ঢাকা ডেন্টাল কলেজে চলছে আন্দোলন। লাগাতার ক্লাস বর্জন, অবরোধে পেরিয়ে গেছে তিন সপ্তাহ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে জানা যাচ্ছে মূলত কলেজটির সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম বেপারির ওএসডি’র আদেশে ক্ষুদ্ধ হয়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন ডাক্তার-শিক্ষার্থীরা। ওএসডি’র আদেশটি ন্যায় ছিল নাকি অন্যায় ছিল সেটা আমরা বাইরে থেকে বিবেচনা করতে পারি না; তবে একজন শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ তাঁকে ফেরানোর জন্য শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক এবং প্রশংসনীয়। শিক্ষকের মর্যাদা রক্ষায় তারা ক্লাস বর্জন করেছেন, আর কতদিন রাখাকে সমীচীন ভাববেন সেটা একান্তই ঢাকা ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীদের বিবেচ্য বিষয়। এখানে আমাদের বলার কিছু নেই। আমাদের বলার ক্ষেত্র ভিন্ন। কারন, আন্দোলনের প্রেক্ষাপট প্রথম থেকে আজ অবদি অনেক বদলে গেছে।
ঢাকা ডেন্টাল কলেজে নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়োগ দিয়েছে অধ্যাপক ডা. হুমায়ূন কবির বুলবুল কে। ডা. হুমায়ূন কবির বুলবুল শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিটের প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কেবল ডেন্টাল ইউনিট না, এই মেডিকেল কলেজ বা হাসপাতালের যে কারো কাছেই ডা. হুমায়ূন কবির বুলবুল একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। ঢাকা ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ স্যারকে যতটা শ্রদ্ধা করে-ভালোবাসে; শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ডা. হুমায়ূন স্যারকে সম্ভবত কম ভালোবাসে না, শ্রদ্ধা করে না। ডিডিসি অভিভাবক শূন্য হওয়াকে যতটা বড় করে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে, সোহরাওয়ার্দী ডেন্টাল বাস্তবিকপক্ষেই হয়েছে তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি। ডিডিসিতে তাৎক্ষণিকভাবে একজন অধ্যাপক স্যারকে শূন্যস্থান পূরণ করতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে, সোহরাওয়ার্দী এখনো শূন্য। অধ্যাপক আবুল কালাম বেপারি ডিডিসির প্রতিষ্ঠাতা নন; সোহরাওয়ার্দী ডেন্টাল ইউনিট অধ্যাপক হুমায়ূন কবির বুলবুলের হাতে গড়া।
ডিডিসির শিক্ষার্থীদের কাছে যদি ডা. বেপারী স্যারের ওএসডি’র আদেশ অন্যায় মনে হয় তবে সোহরাওয়ার্দীর শিক্ষার্থীদের কাছে হুমায়ূন স্যারের বদলির আদেশ অন্যায় মনে হয়নি? সোহরাওয়ার্দীর ডাক্তার- শিক্ষার্থীরা কি পারত না ডিডিসির অনুরূপে আন্দোলন করতে?
