এলাকার রোকেয়া প্রাইভেট হাসপাতাল, একতা ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোম, নিরাময় প্রাইভেট হাসপাতাল, রিফাত ফার্মেসি, শাহানা মেডিক্যাল সার্ভিসেস, অরো ডেন্টাল কেয়ার, সুখী নীলগঞ্জ প্রজেক্ট।
জামালপুর: জামালপুরের অনিবন্ধিত চারটি প্রতিষ্ঠান সিলগালা ও বিভিন্ন অংকের জরিমানা করা হয়েছে। একজনকে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। অভিযানে সিলগালার পাশাপাশি ফরিদ ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ৩৫ হাজার, ডা. এফ রহমান হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ৫০ হাজার, মর্ডান ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ২০ হাজার এবং লাইসেন্স নবায়ন না থাকায় এবং অপরিচ্ছন্নতার কারণে নূর ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ২০ হাজার, আশ্রাব উদ্দিন হাসপাতাল ছয় হাজার ও হাবীব মেডিক্যাল হলকে ছয় হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়াও ফাহিম মেডিক্যাল হলে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ থাকায় মালিক ফরিদ উদ্দিনকে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
নোয়াখালী: জেলার নয়টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ক্লিনিক সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে– বেগমগঞ্জ উপজেলার ছয়ানি বাজারের মালিহা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ডায়বেটিক সেন্টার, রাজগঞ্জ বাজারের বিছমিল্লাহ্ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বাংলাবাজারের নিউ চৌধুরী প্যাথলজি ল্যাব; সোনাইমুড়ী উপজেলার আল হাবিব হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও কাশিপুরের লাইফ লাইন প্যাথলজি; সেনবাগ উপজেলার কানকিরহাটের সিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ছাতারপাইয়া বাজারের জেনুইন ডায়াগনস্টিক ল্যাব অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার; চাটখিল উপজেলার এশিয়ান ফিজিওথেরাপি সেন্টার এবং সদর উপজেলার দত্তেরহাটের নোয়াখালী ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল।
রাজবাড়ী: জেলার বালিয়াকান্দিতে অভিযানে একটি ক্লিনিক, তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও স্বাস্থ্যসেবাসহ মোট চারটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে সিলগালা করা হয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠানের মালিককে ১৫ দিনের জেল ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অন্যগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে।
সাভার (ঢাকা): অনুমোদন না থাকায় সাভারের ধামরাইয়ে দুটি হাসপাতাল এবং দুটি ডেন্টাল কেয়ার বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। সেগুলো হলো– রুমা ডেন্টাল কেয়ার, আবীর ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মামুন ডেন্টাল কেয়ার ও সন্ধানী এক্স-রে অ্যান্ড প্যাথলজি ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
মৌলভীবাজার:জেলার কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহরে অনুমোদনহীন তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।সেগুলো হলো– শ্রীমঙ্গল শহরের কালীঘাট সড়কের ইনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও স্টেশন সড়কের রেটিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের আদমপুর বাজারের মৃত্তিকা ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
এ ছাড়া দেশের আরও অনেক এলাকায় অভিযান চালিয়ে বহু হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে।
চিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুল হত্যাকাণ্ডে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা অপরাধ বিভাগ (ডিবি)। তদন্তে অভিযুক্ত পাঁচ ছিনতাইকারীর সবাই কারাগারে। ঘটনার সাত মাস পর এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।
