আমরা জানি, স্বাস্থ্য খাতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ না করলে স্বাস্থ্যসেবার বর্তমান অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দুর্নীতিমুক্ত করে চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা সহায়কদের গুণগতমান উন্নয়ন করে স্বাস্থ্য সেবায় আমূল পরিবর্তন করা সম্ভব।
‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ জাতিসংঘে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধিতে যথাসাধ্য অবদান রেখেছে।কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবার শক্ত ভিত গড়ে তুলতে পারলেই এই খাতে পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। বাংলাদেশে গত দুই দশকে বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের জন্য বরাদ্দ রয়েছে মোট জিডিপির ১ শতাংশের কম। যা মালদ্বীপে ৯.১৪%, ভারতে ১.১%, কিন্তু বাংলাদেশে মাত্র ০.৪৭%। স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে সরকার জিডিপির ২% বরাদ্দ রাখলে ভালো হয় তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুপারিশ করেছে মোট জিডিপির ৫% বরাদ্দ করা। পাঁচটি মৌলিক অধিকারের একটি হচ্ছে স্বাস্থ্য।সরকারের কাছে ‘স্বাস্থ্য’ যদি অগ্রাধিকার প্রাপ্ত হয়, তাহলে স্বাস্থ্য খাতে অবশ্যই বাজেট বৃদ্ধি করা উচিত বলে মনে করি।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন বাজেটে জনগণের স্বাস্থ্য উন্নয়নে ১০% বরাদ্দ রাখার দাবি করে আসছে দীর্ঘদিন যাবৎ। এমতাবস্থায় গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৯ হাজার কোটি টাকা স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বরাদ্দ ছিল। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেটের পরিমাণ ছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকা
সাম্প্রতিক অন্যান্য সংবাদ
দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ইকুইপমেন্ট দেখাশোনার জন্য বায়োমেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট প্রয়োজন। এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। চিকিৎসাসেবা, মেডিক্যাল শিক্ষা ও গবেষণার জন্য আলাদা অতিরিক্ত বাজেট দেওয়া প্রয়োজন। মৌলিক বিষয়ে শিক্ষকস্বল্পতা কাটিয়ে উঠতে হবে। এক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্তদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা যেতে পারে।
‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ কমিউনিটি ক্লিনিকের ধারণা জাতিসংঘের প্রশংসা অর্জন করেছে। ৭০টি দেশে এই কমিউনিটি ক্লিনিকের ধ্যান ধারণা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে ৩০টি ওষুধ কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনামূল্যে দেওয়া হয়। কমিউনিটি ক্লিনিকের এই স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সহায়তা প্রদান করতে হবে। এছাড়াও উপজেলা ও জেলাস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তুলতে হবে।হেলথ কার্ড এবং স্বাস্থ্যবিমা প্রবর্তনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতকে আরও উন্নত করা সম্ভব। এক্ষেত্রে অটোমেশনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেস তৈরি করা প্রয়োজন।
বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো এবং তার ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য পরিকল্পনা করে সমন্বয়ের সুযোগ তৈরি করা প্রয়োজন। অর্থাভাবে ইমার্জেন্সি সেবা দেওয়া না গেলেও স্বায়ত্তশাসন দেওয়া প্রয়োজন। সীমিত বাজেট থাকা সত্ত্বেও অপচয় ও দুর্নীতি রোধ করে দক্ষতা বাড়িয়ে বাজেটের অর্থ সর্বোচ্চ ব্যবহার করা সম্ভব। এ বিষয়ে সামগ্রিক কৌশলগত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
আরও বেশি শক্তিশালী এবং গতিশীল নেতৃত্বের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতকে সুদৃঢ়করণ করে বাংলাদেশেই যেন সকল রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব হয়, তার ব্যবস্থা করতে হবে। সহজে যেন কেউ বিদেশে চিকিৎসা করার বিষয়ে আগ্রহী না হয় , এ বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আর্থিক অসচ্ছলতার জন্য কেউ যেন চিকিৎসা বঞ্চিত না হয়, তার জন্য বিশেষ স্কিম চালু করা প্রয়োজন। এই বাজেটেই এ সম্পর্কে নতুন নির্দেশনা থাকলে ভালো হয়।
পাঁচবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সারাবিশ্বে এখন উন্নয়নের রোল মডেল। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, সমুদ্র বিজয়, মহাকাশ বিজয়, কর্ণফুলী টানেল, এক্সপ্রেসওয়ে, বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের সুফল পুরো জাতির কাছে দৃশ্যমান
তবে মানুষের চোখের আড়ালে রয়ে গেছে স্বাস্থ্য খাতে মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছরে উন্নীতকরণ। মাতৃমৃত্যুশিশুমৃত্যুর হার কমেছে, ১৬টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার স্বাস্থ্য খাতে অর্জন করা গেছে, যা বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম সাফল্য। কমিউনিটি ক্লিনিক ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে জাতিসংঘে সমাদৃত হয়েছে।
সুস্থ জাতি শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তোলার মূল চালিকাশক্তি। আগামী ২০২৪-২৫ বাজেটে মূল বাজেটের ১০% স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। যাতে চিকিৎসাসেবা, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়ন করা সম্ভব হয় এর মাধ্যমে উপজেলায় স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নয়ন এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য প্রদান করা সম্ভব হবে। দেশের অগ্রগতি উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