সবই সম্ভব ছিল, এমনকি জুনিয়র শিক্ষার্থীরা এমন উদ্যোগ নিতে বসেছিল। রক্ত গরম করে সব হয় না। সিনিয়রদের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে আন্দোলন দানা বাঁধেনি। সিদ্ধান্তটা নিতান্তই সরকারি। সরকারি চাকরির প্রতিটা বিভাগে প্রতি মাসে হাজার হাজার বদলি- ওএসডি’র আদেশ আসে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি হিসেবে সেই আদেশ অমান্য করার কোনো সুযোগ নেই। আন্দোলন করে ক্লাস বন্ধ রাখা যাবে, ক্যাম্পাস গরম করা যাবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিতি পাওয়া যাবে; তবে বাস্তবতা বদলাবে না। তাছাড়া অধ্যাপক ডা. হুমায়ূন কবির বুলবুল ডেন্টাল সার্জনদের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান “বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি”র নির্বাচিত মহাসচিব। ডেন্টাল পরিবারের এই অভিভাবক যদি ডেন্টাল শিক্ষার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানের হাল ধরার সুযোগ পান তবে পরোক্ষভাবে হলেও আমরা উপকৃত হবো। পেশার বৃহত্তর স্বার্থে এই ত্যাগটুকু সোহরাওয়ার্দী ডেন্টাল ইউনিটের ডাক্তার- ছাত্ররা মেনে নিয়েছে। এক ধরনের অভিভাবক শূন্যতার মধ্যেই চলছে ক্লাস, চলছে পরীক্ষা।
ঢাকা ডেন্টালের শিক্ষার্থীরা সরকারি আদেশ মানতে না পেরে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন ভালো কথা, সরকারি সিদ্ধান্তে যিনি দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছেন তাঁকে অপমান করতে হবে কেন?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জুড়ে যতটা না ডা. বেপারী স্যারের প্রশংসা আছে তারচেয়ে বেশি ডা. হুমায়ূন স্যারের প্রতি বিদ্বেষ-কুৎসা-গীবতে ভরপুর। এটা কেন হবে? আপনাদের আন্দোলন ডা. বেপারী স্যারকে ফিরিয়ে আনার, আপনার যদি ক্ষোভ থাকে তবে সেটা থাকা উচিত মন্ত্রণালয়ের উপর। আপনারা মন্ত্রণালয়কে লক্ষ্যবস্তু না করে কেন ডা. হুমায়ূন স্যারকে বারবার আক্রমণের লক্ষ্য করে নিচ্ছেন? আন্দোলনের বর্তমান পরিস্থিতি এটাই নির্দেশ করছে, কোন স্বার্থান্বেষী গোষ্টির অন্যায় স্বার্থ রক্ষার জন্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আবেগের কাধে বন্দুক রেখে প্রফেশনের প্রতি অন্তপ্রান একজন প্রফেসরের প্রশাসনিক দক্ষতা ও সাংগঠনিক ক্ষমতাকে গুলি করা হচ্ছে। ভূল পথে পরিচালিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগ দেশ ও জাতির জন্য কখনোই মঙ্গলজনক হয় নি।
ডা. হুমায়ূন স্যার নিজের ইচ্ছায় নয়, সরকারি আদেশে অফিস করতে গিয়েছেন। একজন অধ্যক্ষ পদমর্যাদার এবং ডেন্টাল সোসাইটির মহাসচিবকে গেটের ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে প্রফেশনের সম্মান বাড়ছে নাকি বাইরের মানুষদের কাছে পেশাকে হাসির পাত্র পরিণত করা হচ্ছে সেটা ভাবা উচিত ছিল। হুমায়ূন স্যার কখনোই আন্দোলনের বিপক্ষে কোনো বিবৃতি দেননি। তাঁকে আটকে রাখা, তার অফিসে তালা দেয়া নীতিগতভাবে কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। সরকারি কাজে বাধা দেয়ার প্রতিক্রিয়ার তিনি চাইলেই প্রথমদিনেই প্রশাসনিকভাবেই বল প্রয়োগ করতে পারতেন। সেটা না করে ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে কখনো বাইরে বসে, কখনোবা পরিচালকের কক্ষে বসে দৈনন্দিন কাজ করছেন। মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন তালা ভেঙে নতুন অধ্যক্ষকে অফিস করান। তখন প্রতিবাদ না করে পরের দিন আবার কেন তালা দিয়ে দিলেন আপনারা সেটাও বোধগম্য নয়। আন্দোলনকারীরা হয়তো নিজেদের কলেজে তালা দিচ্ছেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের প্রিয় শিক্ষকের অপমান। ডেন্টাল সোসাইটির অভিভাবকের সাথে এই তালা লাগানো আর ভাঙার খেলা খুব কুৎসিত দেখাচ্ছে। দীর্ঘদিনের আন্দোলন এক সময় ঘোরে পরিণত হয়। ঘোর অবস্থায় কোনটা সুন্দর আর কোনটা কুৎসিত সেটা চোখে পড়ে না। আপনাদের সুন্দরের চোখ হয়তো কোন অন্যায় আবদারের কাছে পরাজিত। তাই সে দেখছে না।
আন্দোলনটা যদি মাঠ পর্যায়ে থাকতো তাহলেও আমাদের বলার কিছু থাকত না। কিন্তু ফেসবুক জুড়ে যে অপপ্রচার আর অযৌক্তিক আলোচনা সেটা হুমায়ূন স্যারের ছাত্র হিসেবে নয়, একজন ডেন্টাল সার্জন হিসেবে মেনে নেয়া কঠিন।
ডা. হুমায়ূন রাজনৈতিক ব্যক্তি, তিনি কলেজ চালাতে পারবেন না” – এরকম একটা কমন অপপ্রচার ফেসবুক জুড়ে দেখা যাচ্ছে। যারা এই বাক্যটি প্রচার করছেন তারা কি আদৌ ডেন্টাল প্রফেশনের কেউ সেটা নিয়ে প্রশ্ন চলে আসে। যে ব্যক্তিটির প্রচেষ্টার কারণে বাংলাদেশ নতুন ৬ টা সরকারি ডেন্টাল ইউনিট পেলো, তিনি কলেজ চালানোর জন্য অযোগ্য? এই মানুষটি জেনারেল পলিটিশিয়ান নন, তিনি এক দশক একটা ডেন্টাল ইউনিটের প্রধান ছিলেন। ডা. হুমায়ূন কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত করবেন বলার আগে সোহরাওয়ার্দী ডেন্টাল ইউনিট ঘুরে দেখা উচিত ছিল। একটা নতুন মেডিকেল কলেজের সদ্য জন্ম নেয়া ডেন্টাল ইউনিটের যে চেহারা; অন্য ইউনিট সাপেক্ষে সেটাকে অবিশ্বাস্যই মনে হবে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট থেকে এ বছরের বিসিএস পরীক্ষায় ৩৫% শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। ডা. হুমায়ূন কবির বুলবুল যদি অযোগ্য প্রশাসক হতেন তবে এই সাফল্য সম্ভব ছিল? প্রতি বছরের প্রফ পরীক্ষার ফলাফলে সোহরাওয়ার্দী ডেন্টাল ইউনিটে কখনোই ধস নামেনি। এই ইউনিট কখনো নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হয়নি। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে অফিস টাইমের বাহিরেও দায়িত্ব পালন করে যে মানুষটা সবার শেষে বাসায় যান, এই ক্যাম্পাসের সবাই এক বাক্যে বলবে সেটা ডাঃ হুমায়ুন কবির বুলবুল। আমরা যারা এই ব্যক্তিটিকে ইউনিট প্রধান হিসেবে পেয়েছি, আমরা জানি তাঁর এই অযোগ্যতার অপপ্রচার কত বড় প্রোপাগান্ডা!
