ঢামেক হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের আসতে মানা: পরিচালক

ডেন্টাল টাইমস
ডেন্টাল টাইমস

ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের কারণে চিকিৎসকদের কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। এতে রোগীদের লাইন দীর্ঘ হওয়ার পাশাপাশি ভীড়ও বাড়ে হাসপাতালে। এসব কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আজ বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) এসব কথা বলেছেন। দুপুরে হাসপাতালের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

এ সময় ঢামেক হাসপাতালের আগামী ১০০ দিনের কর্মসূচি নিয়ে কথা বলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তুলে ধরেন সাম্প্রতিক নানা কর্মকাণ্ডের ইতিবৃত্ত। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত-নিহতদের বিষয়েও কথা বলেন তিনি।

মো. আসাদুজ্জামান জানান, হাসপাতালের উন্মুক্ত জায়গায় পার্কিং করা অ্যাম্বুলেন্স সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বলেন, পুরো হাসপাতালের খোলা জায়গায় প্রায় একশ অ্যাম্বুলেন্স থাকে। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী বা রোগীদের গাড়ি পার্ক করার জায়গা থাকে না। সেজন্য আমি সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে তাদের বের করে দিয়েছি। তাদের বিকল্প ব্যবস্থা করতে পেরেছি।

ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের ব্যাপারে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, প্রতিদিন কয়েকশ ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি এখানে আসে। একই কোম্পানির বেশ কয়েকজন আসে। তারা দুইভাবে আমাদের ক্ষতি করে। প্রথমত ভীড় তৈরি করে, আবার দেখা যায় রোগী লাইনে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু একজন প্রতিনিধি ঢুকে ডাক্তারের সাথে কথা বলছে, এভাবে ওয়ার্কিং আওয়ারের (কর্মঘণ্টা)বড় একটা সময় নিয়ে নেয়। আমরা তাদের হাসপাতালে আসতে নিষেধ করেছি। এতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সমর্থন আছে। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, অফিস চলাকালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা আসতে পারবে না।

বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালদের চিহ্নিত করে তাদের প্রতিরোধের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে বলে জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, এই হাসপাতাল প্যাথলজিক্যাল টেস্টে পিছিয়ে থাকার কারণে অনেক দালাল আমাদের রোগীদের নিয়ে যেত। আমরা সেটা বন্ধ করার পাশাপাশি মান বৃদ্ধিতেও নজর দিচ্ছি। এক্স-রেতে আমাদের সমস্যা নাই, তবে সিটি স্ক্যান ও এমআরআই মেশিন বাড়ানো হচ্ছে। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি আমাদের সার্ভিসগুলো উন্নত করার।

এ ছাড়া আরও কিছু উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল টিকেটিং শুরু করেছি। ডিজিটাল প্রেসক্রিপশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা পুরো হাসপাতালকে ডিজিটাল প্রেসক্রিপশনের আওতায় নিয়ে আসব। আর এখানে ছোটখাটো কিছু দুর্নীতি হত, সেগুলো বন্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। রোগীদের সাথে চিকিৎসক ও নার্সদের ব্যবহার পরিবর্তনে আমরা তাদের সাথে ক্রমাগত কথা বলছি।

কোটা আন্দোলনে নিহতদের রেকর্ড সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, যারা এখানে ভর্তি হয়ে মারা গেছে, তাদের রেকর্ড আমাদের কাছে আছে। যাদের মৃত্যুর কারণ আমরা স্পেসিফিকলি বলতে পারিনি, তাদের আমরা সার্টিফিকেট দিতে পারছি না।  রেজিস্ট্রিতে যদি এন্ট্রি থেকে থাকে, তার বেসিসে আমরা সার্টিফিকেট দিতে পারব। কিন্তু যার পোস্ট মর্টেম করেনি, রেজিস্ট্রি করেনি তার ব্যাপারটা ভিন্ন।

বেওয়ারিশ লাশের প্রশ্নে তিনি বলেন, মর্গ থেকে নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ ঠিক করে কে বেওয়ারিশ। ফলে বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যাটা তারা করতে পারবে। আমরা কোনো আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম বা অন্য কাউকে দেইনি।

হাসপাতাল থেকে ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগের জবাবে বলেন, প্রথম দিকে বিনামূল্যে ওষুধ বা চিকিৎসা দেওয়ার কোনো ঘোষণা আসেনি, কোনো ফান্ডও ছিল না। পরিচালকদেরও কোনো ফান্ড নেই। আমাদের যে ওষুধপত্র সাপ্লাই থেকে সেখান থেকেই ম্যানেজ করে দেই। তবে ঘোষণা আসার পর থেকে আমরা সবাইকে (ফ্রি) দিচ্ছি। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আমাকে বলেছেন, যে কেউ আসলে যেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের সার্টিফিকেট নিয়ে আসে। সে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছিল কি না তা কনফার্ম করতে পারলে আমরা তার খরচ বহন করব।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোট ১৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানান তিনি। এর মধ্যে ৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে নেওয়ার পর। আর বাকি ৮৮ জন মারা গেছেন হাসপাতালে আসার আগেই। এ ছাড়া আরও কয়েকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন হাসপাতাল পরিচালক। আন্দোলন চলাকালে আহত হয়ে  মোট দুই হাজার ৬০০ রোগী হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছেন।

এই সংবাদটি শেয়ার করুন

ডেন্টাল টাইমসে প্রকাশের উদ্দেশ্যে সংবাদ/লেখা পাঠাতে চাইলে নাম, ফোন নাম্বার এবং বিস্তারিত ছবিসহ আমাদের dentaltimesbd@gmail.com এ ই-মেইল করুন । এছাড়া, জরুরী প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - বার্তাকক্ষ ০১৮৩৩৩৯১৫৮১

আমাদের প্রকাশিত সংবাদ নিয়মিত পেতে

সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের Follow করুন​

এই সংবাদ নিয়ে আপনার মন্তব্য লিখুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *