ভোলার লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালদের দৌরাত্ম্য থামছেই না। প্রতিদিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে পৌর শহরের বেশ কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নির্ধারিত ১০ থেকে ১৫ জন কর্মী দালালের ভূমিকায় অধিষ্ঠিত হন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এসব দালালের পদচারণা বেশি থাকে। এদের বেশিরভাগই নারী। অদৃশ্য ক্ষমতা বলে এরা (দালাল) কর্তব্যরত চিকিৎসকদের রুমেও প্রবেশ করেন।
চিকিৎসকরা রোগীদের জরুরি কোনো পরীক্ষা করতে বললে ওই কাগজ নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু করেন তারা। এসব দালালের দৌরাত্ম্যের কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্যাথলজি বিভাগের অন্তত ২১টি পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক রোগী।
দালালদের ফাঁদে পড়ে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিকে গিয়ে পরীক্ষার ধরনভেদে কয়েকগুণ বেশি অর্থ ব্যয় করছেন রোগীরা। ওইসব দালালের কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনেক চিকিৎসকের মধ্যেও।
লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাধারণ রোগীদের দৌরাত্ম্য দেখে মনে হবে, এদের লাগাম টানার যেন কেউ নেই। লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসক জানান,
বিভিন্ন ডায়াগনস্টিকের নির্ধারিত কিছু কর্মী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালের ভূমিকা পালন করেন। রোগীদের প্রয়োজনে আমরা কোনো টেস্ট লিখলে আমাদের সামনেই রোগীদের থেকে ওই কাগজ নিয়ে তারা টানাটানি শুরু করেন।
অথচ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই অনেক পরীক্ষা স্বল্প খরচে করানো সম্ভব। ওই দালালরা ছলে-বলে-কৌশলে রোগীদের ডায়াগনস্টিকে নিতে বাধ্য করেন। এতে নিম্ন আয়ের সাধারণ রোগীদের রীতিমতো হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। সাধারণ রোগীদের কথা বিবেচনা করে দ্রুত এসব দালালের লাগাম টানা উচিত।
লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে দালালদের ফাঁদে পড়া কয়েকজন রোগী বলেন, ডাক্তাররা আমাদের প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষা করাতে বলেছেন। এর মধ্যে অনেক পরীক্ষা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই হয়, যা আমরা জানতাম না। ডাক্তারের রুম থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দালালরা কাগজ নিয়ে নয়-ছয় বুঝিয়ে আমাদের নিয়ে গেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তুলনায় ওই ডায়াগনস্টিকে গিয়ে আমাদের কয়েকগুণ বেশি টাকা খরচ হয়েছে। আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ। টাকা অনেক হিসাব করে আমাদের ব্যয় করতে হয়।
তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে থাকা এসব দালাল তাদের স্বার্থের কথা ভেবে আমাদের ডায়াগনস্টিকে নিয়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করাচ্ছে। আশা করছি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রোগীদের হয়রানি লাঘবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ মো. রিয়াজুল ইসলাম জানান, এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বল্প খরচে ২১ ধরনের টেস্টের ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা চাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীরা সাধ্যের মধ্যে স্বল্পমূল্যে এখান থেকেই সেবা গ্রহণ করুক। আমরা রোগীদের স্বার্থে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছি।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. তৈয়বুর রহমান বলেন, এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা বেশিরভাগ রোগীই গরিব এবং অসহায়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
ফলে আগের তুলনায় দালালদের দৌরাত্ম্য অনেকটা কমেছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে দালালমুক্ত করতে আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।