গ্রাজুয়েশন পর্যায়ের শিক্ষার্থী কিংবা গ্রাজুয়েট হয়ে যাওয়ার পর অজস্র প্রমাণ থাকার পরও একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব একটা কলেজের ভালো অভিভাবক হতে পারবেন না- এমন ধারণা নিতান্তই শিশুতোষ ছাড়া আর কিছু নয়। যে রাজনীতি অর্জনের, যে রাজনীতি সমৃদ্ধির, যে রাজনীতিবীদ থেকে সমাজের জন্য ভালো কিছু পাওয়া যায় সেটাকে নেতিবাচকভাবে দেখার কিছু নেই। ঢাকা ডেন্টাল কলেজে ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ও পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য হুমায়ুন কবির বুলবুল সব জায়গায় লড়েছেন স্বাধীনতা বিরোধীদের বিপক্ষে, রাজনৈতিক সচেতন কোন ডেন্টাল সার্জনের অজানা থাকার কথা নয়। আজকে সোহরাওয়ার্দী ডেন্টাল ইউনিটের যে স্বাস্থ্যবান চেহারা সেটা শুধু একজন ব্যক্তি হুমায়ূনের অবদান নয়; সেটার মূলে বহুলাংশেই একজন বর্নাট্য রাজনৈতিক ও প্রফেশনের নেতার ভূমিকা আছে। ঢাকা ডেন্টাল কলেজের মতো দেশের ডেন্টাল চিকিৎসার মাতৃপ্রতিষ্ঠানে বরঞ্চ একজন রাজনৈতিক প্রভাবসম্পন্ন ব্যক্তিত্বকেই বেশি মানায়। এখানে আদায় করার মতো প্রচুর ক্ষেত্র আছে। পেশাগত স্বার্থে প্রত্যেক ডেন্টাল সার্জনই কোনো না কোনোভাবে ডিডিসির মুখাপেক্ষী হয়ে থাকেন। রাজনৈতিক প্রভাবসম্পন্ন কোনো ব্যক্তি অভিভাবকের আসনে না থাকলে তৃতীয় বিশ্বের সরকার থেকে কতটা আদায় করা সম্ভব সেটা যে কোনো বাস্তববাদী মানুষ মাত্রই বুঝতে পারার কথা।
হ্যাঁ, অধ্যাপক ডা. হুমায়ূন কবির বুলবুল স্যার আদায় করার ব্যাপারটার প্রমাণ বারবার রেখেছেন। কোনো বড় দায়িত্বে না থেকেই আদায় করেছেন ৬ টা ডেন্টাল ইউনিট। সোসাইটির দায়িত্ব হাতে নিয়ে প্রথমে বৃহৎ পরিসরে করেছেন “ওয়ার্ল্ড ডেন্টিস্ট ডে” তারপরেই আরো বড় পরিসরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মোলন কেন্দ্রে সাড়ে চার হাজার ডেন্টাল সার্জন নিয়ে ঘটিয়েছেন ডেন্টাল সার্জনদের সর্বকালের সবচেয়ে বড় মিলনমেলা। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ৬৫৬ টি পোস্ট সৃষ্টি হয়েছে ডেন্টাল প্রফেশনে, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম ডেন্টাল পেয়েছে পূর্নাঙ্গ ডেন্টালের মর্যাদা। অনেকদিন ধরে পদোন্নতি ছাড়া যারা হতাশায় ছিলেন, এমন ৭৮ জন একসাথে পেয়েছেন প্রমোশন, প্রথমবারের মতো বিশেষ বিসিএসে অন্তর্ভুক্তি হয়েছে ডেন্টাল সার্জনদের। অতীতের ব্যক্তিকেন্দ্রিক ডেন্টাল সোসাইটির নেতৃত্বে যেসব সাবেক সিনিয়র ডেন্টাল সোসাইটির নেতারা অভিমানে দূরে সরে গিয়েছিলেন, টানা ছয় বছরের অপ্রাশিত ডেন্টাল সোসাইটির জার্নাল প্রকাশের মাধ্যমে সবাইকে আবার সম্পৃক্ত করেছেন সোসাইটির অগ্রযাত্রায়। এভাবেই প্রফেসর হুমায়ুন কবির বুলবুল ঘটিয়ে চলেছেন পেশার বিস্তার, তার নেতৃত্বেই সকল ডেন্টাল সার্জন প্রফেশনের উন্নয়নে কাজ করছেন কাধে কাঁধ মিলিয়ে । ছোট্ট প্রাইভেট চেম্বারে ডেন্টাল পেশা যে গন্ডিবন্ধ সীমায় ছিল সেখান থেকে বের হয়ে এ পেশা এখন হয়ে গেছে বিশ্বমানের।
একজন রাজনৈতিক মানুষ যত সফল আর যত ভালো মানুষই হোন না কেন সবসময়ই একাংশের বিরাগভাজন থাকেন। এটাই বাস্তবতা, এটাকে খুব খারাপভাবে দেখার সুযোগও নেই। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ থাকার মধ্যেই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। একজন রাজনীতিবীদ হুমায়ূন কবির বুলবুলের সাথে একজন শিক্ষক কেন জানি গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে। তাঁকে অপছন্দ করেন, তাঁর রাজনৈতিক দর্শন আপনার পছন্দ না? তাঁকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করুন। যুক্তি তর্ক চলতে থাকুক, সম্ভব হলে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিন। কিন্তু সরকারি চাকুরে হিসেবে সরকারি আদেশে যিনি শিক্ষকের বেশে নিজেরই সাবেক বিদ্যাপীঠে পা রাখতে গিয়েছেন তাঁকে এভাবে অপমান- অপদস্ত করে তালা দেয়াটা খুবই অন্যায় দেখায়। একজন শিক্ষকের মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন অন্য আরেকজন শিক্ষকে মর্যাদাহানির একমাত্র লক্ষ্যে পরিণত করা শোভনীয় নয়।
