চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ থানার ফিরোজ শাহ কলোনি এলাকায় ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে কিশোর গ্যাং সদস্যদের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন এক দন্ত চিকিৎসক। কোরবান আলী নামে ৬০ বছর বয়সী ওই চিকিৎসক বর্তমানে একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
কিশোর গ্যাং সদস্যদের হাত থেকে এক পথচারীকে বাঁচাতে ৯৯৯ এ কল করার অপরাধে কোরবান আলীর ছেলে আলী রেজা রানাকে মারধর করতে এলে গত শুক্রবার (৫ এপ্রিল) এ ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি গোলাম রসুল নিশানের অনুসারী ও ছাত্রলীগকর্মী বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত শুক্রবার পশ্চিম ফিরোজ শাহ এলাকায় হামলার শিকার কোরবান আলীকে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে মেডিকেল সেন্টার নামে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে হাসপাতালটির আইসিইউতে লাইফ সাপোর্ট আছেন তিনি। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে কোরবান আলীর অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ভুক্তভোগীর স্বজন জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ডা. কোরবান আলীর অবস্থা বর্তমানে সংকটাপন্ন। চিকিৎসকরা রোববার রাতেই তাকে ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ ঘোষণা করেছেন। তবে তার লাইফ সাপোর্ট এখনো খোলা হয়নি। যেকোনো সময় কৃত্রিম লাইফ সাপোর্ট অটো শাটডাউন হয়ে যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন ভুক্তভোগীর ছেলে আলী রেজা রানা। এমন সময় একদল কিশোর একজন পথচারীকে পেটাচ্ছিল। তাদের মার সহ্য করতে না পেরে লোকটি বাঁচাও বলে চিৎকার করছিল। লোকটিকে কিশোর দলের মার থেকে বাঁচাতে জরুরি সেবা ৯৯৯ ফোন দেন রানা। পরে পুলিশ এসে তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যায়।’
‘এই ঘটনার জেরে শুক্রবার রাতে রানার বাসার সামনে এসে প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেয় কিশোর গ্যাং সদস্যরা। এরপর গত শুক্রবার বাসার পাশের দোকানে ইফতারি কিনতে গেলে কয়েকজন কিশোর গ্যাং সদস্য রানার ওপর হামলা চালায়। এ সময় রানাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তার বাবা কোরবান আলীর ওপরও হামলা চালায় কিশোর গ্যাং। হামলায় কোরবান আলী মাথায় আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হন।’- বলেন জসিম উদ্দিন।
কোরবান আলীর ছেলে আলী রেজা বলেন, ‘আমার বাবা একজন সহজ-সরল মানুষ। এলাকায় কোনো ঝামেলায় তিনি থাকেন না। হামলাকারীরা এলাকার, আমাদের সাথে কোনো পূর্ব শত্রুতা নেই। শুধু তাদের হাত থেকে একজন মানুষকে বাঁচানোর কারণে আমদের ওপর হামলা হয়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হামলাকারী হলো ছাত্রলীগকর্মী সামির, অপূর্ব, রিয়াদ, সোহেল ও আকিবসহ আরও অনেকে। এলাকায় তারা স্থানীয় যুবলীগ নেতা গোলাম রসুল নিশানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
আকবর শাহ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কোরবান আলীর ওপর হামলার ঘটনায় ৮-১০ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। হামলাকারীরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি গোলাম রসুল নিশানের অনুসারী। আমরা মামলাটি তদন্ত করছি। তবে এখনো কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।