চার্জশিটভুক্ত পাঁচ আসামি হলেন মূল হোতা মো. রায়হান ওরফে সোহেল আপন (২৭), তাঁর সহযোগী রাসেল হোসেন হাওলাদার (২৫), আরিয়ান খান হৃদয় (২৩), সোলায়মান (২৩) ও রিপন। ঘটনার দিন তাঁরা চিকিৎসক বুলবুলের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতে বাধা পেয়ে ছুরিকাঘাতে তাঁকে হত্যা করেন। তদন্তে পেনাল কোডের ৩৯৬ ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। যার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
গতকাল শনিবার বিকেলে সব তথ্য নিশ্চিত করেন ডিবির মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মানস কুমার।
আহমেদ মাহী বুলবুল (৩৭) ছিলেন দন্ত চিকিৎসক। রাজধানীর মগবাজারের সেঞ্চুরি আর্কেড মার্কেটে রংপুর ডেন্টাল ক্লিনিকে ছিল তাঁর একটি চেম্বার। সেখানে দরিদ্র রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিতেন তিনি। করোনার লকডাউনেও তিনি চিকিৎসাসেবা বন্ধ করেননি। সাংবাদিকসহ বিভিন্ন জরুরি পেশার রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে তিনি হয়েছিলেন সবার প্রিয় ‘বুলবুল ভাই’। পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘গরিবের ডাক্তার’ নামে।
যেভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়
চলতি বছরের ২৭ মার্চ ভোর সাড়ে ৫টা। রাজধানীর শেওড়াপাড়া মেট্রো রেলস্টেশন এলাকায় তাঁর রিকশার গতিরোধ করে সঙ্গে থাকা সব কিছু দিয়ে দিতে বলেন ছিনতাইকারীরা। বুলবুল মোবাইল ফোন দিতে চাননি। এ কারণে ছিনতাইকারীরা ছুরি দিয়ে তাঁর ঊরুতে আঘাত করলে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় রাজধানীর মিরপুর থানায় তাঁর স্ত্রী শাম্মী আক্তার বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। সাত মাস তদন্তের পর গতকাল এ ঘটনায় পাঁচ আসামিকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছে ডিবি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, চিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুল হত্যা মামলায় পাঁচ আসামিকে পেনাল কোডের ৩৯৬ ধারায় অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। চার্জশিটভুক্ত পাঁচ আসামি ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, ‘চিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুল হত্যা মামলায় পাঁচ আসামির কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি যেন নিশ্চিত হয় সেদিকে নজর রাখবে রাষ্ট্রপক্ষ। ’
অসহায় পরিবার বিচারের অপেক্ষায়
নিহত বুলবুলের বাড়ি রংপুর নগরীর ভগিবালাপাড়ায়। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। চাকরি করাকালীন ১৯৯৯ সালে তিনি মারা যান। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন বুলবুল।
ছোট বোন লাভলী সামাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার ভাই ভালো মানুষ ছিল। সে সব সময় মানুষের উপকার করত। তাকেই হত্যা করল একদল অমানুষ! এই অমানুষদের সর্বোচ্চ শাস্তি হলে অন্য অপরাধীরা ভয় পাবে। ’
বুলবুলের ছোট ভাই বকুল বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে কারো বিরোধ ছিল না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন তিনি। এখন ভাই নেই। দুই শিশুসন্তানসহ পরিবারের সদস্যরাও ভালো নেই। যারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ’
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনো ওষুধ ফার্মেসি বা অন্য কোনো অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান এন্টিবায়োটিক বিক্রি করতে পারবে না। যদি কোনো ফার্মেসি রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রি করে সেটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং এ ধরা পড়লে সেই ফার্মেসির লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এন্টিবায়োটিকের যত্রতত্র ব্যবহার রোধে করণীয় নির্ধারণ সংক্রান্ত আন্তঃ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