অধ্যাপক ডা. হুমায়ূন কবির স্যারকে তাঁর কাজের সুযোগ দেয়া হোক। ছাত্র হিসেবে আমাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি তিনি কাউকেই হতাশ করবেন না। একজন সুযোগ্য শিক্ষকের সকল যোগ্যতাই তিনি নিজের মধ্যে ধারণ করেন। যে চেয়ার তাঁর প্রাপ্য সেটাতে বসিয়ে তাঁকে বিচার করা হোক। তিনি যদি কাউকে হতাশ করেন, কারো প্রতি অন্যায় করেন তবে তাঁকে হঠানোর জন্য আন্দোলন করুন। তখন তাঁর কক্ষে তালা দিন। আপনাদের অভিযোগে সত্যতা থাকলে সবাইকেই পাশে পাবেন।
কোনো সুযোগ না দিয়েই একজন মানুষ ব্যাপারে এমন মিথ্যাচার, অপপ্রচার এবং তালা লাগিয়ে যে অপমান সেটা কেবল পেশাগত মানুষ হিসেবেই নয়, একজন নাগরিক হিসেবে যে কাউকে ব্যথিত করবে। পেশা এবং প্রতিষ্ঠানের সম্মান রক্ষায় এই তালা দেয়া- তালা ভাঙার খেলা বন্ধ হোক। নিজের শিক্ষক প্রত্যেক ছাত্রের কাছেই শ্রদ্ধার। একজনকে সম্মান জানাতে গিয়ে আরেকজনকে সচেতন বা অবচেতনভাবে অপমান করার ইতি ঘটুক।
করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখীতে দেশে বিভিন্ন ধরনের লকডাউন আসতে পারে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘আজই হয়তো এর ডিক্লিয়ারেশন আসতে পারে।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘বিভিন্ন টাইপের লকডাউন আসবে।’
সেটা কেমন হবে জানতে চাইলে বলেন, ‘চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দারবানে যাওয়া আসা বন্ধ হবে। বিয়ের অনুষ্ঠান, পিকনিক, ওয়াজ মাহফিল বন্ধ করার নির্দেশনা আসতে পারে। যেখানে জনসমাগম হয় সেসব জায়গায় রেস্ট্রিকশন আসতে পারে-এভাবেই বিভিন্ন ধরনের রেস্ট্রিকশন আসবে। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রাণলয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে এ বিষয়ের প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে ২২ দফার যে প্রোপোজাল গেছে, সেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব রয়েছে। তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী দেখে যেটা ভালো মনে করবেন সে অনুযায়ী নির্দেশনা জারি করবেন। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের লকডাউন থাকবে।’
প্রস্তাবানার মধ্যে আছে:
১. সব ধরনের (সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয়/অন্যান্য) জনসমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। কমিউনিটি সেন্টার/কনভেনশন সেন্টারে বিয়ে/জন্মদিন/সভা/সেমিনার ইত্যাদি অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা।
২. বাড়িতে বিয়ে/জন্মদিন ইত্যাদি অনুষ্ঠানে জনসমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।
৩. মসজিদসহ সব উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ন্যূনতম উপস্থিতি নিশ্চিত করা (ওয়াক্তিয়া নামাজে ৫-এর অধিক নয় এবং জুমার নামাজে ১০-এর অধিক নয়)।
৪. পর্যটন/বিনোদন কেন্দ্র/সিনেমা হল/থিয়েটার ও সব ধরনের মেলা বন্ধ রাখা।
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ‘বিটকরোনা’ নামের করোনা শনাক্তকারী কৃত্তিম বৃদ্ধিমত্তা টুল তৈরি করেছে দেশি সফটওয়্যার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইজেনারেশন । তাদের দাবি, করোনাবট এবং এক্স-রে ইমেজ অ্যানালাইসিস টুল উন্নত উপায়ে ও দ্রুতগতিতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কি না, তা নিজে থেকে শনাক্ত করার জন্য ব্যবহার করা যাবে।
ইজেনারেশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্যবহারকারী নিজেই কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত কি না, সেই সিদ্ধান্ত যাতে নিতে পারেন, এ জন্য ইজেনারেশন করোনাবটকে সেলফ-টেস্টিং টুলস হিসেবে তৈরি করেছে। এটি ব্যবহারকারীকে নিজে থেকেই তাৎক্ষণিকভাবে আইসোলেশনে থাকতে উৎসাহ দেয়।
এটি স্বাস্থ্যকর্মীদের সময় বাঁচাতে পারে। ব্যবহারকারীদের প্রশ্ন বুঝতে পারা এবং সেটির যথাযথ উত্তর দেয়ার জন্য করোনাবটটিতে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করা হয়েছে। বটটি ইংরেজি, বাংলা এবং বাংলা ভাষাকে ইংরেজি অক্ষরে লেখা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।
এর পাশাপাশি ইজেনারেশন মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির মাধ্যমে এক্স-রে ছবি বিশ্লেষণী টুল তৈরি করেছে যা বুকের এক্স-রে ছবি দেখে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণে কার্যকর হতে পারে। এই টুল ব্যবহার করে ব্যবহারকারীরা সুস্থ আছেন কিনা, মৃদু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত কিনা অথবা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন কিনা সেটি জানা যাবে। ইজেনারেশন বিটকরোনা (http://beatcorona.egeneration.co/) ওয়েবসাইটে গিয়ে এক্স-রে ছবি আপলোড করলে টুলটি ফলাফল দেখাবে
ইজেনারেশন গ্রুপের চেয়ারম্যান শামীম আহসান বলেন, ‘ইজেনারেশন বিগত দুই বছর ধরে স্বাস্থ্যসেবা সফটওয়্যার ও অ্যানালিটিক্স নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করে আসছে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির যে সক্ষমতা আমাদের তৈরি হয়েছে, সেটি ব্যবহার করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের এই সল্যুশনগুলি আমরা স্বল্প সময়ে তৈরি করতে পেরেছি।’
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে এক নারীসহ আরও দুইজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তারা হলেন, উপজেলার ভাওড়া ইউনিয়নের কামাড়পাড়া গ্রামের ৫৫ বছরের এক নারী ও জামুর্কী ইউনিয়নের পাকুল্যা গ্রামের ৩০ বছরের এক যুবক।
আক্রান্ত ওই নারী ঢাকায় বোনের বাসায় এবং যুবক ঢাকায় জুয়েলারি দোকানে থাকতেন। ২৬ এপ্রিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যকর্মীরা ৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠান। এরমধ্যে তাদের ওই দুইজনের করোনা পজিটিভ ও চারজনের নেগেটিভ আসে বলে স্বাস্থ্যকর্মী এজাজুল হক হাসান রাত সাড়ে এগারোটায় জানিয়েছেন।
এর আগে ৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের পলি ক্লিনিকের সিনিয়র ওটি বয় অখিল চন্দ্র সরকারের করোনা পজিটিভ হলে ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়ে ২৪ এপ্রিল বাড়ি আসেন।
এ পর্যন্ত মির্জাপুরে বিভিন্ন এলাকা থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা ১৫২ জনের নমুনা সংগ্রহ করেন। এরমধ্যে ১৪৯ জনের করোনা নেগেটিভ ও ৩ জনের পজিটিভ আসে।
উপজেলা প্রশাসন রাতেই তাদের ঢাকায় কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো এবং আশপাশের অর্ধশত বাড়ি লকডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
চিকিৎসক-নার্সসহ ৬৬০ জন স্বাস্থ্যকর্মী মরণব্যাধী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, যা দেশের মোট আক্রান্তের ১১ ভাগ। আজ সোমবার (২৭ এপ্রিল) চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।
সংগঠনটির মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বৈশ্বিক করোনা মহামারীতে বাংলাদেশও গভীর সংকটের সম্মুখীন। আজ সোমবার পর্যন্ত দেশের করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৯১৩ জন এবং মারা গেছেন ১৫২ জন।
