জনস্বাস্থ্য–সংকট নিরসন ও সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করার জন্য স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসক নেতারা। একই সঙ্গে তাঁরা স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার আমূল পুনর্গঠনের জোর দাবি জানান।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫: স্বাস্থ্য খাত প্রসঙ্গে চিকিৎসক সমাজের দাবি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। আজ সোমবার ‘ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ নামে চিকিৎসকদের একটি সংগঠন এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্বাস্থ্যসেবায় দিন দিন ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে চিকিৎসায় বাংলাদেশে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় ৭৪ শতাংশ। এটি প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বেশি। এর মধ্যে ওষুধে ব্যয় হয়েছে ৪৪ শতাংশ। গত এক বছরে হাসপাতালগুলোতে রোগনির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষার ফি, চিকিৎসকের পরামর্শ ফি ও ওষুধের ব্যয় বেড়েছে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতে জনবলের সংকটও এক বড় অন্তরায়। প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য শূন্য দশমিক ৭ জন চিকিৎসক এবং শূন্য দশমিক ৪৯ জন নার্স ও মিডওয়াইফ রয়েছেন। আবার এই স্বল্প জনবলের মধ্যে ২৪ শতাংশ পদ শূন্য (২০২১ সাল)। ডব্লিউএইচওর নির্ধারিত মানদণ্ডের তুলনায় ৭৪ শতাংশ কম চিকিৎসক, নার্স এবং মিডওয়াইফ রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বাজেট বৃদ্ধিই স্বাস্থ্যসেবায় সংকটের একমাত্র সমাধান নয়। তবে এটা অন্যতম মূল বিষয়। এর পাশাপাশি একটি সুপরিকল্পিত রোগপ্রতিরোধ ও নিরাময়ের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তাঁরা বলেন, স্বাস্থ্যসেবার প্রতিটি স্তরেই জনগণ ভুক্তভোগী। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ন্যূনতম চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত। স্বাস্থ্য খাতে বেশ কিছু অর্জন এবং কিছু সূচকের অগ্রগতি ঘটলেও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে জনতুষ্টি আসেনি।
স্বাস্থ্যসেবা খাতে সংকটের প্রধান কারণ হিসেবে বাজেট স্বল্পতা, দুর্বল অবকাঠামো ও জনবলঘাটতির কথা উল্লেখ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে অদক্ষতা, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানে একই বিশেষজ্ঞ দিয়ে চিকিৎসাসেবা চালু রাখার কথাও বলা হয়। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার আমূল পুনর্গঠনের দাবিও জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত অর্থবছর (২০২৩–২৪) স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের মাত্র ৫ শতাংশ। এখন রোগী বেড়েছে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ২ শতাংশ। তাই বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক এম আবু সাঈদ, মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এম এইচ ফারুকী। আলোচনা করেন সংগঠনের সদস্য জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী, চন্দন কান্তি দাস, শামসুদ্দিন আহমেদ, ফিরোজ আহম্মেদ খান এবং অধ্যাপক কাজী রকিবুল ইসলাম প্রমুখ। এ ছাড়া সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা এবং বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।