জাহিদ মালেক বলেন, এন্টিবায়োটিকের ভুল প্রয়োগে বিশ্বে বছরে ১৫ লাখের অধিক মানুষ মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশেও এন্টিবায়োটিকের ভুল প্রয়োগে এখন মৃত্যু হার বাড়ছে। দেশে যত্রতত্র ইচ্ছেমতো এন্টিবায়োটিক বিক্রি করা হচ্ছে। পৃথিবীর কোথাও রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের নির্দেশনা ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রি হয়না। কিন্তু আমাদের দেশে যেখানে এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই, সেখানে ইচ্ছে মাফিক এন্টিবায়োটিক দেয়া হচ্ছে। মাছ, মাংসের মধ্যেও এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, খাদ্যে ইচ্ছেমতো ভেজাল মেশানো হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে আইনেরও অনেকটা ঘাটতি রয়েছে। এই সুযোগটিই দুর্বৃত্তরা কাজে লাগাতে চেষ্টা করছে। তবে, আশার কথা হচ্ছে, ‘ওষুধ আইন-২০২২’ করার কাজ চলমান রয়েছে। একনেকেও পাশ হয়ে গেছে আইনটি। এখন সংসদে পাশ হলেই এই আইনের প্রয়োগ ঘটানো হবে এবং অপচিকিৎসার সাথে জড়িত ও ভেজাল মেশানোদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া যাবে। দেশে এন্টিবায়োটিকের যত্রতত্র ব্যবহার এখনই রোধ করতে হবে। নইলে এটিই হবে আমাদের জন্য আরেকটি নিরব পেন্ডামিক।
সভায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মুহ. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব সাইফুল ইসলাম বাদল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলমসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ডেন্টাল পাবলিক হেলথ বিডিএস কারিকুলামে অন্তর্ভূক্ত থাকলেও জাতীয় পর্যায়ে গবেষণা ও বিশেষজ্ঞ তৈরীর ক্ষেত্রে এই বিষয়টি বহুকালব্যাপী অবহেলিত অবস্থায় ছিল।
এর অবসান ঘটিয়ে ১৭ ই জুলাই ২০২২ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ একটি জিও(সরকারী আদেশ) প্রকাশ করে যেখানে “জনস্বাস্থ্য ডেন্টিস্ট্রি” বিভাগ এবং সেই বিভাগে “সহকারী অধ্যাপক” ও “প্রভাষক” এর পদসৃজন এর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা ডেন্টাল কলেজ এর অধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির মহাসচিব জনাব হুমায়ূন কবীর বুলবুল ডেন্টাল টাইমসকে জানান – “বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির অংগীকার ও প্রতিশ্রুতি ছিল ডেন্টাল পাবলিক হেলথ বিষয়টিকে নিপসমে ডিপার্টমেন্ট হিসাবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয় গবেষণায় অন্তর্ভূক্ত করা৷ এরই অংশ হিসেবে আমরা নিপসম এর সম্মানিত পরিচালক অধ্যাপক (ডাঃ) বায়েজীদ খুরশীদ রিয়াজের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করে কোর্স কারিকুলামের প্রস্তাবনাও প্রদান করি৷ দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় অবশেষে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ও বিভাগ (স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয় এর সম্মতিতে জনস্বাস্থ্য ডেন্টিস্ট্রির পদসৃজন হয়েছে।
আমি মনে করি আমাদের ডেন্টাল সার্জনদের জন্যে বিষয়টি অত্যন্ত আনন্দের এবং গর্বের। আপাতত ডেন্টাল পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্ট চালু হলেও ভবিষ্যতে প্রস্তাবিত নিপসম বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়িত হলে ডেন্টাল পাবলিক হেলথ একটি অনুষদ হিসাবে প্রতিষ্ঠা পাবে বলে পরিচালক মহোদয় আমাদের আশাবাদ প্রদান করেছেনএবং তাতে খুলে যাবে ডেন্টাল প্রফেশনে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার৷ “
উল্লেখ্য, নিপসমে বর্তমানে ৯ টি বিষয়ে মাস্টার্স ইন পাবলিক হেলথ কোর্সটি চলমান রয়েছে৷ যেগুলো হলো – ১) Health Service Management & Policy ২) Hospital Management ৩) Community Medicine ৪) Epidemiology ৫) Reproductive & Child Health ৬) Health Promotion & Health Education ৭) Reproductive & Child Health ৮) Occupational & Environmental health. ৯) Non-Communicable Disease
এছাড়াও অধ্যাপক ডাঃ হুমায়ূন কবীর বুলবুল ডেন্টাল টাইমসকে জানান, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ সহ সরকারী মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিটসমূহেও ইতিপূর্বে আমরা ডেন্টাল পাবলিক হেলথ বিভাগের পদসৃজন করেছি।