এতে আরও বলা হয়েছে, করোনা যুদ্ধের সম্মুখ সারির যোদ্ধা চিকিৎসক, নার্স ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ সেবাদানকারীগণ আশঙ্কাজনকভাবে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এ পর্যন্ত ২৯৫ জন চিকিৎসক, ১১৬ জন নার্স ও ২৪৯ জন অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীসহ চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬০, যা দেশের মোট আক্রান্তের ১১ ভাগ।
চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবাদানকারী ব্যক্তিগণ এই হারে আক্রান্ত হতে থাকলে আগামীতে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।
তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারের প্রতি নিম্নলিখিত প্রস্তাবনাসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানায় বিএমএ। এগুলো হলো:
১. দ্রুততম সময়ের মধ্যে কোভিড হাসপাতালে নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্সসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য সঠিক মানের পিপিই, এন-৯৫ বা এর সমমানের মাস্ক প্রদান করা জরুরি। ২. নন-কোভিড হাসপাতালের প্রবেশদ্বারে ট্রায়াজ সিস্টেম চালু করে সেখানে কর্মরত সকল চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপযুক্ত পিপিই, এন-৯৫ বা সমমানের মাস্ক প্রদান নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। ৩. সকল সরকারি বেসরকারি হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসন, প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ ও হাসপাতালে যাতায়াতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।
দেশে মহামাহারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে ১৫২ জনের মৃত্যু হলো। আক্রান্ত হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৪৯৭ জন। ফলে দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে পাঁচ হাজার ৯১৩।
সোমবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় চার হাজার ১৯২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে তিন হাজার ৮১২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সব মিলিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫০ হাজার ৪০১টি। নতুন যে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে তার মধ্যে আরও ৪৯৭ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ফলে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৯১৩ জনে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন আরও সাতজন, এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫২ জনে। এছাড়া সুস্থ হয়েছেন আরও নয়জন। ফলে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৩১ জন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকার এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয় বুলেটিনে।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন গোটা বিশ্বে তাণ্ডব চালাচ্ছে। চীন পরিস্থিতি অনেকটাই সামাল দিয়ে উঠলেও এখন মারাত্মকভাবে ভুগছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে দুই লাখ সাত হাজার। তবে পৌনে নয় লাখের বেশি রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর প্রথম দিকে কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর মিললেও এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুও।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। নিয়েছে আরও নানা পদক্ষেপ। এসব পদক্ষেপের মূলে রয়েছে মানুষে মানুষে সামাজিক দূরত্ব বজায়, বিশেষত ঘরে রাখা। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনী, র্যাব ও পুলিশের টহল জোরদার করেও মানুষকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না বিধায় করোনাভাইরাসের বিস্তার উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।