শিশুর দাঁতের যত্নে যা করা দরকার

ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ

সাধারণত ১২ বছরের আগেই শিশুদের ওপর ও নিচের চোয়াল মিলিয়ে ২০টি দুধদাঁত এবং পরে ২৮টি স্থায়ী ও আরও পরে ৪টি আক্কেলদাঁত ওঠে। দাঁত ওঠার পর থেকেই সঠিক যত্ন নিলে দাঁত ও মাড়ি আজীবন সুস্থ থাকবে। তা না হলে দাঁত ও মাড়ির নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে শিশুকালে ও পরবর্তী সময়ে।

গর্ভস্থ শিশুর দাঁতের যত্ন

শুনতে অবাক লাগলেও শিশুর দাঁতের গঠনপ্রক্রিয়া শুরু হয় গর্ভধারণের প্রথম ছয় সপ্তাহ থেকে। মায়ের গর্ভকালীন অপুষ্টি, বিশেষ করে ক্যালসিয়ামের অভাব শিশুর দাঁতের গঠন দুর্বল করে ফেলে। পরে দাঁত সহজেই রোগে আক্রান্ত ও ভেঙে যায়। গর্ভকালীন কোনো ওষুধ সেবনেও চিকিৎসকের পরামর্শ খুবই জরুরি। কারণ, তা দাঁতের ক্ষতি করতে পারে।

মুখ পরিষ্কার ও দাঁত ব্রাশ

দাঁত ওঠার আগেই নবজাতকের মাড়ি ও জিব পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কার সুতি কাপড় বা গজ পানিতে ভিজিয়ে পরিষ্কার করতে হবে রাতে ও সকালে।

দাঁত ওঠার পর তিন বছর থেকে সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ করানোর চেষ্টা করতে হবে। শিশুদের নরম টুথব্রাশ ও ফ্লোরাইডযুক্ত খুব অল্প পেস্ট দিয়ে দুই মিনিট করে সকালে খাওয়ার পর ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ব্রাশ করার অভ্যাস করাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন পেস্ট খেয়ে না ফেলে।

খাদ্যাভ্যাস

শিশুদের ডেন্টাল ক্যারিজ বা দাঁতক্ষয়ের প্রধান কারণ মন্দ খাদ্যাভ্যাস। চিপস, কোমল পানীয়, চকলেট, মিষ্টি, চুইংগাম ও আইসক্রিম কমিয়ে মৌসুমি তাজা ফলমূল, শাকসবজি, ছোট মাছ, দুধ, কলিজা, দইসহ স্বাস্থ্যকর খাবারে অভ্যস্ত করাতে হবে। মিষ্টি খাওয়ার পর ভালোভাবে কুলি করাতে হবে। ভিটামিন সি মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তাই টক ফল খাওয়ানো ভালো।

দাঁতের সৌন্দর্য

এলোমেলো বা আঁকাবাঁকা দাঁত রোধে সচেতন থাকতে হবে। দুধদাঁতের যত্ন না নিলে দাঁত এলোমেলো হতে পারে। আঙুল চোষা বা চুষনির কারণেও দাঁত উঁচু হয়ে যায়।

চেকআপ

বাচ্চাদের দাঁতের রোগ বেশি হয়। দাঁতে ব্যথা, ক্যাভিটি বা গর্ত অথবা জিবের ওপর সাদা প্রলেপ হলে কিংবা যেকোনো সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর ডেন্টাল চেকআপ জরুরি।

দাঁত নড়া

দাঁত নড়া শুরু হলে বাসায় পরিষ্কার কাপড় দিয়ে আরও নাড়াতে হবে। শিশুকে আশ্বস্ত করতে হবে এটা স্বাভাবিক।

দাঁতের সঠিক ব্যবহার

● দাঁত দিয়ে চিপসের প্যাকেট খোলা, বাদাম ছেলা বা এ ধরনের কাজ করা যাবে না।
● খুব টক খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ব্রাশ করা এবং খুব গরম ও ঠান্ডা খাবার একসঙ্গে খাওয়া যাবে না।
● ক্রিকেট খেলার সময় মাউথ গার্ড ব্যবহার করা উচিত।
● দাঁত দিয়ে নখ কাটা, কলম বা বরফ চিবানো, দাঁতে দাঁত ঘষা, এগুলো দাঁতের জন্য খারাপ।

সম্পর্কিত
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
এই সংবাদ নিয়ে আপনার মন্তব্য লিখুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version