স্বাস্থ্যবিভাগের অনুমোদন ছাড়াই কুমিল্লার দাউদকান্দিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ও ফিজিওথেরাপি সেন্টার এবং ডেন্টাল কেয়ার। বৈধভাবে যেসব হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলছে, তাতেও স্বাস্থ্যবিভাগের নিয়মনীতি অনুসরণ করা হচ্ছে না, রয়েছে প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাব। সেবা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে অনভিজ্ঞ লোক দিয়ে।
স্বাস্থ্যবিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন বছরে দুই থেকে তিনবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কিছু প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে। তবে পরবর্তিতে মনিটরিং না থাকায় দিব্যি চলতে থাকে অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোর বাণিজ্য। এদের হাতে একপ্রকার জিম্মি হয়ে রোগীরা প্রতিনিয়ত প্রতারিত ও সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।
সূত্র জানায়, হাতে গোনা কয়েকটির সরকারি অনুমোদন (লাইসেন্স) থাকলেও অধিকাংশ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া চলছে।
জানা যায়, চলতি বছরের মে মাসে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু তা বাস্তবায়নের তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। চার-পাঁচটি অভিযান চললেও প্রায় অর্ধশত অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক, ফিজিওথেরাপি সেন্টার ও ডেন্টাল কেয়ারে কোনো অভিযান হয়নি। যারা বৈধভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন, তারা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
উপজেলায় প্রায় ৯০টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক, ফিজিওথেরাপি সেন্টার ও ডেন্টাল কেয়ার রয়েছে। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তালিকায় আছে ৬৭টি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তালিকা অনুযায়ী ৪৮টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স আছে। এর মধ্যে হালনাগাদকৃত লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ২১। কোনো কাগজপত্র নেই ১৯টি প্রতিষ্ঠানের। এছাড়া, তালিকার বাইরে ২৩টি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে কোনো তথ্য নেই।
দুবারের অভিযানে দাউদকান্দিতে আটটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়। ইতোমধ্যে এর কয়েকটি আবারো সক্রিয় হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তৌহিদ আল হাসান বলেন, ‘কাগজপত্র না থাকায় আমরা (প্রতিষ্ঠানগুলো) বন্ধ করে দিয়ে এসেছি, এখন চলছে কিনা জানি না।’
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ফার্মেসিতে অবৈধভাবে হাতুড়ে ডাক্তাদের অপচিকিৎসায় প্রতারিত হচ্ছেন দরিদ্র রোগীরা। উপজেলার গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বাজার পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কের উভয় পাশে প্রায় অর্ধশতাধিক হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। দাউদকান্দি বাজার, গৌরীপুর বাজার, গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণ বাজার, মলয় বাজার, ইলিয়টগঞ্জ বাজার, গোয়ালমারী বাজারসহ পুরো উপজেলায় এ রকম অজস্র প্রতিষ্ঠান দেখা যায়।
ভুল চিকিৎসা ও অনিয়মের অভিযোগ সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, এসব হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অভিজ্ঞ সার্জারি, গাইনি, অ্যানেসথেসিস্ট ডাক্তার না থাকায় ভুল চিকিৎসার কারণে প্রায়ই মা ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। অভিযোগ রয়েছে, গৌরীপুর লাইফ হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খাদিজা আক্তার নামে এক প্রসূতির জমজ শিশু হলেও একটি সন্তান পেটে রেখেই সেলাই করে দেন হাসপাতালের ডাক্তার। এ ঘটনাটি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। আবার প্রসূতি ভর্তি হয়ে আট ঘণ্টা চিকিৎসা না পেয়ে মৃত সন্তান প্রসবের অভিযোগ রয়েছে দাউদকান্দি পৌরসদরের এলহাম হাসপাতালের নামে। গৌরীপুর খিদমা হসপিটালে ভুল চিকিৎসায় মা ও নবজাতকের, রংধনু হসপিটালে প্রসূতির এবং দাউদকান্দি পৌরসদরের এলহাম ও ফ্যামিলি হাসপাতালে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা স্বাস্থ্যবিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ‘বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার অনুমোদন নেওয়ার সময় কাগজে-কলমে ডাক্তার, ডিপ্লোমাধারী প্যাথলজিস্ট দেখায়। অনুমোদন পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালালে আবেদনের সময় দেওয়া তথ্যের সাথে মিল পাওয়া যায় না।’
বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ১০ শয্যার অনুমোদন নিয়ে রাখা হয় ১৫ শয্যা। হাতুড়ে নার্সদের দিয়ে রোগীদের সেবা দেওয়া হয়। রোগ নির্ণয়ের জন্য মানসম্মত যন্ত্রপাতি বা ল্যাব টেকনোলজিস্ট নেই। সার্বক্ষণিক এমবিবিএস ডাক্তারের বদলে থাকেন ম্যানেজার ও মালিক। পার্টটাইম ডাক্তাররা জটিল অস্ত্রোপচারসহ অন্যান্য চিকিৎসা করছেন।
দাউদকান্দি নাগরিক ফোরামের আহ্বায়ক পরিবেশবিদ মতিন সৈকত বলেন, ‘অর্থলোভীরা এসব ক্লিনিকে অপচিকিৎসা দিয়ে থাকেন। ক্লিনিকগুলোতে স্থায়ী চিকিৎসক ও নার্স নেই। নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন এসব ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অপারেশন থিয়েটার থাকলেও তা মানসম্মত নয়। রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা নেই জেনেও টাকার লোভে ভর্তি করা হয়।’
বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. পারভেজ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘যাদের বৈধ কাগজপত্র আছে তাদেরকেই সমিতির সদস্য করা হয়েছে। এখানে সর্বাধিক ২৫/৩০টির মতো বৈধ (প্রতিষ্ঠান), বাকিগুলো কীভাবে চলে জানি না। দাউদকান্দির মতো গা-ছাড়া মনোভাব কোথাও দেখিনি। প্রতি বছরই এখানে কোনো কোনো হাসপাতালে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আমরা বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হই।’
দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডাঃ তৌহিদ আল হাসান বলেন, ‘দাউদকান্দিতে অনেক অবৈধ হাসপাতাল রয়েছে। সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিছুদিন পর খবর আসে, তারা আবার চালু হয়েছে।’ এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
এ পর্যন্ত চলা অভিযানে দাউদকান্দিতে আটটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং ছয়টিকে জরিমানা করা হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মীর মোবারক হোসেন বলেন, ‘আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। এর মধ্যে অবৈধ কিছু প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। প্রথমে যাদের লাইসেন্স নেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
কুমিল্লা থেকে সাত কলেজছাত্রের ‘নিরুদ্দেশ’ থাকার ঘটনায় চিকিৎসক শাকির বিন ওয়ালীর সহযোগী আবরারুল হক ভিলা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রহমান ছিদ্দিকী তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) রামপুরা থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রিমান্ড চলাকালীন আসামি ভিলা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক এস এম মিজানুর রহমান ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর রামপুরা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ পরিদর্শক কাজী মিজানুর রহমান মামলা করেন। পরদিন (১৪ সেপ্টেম্বর) শাকির ও ভিলার পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
জানা যায়, কথিত হিজরতের নামে ঘর ছেড়ে যাওয়া কুমিল্লার সাত তরুণের সহযোগী শাকির। তিনি নানাভাবে তরুণ-যুবকদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে আসছিলেন। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জঙ্গি সংগঠনটির জন্য সদস্য সংগ্রহ, সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও কথিত হিজরতে যেতে সহায়তা করতেন।